২৪ ঘণ্টার দিনটাকে চার ভাগে ভেঙে তার শুধু একটা ভাগ অফিসকে দিতে হবে। বাকি সময়টা পুরোপুরি আপনার—দিন কয়েক আগে কর্মীদের এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস (টিসিএস)।
ভারতীয় সংস্থা টাটার তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস। তারা জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে কর্মীদের কাজের সময়সীমা ২৫ শতাংশের বেশি হওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি আগামী পাঁচ বছর টিসিএস-এর ৭৫ শতাংশ কর্মী কাজ করতে পারবেন বাড়ি থেকেই।
অতিমারি আবহে বাড়ির আরামে অফিসের কাজ করা সুবিধাজনক মনে হয়েছে অনেকেরই। অফিসের বসে কাজ করলে কর্ম তৎপরতা যেমন বাড়ে বলে মনে করেন কর্মীদের একাংশ, তেমন অন্য অংশের মত, বাড়ি থেকে কাজ করলে যাতায়াতের খরচ, সময়, পরিশ্রম কমে, অফিসে কাজের সময়টুকু বাদ দিলে হাতে সময়ও পাওয়া যায় অনেকটা। টিসিএস কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত এই বিশেষ শ্রেণির কর্মীদের উৎসাহিত করেছে।
টাটার তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে কর্মীমুখী বলে প্রশংসাও করেছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, অতিরিক্ত সময় অফিসে থাকার ফলে কর্মীদের মানসিক অবসাদ, স্বাস্থ্যহানি, কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার মতো অনেক সমস্যা হয়। যা পরোক্ষে সংস্থার কাজেরও ক্ষতি করে। কর্মীদের কথা মাথায় রেখে টাটাগোষ্ঠীর এই সিদ্ধান্ত ভেবে দেখতে পারেন বাকিরাও।
ভাল কাজে অগ্রণী হওয়া বা বাকিদের দিশা দেখানোর ভূমিকা অবশ্য এই প্রথম নয়,আগেও পালন করেছে টাটা গোষ্ঠী। গত ভাঙা সিদ্ধান্তের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তার অনেকগুলির কৃতিত্ব আবার টাটার বর্তমান ‘চেয়ারম্যান এমিরেটাস’ রতন টাটার।
সম্প্রতিই প্রায় ধুঁকতে থাকা সরকারি উড়ান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ঋণে জর্জরিত এয়ার ইন্ডিয়া টাটার স্পর্শে প্রাণ পেয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অনেকেই। প্রসঙ্গত, প্রায় ন’দশক আগে টাটা গোষ্ঠীরই হাত ধরে শুরু হয়েছিল দেশের প্রথম উড়ান সংস্থা। দেশের প্রথম পাইলট জে আর ডি টাটা প্রতিষ্ঠিত সেই টাটা এয়ারলাইন্সের নাম বদলে ১৯৪৬ সালে হয় এয়ার ইন্ডিয়া (এআই)। স্বাধীনতার পরে তার দখল চলে গিয়েছিল সরকারের হাতে। ২০১৪ সালে দেশের উড়ান পরিষেবায় বিদেশি লগ্নির পথ চওড়া করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সে বছর জুনে মালয়েশিয়ার ধনকুবের টনি ফার্নান্ডেজের এয়ারএশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভারতের আকাশে এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া-র পরিষেবা শুরু করে টাটা। পরে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের সঙ্গে যৌথ ভাবে চালু করে বিমান পরিষেবা সংস্থা ‘বিস্তারা’।
রতনের আমলে টাটা গোষ্ঠীর সাফল্যের তালিকা অবশ্য দীর্ঘ। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যন। তাঁর আমলে টাটার সেরা কৃতিত্ব কী কী দেখে নেওয়া যাক।
১৯৯৮ সালে প্রথম সম্পূর্ণ ভারতে তৈরি যাত্রীবাহী গাড়ি বাজারে আনে টাটা। নাম টাটা ইন্ডিকা। দু’বছরের মধ্যে সেটি এই বিভাগের এক নম্বর ব্র্যান্ডের জায়গা করে নেয়।
২০০০ সাল। ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় চা বিক্রেতা সংস্থা টেটলির সম্পূর্ণ স্বত্ব কিনে নেয় টাটা টি। আর এখন টাটা টি আন্তর্জাতিক পানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত।
২০০১: বিমা ব্যবসায় ফিরল টাটা। আমেরিকান ইন্টারন্যাল গ্রুপ (এআইজি)-এর সঙ্গে মিলে হল টাটা এআইজি। তার আগে ১৯১৯ সালে টাটার বিমা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দোরাব টাটা। কিন্তু সেই সংস্থার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ১৯৫৬ সালে।
২০০২: সরকারি টেলি যোগাযোগ সংস্থা বিএসএনএল বা বিদেশ সঞ্চার নিগম লিমিটেডের স্বত্ব এল টাটার দখলে। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাই প্রথম ভারতীয় সরকারি সংস্থা, যার নাম নিউ ইয়র্কের শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হয়েছিল।
২০০৩: টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস বার্ষিক ১০০ কোটি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াল। এই প্রথম কোনও ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা এত বড় সাফল্য পেল।
২০০৪: নিউ ইয়র্কের শেয়ার বাজারে এ বার নাম উঠল টাটা মোটর্সের। ওই বছরই দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা দেয়ু মোটর্সেরও স্বত্ত্ব কিনে নেয় টাটা মোটর্স।
২০০৭: ইউরোপের দ্বিতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী সংস্থার দখল এল টাটার হাতে। টাটা স্টিল কিনে নিল অ্যাংলো-ডাচ সংস্থা কোরাস-কে।
২০০৮: এক লাখ টাকায় যাত্রীবাহী গাড়ি। দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা মাথায় রেখে সবচেয়ে সস্তা যাত্রিবাহী গাড়ি আনল টাটা। নাম টাটা ন্যানো।
২০০৮: ওই বছরেই আন্তর্জাতিক সংস্থা ফোর্ড-এর দু’টি গাড়ির ব্যবসা কিনে নিল টাটা— জাগুয়ার আর ল্যান্ড রোভার। টাটা তৈরি করল নতুন সংস্থা জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার।
২০১২: স্টারবাক এখন ভারতের আনাচে কানাচে। এই বিদেশি এই কফি নির্মাতা সংস্থার একটি আউটলেটও ছিল না ভারতে। ২০১২-এ টাটার সঙ্গে হাত মেলায় স্টারবাক। যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয় টাটা স্টারবাকস লিমিটেড। টাটা স্টারবাকস তার প্রথম দোকান খোলে মুম্বই শহরে। এখন শুধু কলকাতাতেই নিদেন পক্ষে ছ’টি দোকান রয়েছে এই কফি নির্মাতা সংস্থার।
কর্মজীবনে সফল। তবে ব্যক্তিজীবনে কিছুটা কি পিছিয়ে! বিয়ে করেননি। প্রশ্ন করা হলে বলেছেন, বারবার বিয়ে করতে করতে শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছেন। কারণ প্রতিবারই কোনও না কোনও ভয় পেয়ে বসেছিল তাঁকে। এমনটা হয়েছে চারবার। তবে প্রেম একবার এসেছিল জীবনে।
সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজে নিজের জীবন কাহিনী বর্ণনা করেছেন রতন। সেখানে উঠে এসেছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা ওঠা-পড়া, ঘাত-প্রতিঘাতের কথা। সেখানেই রতন জানিয়েছেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন। বিয়ে করবেন ঠিকও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু মেয়েটির পরিবার তাঁকে ভারতে আসতে দেয়নি। রতনও আর বিয়ে করেননি। তবে তাঁর অনুরাগীরা বলেন, বিয়ে করেছেন রতন। করেছেন তাঁর কাজের সঙ্গে।