যদি চান আপনার পণ্য বা সংস্থা সফল হোক, তবে সেই লক্ষ্য অর্জনের সব চেয়ে কার্যকর মাধ্যম বিজ্ঞাপন। গবেষণা দেখিয়েছে, গ্রাহকরা সব সময় উদ্ভাবনী বিজ্ঞাপন দেখেই বেশি আকৃষ্ট হন। সাদামাঠা বিজ্ঞাপন অনেক সময় গ্রাহকের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হয়ে ওঠে না।
অতিমারির ফলে সংস্থাগুলি ভার্চুয়াল মাধ্যমে আরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহী হয়েছে। এই সময় ‘ই-কমার্স’ হয়ে উঠেছে বিপণনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।
গবেষণায় দাবি, ই-কমার্সের পাশাপাশি অনলাইন খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়েছে এই সময়। যার ফলে, সংস্থাগুলি প্রবল প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের পৃথক পরিচয় তৈরি করার নতুন উপায় খুঁজছে এবং সেখানেই দরকার হয়ে পড়ছে ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপন।
ওই সব সংস্থার দাবি, ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপন বিপণনকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। যে কোনও সংস্থা তাদের পণ্য সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য প্রতিটি সম্ভাব্য দিক থেকে গ্রাহকের সামনে তুলে ধরতে পারছে। এর ফলে গ্রাহক আরও সহজে তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যটিকে যাচাই করে নিতে পারছেন।
বিভিন্ন নামীদামি সংস্থা ইতিমধ্যেই তাদের ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপনের ওপর জোর দিতে শুরু করেছে। সম্প্রতি জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘নাইকি’ তাদের নতুন এয়ার ম্যাক্স জুতোর প্রচারের জন্য জাপানের টোকিয়োর শিনজুকু এলাকায় এক সুবিশাল ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপন দিয়েছিল।
২১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ অবধি চলা এই প্রচারে নাইকি যতটা সম্ভব তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য গ্রাহক এবং সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। জনসাধারণেরও সেই বিজ্ঞাপন বেশ মনে ধরেছে।
শুধু নাইকির মতো পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থাই নয়, ‘মেটা’ও ফেসবুকে এবং ইনস্টাগ্রামের জন্য ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপনের চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। এ জন্য তারা একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিও করেছে।
ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা তাঁদের কম্পিউটার বা ফোন ব্রাউজ করার সময় যদি কোনও পণ্যের ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপন দেখেন, তাঁরা তখনই সেই পণ্য সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন এবং পণ্যটিকে সমস্ত দৃষ্টিকোণ থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেখতেও পারবেন।
মেটাভার্সেও ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপন চালু করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা শুরু করেছে মেটা। ইতিমধ্যে প্রসাধনী, ফ্যাশন এবং ফার্নিচার বিক্রি করে যে সব সংস্থা, তারা তাদের পণ্যগুলির দ্বিমাত্রিক থেকে ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপন করার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে।
সংস্থাগুলি কেন ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপনের দিকে ঝুঁকছে? তারও বিশেষ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপনগুলিতে দ্বিমাত্রিকের তুলনায় আট গুণ বেশি ‘ট্রাফিক এনগেজমেন্ট’ হয়।
ওই গবেষণায় দাবি, এই ধরনের বিজ্ঞাপনে লাভের পরিমাণও বেশি। অর্থাৎ, কোনও সংস্থা বিজ্ঞাপনের পিছনে যে পরিমাণ টাকা ঢালবে, তার দুই থেকে তিন গুণ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থা আদিদাস কলম্বিয়াতে ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করার ফলে প্রায় তিন গুণ লাভের মুখ দেখেছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই গবেষণায়।
গবেষকরা দেখেছেন, ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপন গ্রাহকের কোনও বিশেষ পণ্য ক্রয় করার অভিপ্রায় বাড়াতে সাহায্য করে।
এ ছাড়াও এই ধরনের বিজ্ঞাপন গ্রাহকদের মনে ঝুঁকির ধারণা কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় বলেও দেখেছেন গবেষকরা। গ্রাহকরা ওই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই কোনও পণ্য সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পারেন।
ত্রিমাত্রিক জগৎ এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটির মতো প্রযুক্তি ২০১৯ থেকে বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করেছে। কিন্তু অতিমারিকালে এই জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আশা করা যায়, ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপন ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় পণ্যের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতা থেকে যে কোনও সংস্থার পণ্যগুলিকে আলাদা করার প্রধান চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে।