সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে বিশ্ব জুড়ে নামডাক। স্বপ্ন ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। হিন্দি ফিল্মজগতে এলেও বার বার মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন যুক্তা ইন্দ্রলাল মুখি। কেরিয়ার ছেড়ে সংসার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যুক্তা। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনও খুব একটা সুখকর হয়নি তাঁর। বর্তমানে কী করছেন ‘সুন্দরী’র খেতাব পাওয়া যুক্তা?
ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন,সুস্মিতা সেন, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মতো অভিনেত্রীরা যেমন ‘সুন্দরী’র খেতাব পাওয়ার পর বলিউডে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন, তেমনটা করতে চেয়েছিলেন যুক্তাও। বেঙ্গালুরুতে জন্ম হলেও দুবাইয়ে শৈশবের কিছুটা সময় কাটিয়েছেন তিনি। সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে মুম্বই যান যুক্তা।
যুক্তার বাবা কাপড় তৈরির সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুম্বইয়ের সান্তা ক্রুজে একটি স্যালোঁ খুলেছিলেন যুক্তার মা। বাবা-মা দু’জনেই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকায় ছোট থেকে দিদার কাছে বড় হয়ে ওঠেন যুক্তা। মুম্বইয়ের স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি।
স্কুল এবং কলেজে পড়াকালীন যুক্তা তাঁর উচ্চতার কারণে সহপাঠীদের কাছে মজার পাত্রী হয়ে ছিলেন। উচ্চতা বেশি বলে কটাক্ষের শিকার হতেন তিনি। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর মডেলিং নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চাইলেন যুক্তা।
উচ্চতা বেশি থাকলে মডেলিং জগতে সুবিধা পাওয়া যায়। সেই কারণেই এই পেশা বেছে নিয়েছিলেন যুক্তা। কম সময়ের মধ্যেই মডেলিং জগতে নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন তিনি।
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১৯৯৯ সালে বিজয়ীর খেতাব পান যুক্তা। রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় যুক্তা ভেবেছিলেন অভিনয়জগতে নিজের কেরিয়ার তৈরির পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু আদতে হল তার বিপরীত।
২০০১ সালে ‘পুভেল্লাম উন ভাসাম’ নামের একটি তামিল ছবিতে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় যুক্তাকে। তাও আবার স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি চরিত্রে। বড় পর্দায় কাজ পাচ্ছিলেন না বলে সমাজসেবা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান যুক্তা। ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্যাসা’ ছবিতে আফতাব শিবদাসানির বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু সেই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
২০০৬ সালে সঞ্জয় খন্নার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কাটপুতলি’ ছবিটি। এই ছবিতেও অভিনয় করেন যুক্তা। তবে ছবিটি কবে মুক্তি পেল আর কবেই বা প্রেক্ষাগৃহ থেকে বিদায় নিল, তা দর্শকের গোচরে আসেনি। পর পর দু’টি ছবিতে অভিনয় করেও অভিনেত্রী হিসাবে দর্শকের কাছে পৌঁছতে বিফল হয়েছিলেন যুক্তা।
বলিপাড়ায় কাজ না পেয়ে যুক্তা ওড়িয়া এবং ভোজপুরি ছবিতে ‘আইটেম সং’-এ নাচের দৃশ্যে অভিনয় করা শুরু করেন। এর পর থেকে একাধিক ছবির প্রস্তাব পেলেও খারিজ করে দিতেন তিনি। কারণ পর্দায় বেশির ভাগ সময় লাস্যময়ী দৃশ্যে অভিনয় করার প্রস্তাব মিলত।
২০০৮ সালে অভিনয় ছেড়ে নতুন জীবন শুরু করেন যুক্তা। প্রিন্স তুলি নামে নিউ ইয়র্কের এক হোটেল ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন তিনি। ছবির প্রচারে প্রিন্সের হোটেলে গিয়েছিলেন যুক্তা। সেখানেই দু’জনের প্রথম আলাপ। তার পর প্রেম।
প্রিন্সের সঙ্গে বিয়ের দু’বছর পর পুত্রসন্তানের জন্ম দেন যুক্তা। কিন্তু তার কয়েক বছর পর প্রিন্সের বিরুদ্ধে শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেন যুক্তা।
যুক্তার দাবি, বিয়ের পর একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন প্রিন্স। অভিযোগ, শারীরিক হেনস্থার পাশাপাশি যুক্তাকে যৌন নির্যাতনও করতেন প্রিন্স। যুক্তা বিচ্ছেদ চাইলেও প্রিন্স রাজি ছিলেন না বলে অভিযোগ করেন যুক্তা।
অপর দিকে প্রিন্সের অভিযোগ ছিল, যুক্তা নাকি ৩৫ লক্ষ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। যুক্তা পাল্টা অভিযোগ জানিয়ে দাবি করেন, বিয়ের সময় তিনি প্রায় দু’কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাঁর কাছে মাত্র দু’লক্ষ টাকার সম্পত্তি অবশিষ্ট ছিল। শ্বশুরবাড়ির সদস্যেরা নাকি যুক্তার সম্পত্তির প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।
২০১৪ সালের জুন মাসে বিবাহবিচ্ছেদ হয় যুক্তার। তার পর মুম্বইয়ের একটি আশ্রমে দীক্ষা নেন তিনি। বিচ্ছেদের পাঁচ বছর পর আবার বড় পর্দায় অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
২০১৯ সালে রাজ মেহতার পরিচালনায় ‘গুড নিউ়জ়’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অক্ষয় কুমার, করিনা কপূর খান, কিয়ারা আডবাণী এবং দিলজিৎ দোশাঞ্জ। একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যুক্তাও।
বর্তমানে পুত্রের সঙ্গে মুম্বইয়ে থাকেন যুক্তা। সমাজসেবার পাশাপাশি ছোটখাটো সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসনে দেখা যায় যুক্তাকে।