কপূর পরিবারে জন্ম। বাবা বলিপাড়ার অন্যতম প্রযোজক। তবুও বলিউডে একের পর এক ছবি মুক্তি পাওয়ার পর বনি কপূরের পুত্র অর্জুনের বেশির ভাগ ছবি-ই মুখ থুবড়ে পড়েছে। নতুন বছর মুক্তি পেয়েছে অর্জুন অভিনীত ‘কুত্তে’ ছবিটি। কিন্তু সে ছবিও বাজারে চলেনি। দর্শকের মনে জায়গা তৈরি করতে বার বার ব্যর্থ হয়েছেন অর্জুন।
বলিউডের সঙ্গে অর্জুনের সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়। সলমন খানের পরিবারের সঙ্গে প্রায় মুখ দেখাদেখি বন্ধ। নিজের কাজের চেয়ে সলমনের প্রাক্তন ভ্রাতৃবধূ মালাইকা অরোরোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বেশি চর্চায় থাকেন অর্জুন।
মালাইকার সঙ্গে আরবাজ খানের সম্পর্ক থাকাকালীনই অর্জুনের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন মালাইকা। ধীরে ধীরে সলমনদের বাড়িতে আনাগোনা বাড়তে থাকে অর্জুনের। ২০১৭ সালে আরবাজ এবং মালাইকার বিবাহবিচ্ছেদের পর অর্জুনের সঙ্গে ইতিউতি দেখা যেত মালাইকাকে। এখন সমাজমাধ্যম জুড়ে শুধু এই যুগলের ছবি। স্বাভাবিক ভাবেই অর্জুনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন সলমন। খান পরিবারে আঘাতদেওয়ার নেপথ্যে অর্জুনকেই দায়ী করেন ‘ভাইজান’। তার প্রমাণ ২০১৭ সালের এক ঘটনা।
২০১৭ সালে সলমন এবং অর্জুনের একই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার কথা ছিল। অনুষ্ঠানে গিয়ে অর্জুনকে দেখেই বিরক্তি প্রকাশ করেন সলমন। শোয়ের আয়োজকদের জানান যে, কোনও ভাবেই যেন অর্জুনের সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি না হয়।
এমনকি, অর্জুনের পারফর্ম্যান্স কেমন হল সেই বিষয়েও যেন সলমনকে কোনও প্রশ্ন না করা হয়। শোয়ের আয়োজকরা বুঝতে পেরে অর্জুনের পারফর্ম্যান্সের সময় পিছিয়ে দেন যেন সলমন কোনও রকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন না হন।
নিজের পারফর্ম্যান্স শুট করা হয়ে গেলে সলমন এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে যান। তার পর অর্জুনের পারফর্ম্যান্স শুট করা হয়। অর্জুনের মুখ দেখবেন না বলে পেশাগত দিকেও দূরত্ব বজায় রেখে চলেন সলমন। অথচ এক সময় দু’জনের মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিল।
বম্বে টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্জুন তাঁর সঙ্গে সলমনের সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি জানান যে, ‘ম্যায়নে প্যার কিঁউ কিয়া’ ছবির শুটিংয়ের সেটে সলমনের সঙ্গে তাঁর প্রথম আলাপ হয়। তখন অর্জুন ১৮ বছরের কিশোর। সেই সময় সলমনের বোন অর্পিতার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
কিন্তু অর্পিতার সঙ্গে সম্পর্কের কথা খান পরিবারের সদস্যদের জানাতে পারছিলেন না অর্জুন। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘সলমনকে আমি খুব ভয় পেতাম। কী ভাবে কথাটা জানাব তা বুঝতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত আমি সরাসরি তাঁকে গিয়ে সব জানাই। পরিবারের লোকেরা আমাকে আরও চিনুক, আমি সব সময় তা-ই চেয়ে এসেছি।’’
২০০৭ সালে মুক্তি পায় ‘সালাম-এ-ইশক’ ছবিটি। এই ছবিতে নিখিল আডবাণীকে পরিচালনার কাজে সাহায্য করেছিলেন অর্জুন। অভিনেতা তখন মনে মনে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন বলেও সাক্ষাৎকারে জানান।
অর্জুনের মন্তব্য, ‘‘আমি তখন পরিচালনার কাজে হাত পাকাচ্ছি। আমার একটি সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। ২২ বছরে পড়তেই আমি নিজের ছবি পরিচালনা করব— আমার খালি মনে হত যে, এ বার আমার জীবন সঠিক দিকে এগোচ্ছে।’’
কিন্তু অর্জুনকে অভিনয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন সলমন-ই। অর্জুন বলেন, ‘‘সলমনকে আমি পিতৃতুল্য মনে করতাম। ও আমাকে বলেছিল পরিচালনা ছেড়ে অভিনয়ে নামতে। বড় ভাইয়ের মতো সব সময় আমাকে পথ দেখিয়ে দিত ও।’’
কিন্তু দু’বছরের মধ্যেই অর্পিতার সঙ্গে অর্জুনের সম্পর্কের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। অর্জুনের দাবি, তাঁর ওজন ১৪০ কিলোগ্রাম ছিল। সেই কারণেই অর্পিতা তাঁকে ছেড়ে চলে যান।
বিচ্ছেদের পর নিজের কেরিয়ারে এগিয়ে যেতে থাকেন অর্জুন। যে কারণে তাঁর সম্পর্ক ভেঙেছিল, জিম করে সেই অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলেন তিনি। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইশকজাদে’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন অর্জুন। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন পরিণীতি চোপড়া।
তার পর ‘গুন্ডে’, ‘টু স্টেটস’, ‘কি অ্যান্ড কা’, ‘তেভর’, ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’, ‘নমস্তে ইংল্যান্ড’, ‘পাণিপথ’, ‘সর্দার কা গ্র্যান্ডসন’ প্রভৃতি ছবিতে অভিনয় করেছেন অর্জুন। কিন্তু কোনও ছবি-ই সেই অর্থে হিট করেনি।
২০১৪ সালে ২১ নভেম্বর অর্পিতা গাঁটছড়া বাঁধেন অভিনেতা আয়ুশ শর্মার সঙ্গে।আর সলমনের ভ্রাতৃবধূ মালাইকার সঙ্গে মেলামেশা বাড়তে থাকে অর্জুনের। তখন থেকেই সলমনের থেকে দূরত্ব বেড়ে যায় অর্জুনের।
এখন অর্জুনকে প্রায় একঘরে করে দিয়েছে সলমন খানের পরিবার। কোনও রকম যোগাযোগ রাখেনি অর্জুনের সঙ্গে। সম্প্রতি ‘কুত্তে’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে অর্জুন জানান যে, বলিউডে মাঝেমধ্যে তাঁর দমবন্ধ হয়ে আসে।
অর্জুনের মন্তব্য, ‘‘এই ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে হলে সহজ-সরল ভাবে থাকা যায় না, অনেক নাটক করে চলতে হয়। ইন্ডাস্ট্রির তালে তাল মেলানোর জন্য নিজেকে একটা অন্য ছাঁচে ফেলতে হয়, যাতে আর নিজস্বতা থাকে না।’’
পেশাগত জীবন ছাড়াও ব্যক্তিগত জীবনে মালাইকার সঙ্গে সম্পর্কের জন্য সমাজমাধ্যমে কটাক্ষের শিকারও হয়েছেন অর্জুন। তবে, সে সবের দিকে এখন মন দেন না তিনি। বরং নিজের কেরিয়ার নিয়েই ব্যস্ত তিনি। চিত্রনাট্য দেখে ছবি বাছাই করছেন এবং পরিবার এবং কাছের বন্ধুদের সঙ্গে অবসর সময় কাটাচ্ছেন বলিপাড়ার অর্জুন।