ক্যাপসুলের আকারের লম্বাটে মসৃণ একটি কৌটৌ। তার খাপ খুলতেই বেরিয়ে আসে একের পর এক যন্ত্রাংশ। সবই আকারে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। এগুলির সাহায্যেই নাকি শত্রুপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে পালাতেন আমেরিকার গুপ্তচরেরা।
এমনও হয় নাকি? আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল স্পাই মিউজিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক এবং ইতিহাসবিদ ভিন্স হউটনের দাবি, ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কালে নাকি এমন যন্ত্র ব্যবহার হত। সে সময় সিআইএ-র মতো আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা তাদের গুপ্তচরদের হাতে তুলে দিত এই ‘অস্ত্র’। যার সাহায্যে শত্রুপক্ষের কব্জা ভেদ করতে পারতেন তাঁরা।
ওয়াশিংটনে এই সংগ্রহশালায় প্রদর্শিত হচ্ছে এমন নানা ধরনের ‘শিল্পকৃতি’ বা গুপ্তচরদের তুরুপের তাস। তবে সেগুলির মধ্যে একটি ‘অস্ত্র’ আস্তিনের বদলে গোঁজা থাকত পায়ুদ্বারে। আক্ষরিক অর্থেই!
ওই অস্ত্রের পোশাকি নাম— ‘রেকটাল টুল কিট’। তবে একে শিল্পকৃতির আখ্যা দিয়েছেন ভিন্স। তাঁর মতে, আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা এ ‘অস্ত্র’ শিল্পকৃতির থেকে কোনও অংশে কম নয়।
ভিন্সের কথায়, ‘‘চরবৃত্তির দুনিয়ায় কী ভাবে যে বিপদ কাটানোর ব্যবস্থা করা হত, তা ভাবলেও অবাক হতে হয়। রেকটাল টুল কিট হল এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।’’
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর থেকে ১৯৯১ সালে অর্থাৎ ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কালে আমেরিকার গুপ্তচরদের তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বা পশ্চিম বার্লিনের মতো ইউরোপীয় জায়গায় পাঠানো হত বলে দাবি ভিন্সের। তাঁদের দেহে এমন জায়গায় এই ‘অস্ত্র’ ঢুকিয়ে দেওয়া হত, যাতে শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়লেও তার খোঁজ না পাওয়া যায়। ভিন্সের দাবি, পায়ুদ্বারই ছিল সেই সুবিধাজনক জায়গা!
ভিন্স জানিয়েছেন, রেকটাম টুল কিটের ওই ক্যাপসুলের মধ্যে থাকত করাত, ধারালো ছুরি, ড্রিল-সহ লোহা কাটার বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। ক্যাপসুলটি এমন ভাবে তৈরি করা হত, যাতে তার মধ্যে সহজেই ওই সব যন্ত্রপাতি ঢোকানো যায়।
ক্যাপসুলের যন্ত্রাংশের খোঁচায় যাতে পায়ুদ্বারের ক্ষতি না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হত এর কারিগরদের।
ভিন্স বলেন, ‘‘গুপ্তচরদের কখনও এমন অবস্থায় পড়তে হত, যখন পরিস্থিতি জীবন-মরণের। ফলে জেলের গরাদ কাটার জন্য ওই যন্ত্র তাঁদের দেওয়া হত। যাতে বিপাকে পড়লে গরাদ কেটে পালাতে পারেন গুপ্তচরেরা।’’
সংবাদমাধ্যমের দাবি, শত্রুপক্ষের হাতে পড়লে বহু ক্ষেত্রেই গুপ্তচরদের বিবস্ত্র করে তল্লাশি চালানো হয়। সে সময় তাঁদের কাজে আসত এই টুল কিট। কারণ, পায়ুদ্বারের ভিতরে এটি ঢোকানো থাকায় তল্লাশির পরেও তা আপাত ভাবে খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল।
আমেরিকার সংগ্রহশালায় এ ধরনের বহু ‘শিল্পকৃতি’ প্রদর্শিত হলেও স্বাভাবিক ভাবেই এটি ব্যবহার করার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি সিআইএ।
এমনকি, সংস্থার আর্কাইভেও এমন কেসের উল্লেখ নেই, যেখানে বলা হয়েছে যে ‘রেকটাম টুল কিটে’র সাহায্যে শত্রুশিবির থেকে পালিয়েছেন কোনও গুপ্তচর। ফলে সত্যিই এই টুল কিটটি শত্রুশিবিরে আটকে পড়া কোনও গুপ্তচরের প্রাণ বাঁচিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব হয়নি।