সে বড়ই আদরের। তাকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই পুলিশ মহলে। অনেকেই চাকরি করেছে। কিন্তু নিয়োগকর্তাদের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে সে। পুলিশে চাকরি করতে করতে সিনেমায় অভিনয়ও করেছে। বলিউডের সুপারহিট ছবির দৌলতে সে-ও তারকা। তার নাম রেখা।
রেখা— এই নাম শুনলে যাঁর ছবি প্রথমেই চোখের সামনে ভাসে, তিনি বি-পাড়ার সেই কিংবদন্তি অভিনেত্রী। তবে এই রেখা কোনও মানবী নয়। এই রেখা চারপেয়ে। এই রেখা একটি ঘোড়া।
১৯৯৫ সাল থেকে পশ্চিম কচ্ছ পুলিশের অশ্বারোহী বাহিনীতে কাজ করেছে এই ঘোড়া। এখন অবসরগ্রহণ করেছে সে।
১৯৯৫ সালে গুজরাট পুলিশের তৎকালীন ডিজি ঘোড়াটি কিনেছিলেন। তার পর বহু পুলিশ বিভাগে ওই ঘোড়াকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছে।
ওই ঘোড়ার নাম রাখা হয়েছিল রেখা। পশ্চিম কচ্ছ পুলিশের কোনও ধারণাই ছিল না যে, রেখা তাদের হাতে আসবে। শুধু তাই নয়, এই রেখা যে রুপোলি পর্দাতেও ধরা দেবে, সে ধারণাও ছিল না।
২০০১ সালে মুক্তি পেয়েছিল আমির খানের ‘লগান’। এই ছবিতে রেখাকে দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর।
২০০০ সালের কথা। সেই সময় ছবির শুটিঙের জন্য ‘লগান’-এর গোটা দল কচ্ছ গিয়েছিল। ছবির জন্য ঘোড়ার প্রয়োজন হয়েছিল নির্মাতাদের।
সেই সময় পশ্চিম কচ্ছ পুলিশের অশ্বারোহী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ছবির নির্মাতারা। ছবির শুটিঙের জন্য ৪-৫টি ঘোড়া নেওয়া হয়েছিল। তবে তাদের মধ্যে নজর কেড়েছিল রেখা।
ছবিতে ব্রিটিশ রাজকুমারী এলিজাবেথ রেখার মাধ্যমেই ভূবনদের খবর পৌঁছে দিতেন। সেই দৃশ্যে যে ঘোড়াকে দেখা গিয়েছিল, সেটিই আসলে রেখা।
২০০১ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘লগান’। তার পর বাকিটা ইতিহাস। বক্স অফিস মাতিয়েছিল এই ছবি। সেই সঙ্গে ছবিতে রেখার উপস্থিতি ঘিরে উচ্ছ্বসিত হয়েছিল পশ্চিম কচ্ছ পুলিশের অশ্বারোহী বাহিনী।
১৯৯৫ সালে রেখার দায়িত্ব যার কাঁধে ছিল, তিনি কনক সিংহ জেঠওয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যখন ঘোড়াগুলিকে নিয়ে ছবির সেটে যেতাম, সকলে আমাদের পরিবারের মতো আপন করে নিতেন। খুব ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছিল।’’
সেই সময় ঘোড়াগুলিকে গুড় খাওয়াতেন আমির খান। স্মৃতির সরণিতে হাঁটতে গিয়ে এই কথাই জানিয়েছেন কনক। ছবির প্রিমিয়ারেও পশ্চিম কচ্ছ পুলিশের সদস্যদের ডাকা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হোক কিংবা পুলিশের টহলদারির দায়িত্ব— সবেতেই পারদর্শী ছিল রেখা। সিনেমায় তার অভিনয় আরও গর্বিত করেছে পশ্চিম কচ্ছ পুলিশকে।
রেখার এক মেয়ে রয়েছে, তার নাম মঙ্গলা। মঙ্গলারও দুই মেয়ে রয়েছে। তাদের নাম সাইনা এবং শ্যামলী। তিন প্রজন্ম দেখে ফেলেছে রেখা। বয়সও হয়েছে তার। তবে এখনও সে পুরোপুরি সুস্থ।
সাধারণত একটি ঘোড়ার গড় আয়ু হয় ২৫ থেকে ৩০ বছর। রেখার বর্তমান বয়স ৩২। এ ক্ষেত্রেও নজর কেড়েছে সে। এই বয়সেও একদম সুস্থ রেখা। পশ্চিম কচ্ছ পুলিশই তার দেখভাল করে।