রশ্মিকা মান্দানা, আপাতত নামটাই যথেষ্ট৷ 'পুষ্পা: দ্য রাইজ'-এর নায়িকা রশ্মিকার এই বিপুল জনপ্রিয়তার কারণ তাঁর অভিনয় দক্ষতা এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব৷
নেটমাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় রশ্মিকা৷ আপাতত তিনি ‘দেশের ক্রাশ’ বলে বিবেচিত হচ্ছেন।
রশ্মিকা মানেই এখন বক্স অফিসে সাফল্য, একের পর এক সুপারহিট সিনেমা।
সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে রশ্মিকার অনুরাগীর সংখ্যা৷ রশ্মিকাকে একটি বার সামনে থেকে দেখার জন্য ৯০০ কিলোমিটার দূর থেকে কর্ণাটকে এসেছিলেন এক অনুরাগী৷
কিন্তু জীবনের পথ কি এমনই পুষ্পে ভরা? এত ভালবাসার মধ্যেও রয়েছে কিছু ঘৃণা, কটাক্ষ৷ নেটমাধ্যমে কটাক্ষের শিকার হওয়া খ্যাতনামীদের কাছে আজ এক নৈমিত্তিক ঘটনা। জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খ্যাতনামীদের সমান তালে ট্রোলড হতে হয় ছোট ছোট নানা কারণে৷
রশ্মিকাও এর ব্যতিক্রম নন৷ সুদক্ষ অভিনেত্রী এবং সুন্দরী হলেও রশ্মিকা নেটমাধ্যমে কটাক্ষ বা বিদ্রূপের শিকার হয়েছেন।
কিন্তু ক্রমাগত এই কটাক্ষ, ঘৃণা, উপহাসের মধ্যেও ভাল থাকার চাবিকাঠি খুঁজে নেওয়া সত্যিই কি সহজ?
সব সময় হয়তো সম্ভব হয় না বাইরের কিছু মানুষের অহেতুক আক্রমণ উপেক্ষা করে নিজের মনের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ করে ভাল থাকা৷
দিনের পর দিন কটাক্ষের কারণে রশ্মিকা মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন।
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি শরীর নিয়ে কটাক্ষের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন৷ ট্রোলিং কী ভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে বিঘ্নিত করে, তা জানিয়েছেন রশ্মিকা৷
শরীর নিয়ে বাঁকা মন্তব্য এবং ট্রোলিং সম্পর্কে রশ্মিকার বক্তব্য,
ক্রমাগত যখন নিজের দেহ, নিজের গায়ের রং, ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, বিদ্রূপ করা হয়, তখন তাঁর মনে হতে থাকে, জনতার সামনে যেন নগ্ন অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷
শুধু শরীর সম্পর্কে বিদ্রূপ করেই থেমে থাকেননি কটাক্ষকারীরা৷ রশ্মিকা জানান, তাঁর পরিবার, ব্যক্তিজীবন, এমনকি তাঁর স্কুল এবং সামগ্রিক বেড়ে ওঠা— সমস্ত কিছুকে ট্রোল করা হয়েছিল।
একাধিক বার রশ্মিকাকে ট্রোল করা হয়৷ কখনও হট প্যান্ট পরার জন্য, কখনও অন্তর্বাস নিয়ে। এক বার গাড়ি থেকে নামার সময় মাস্ক পরতে ভুলে গেছিলেন রশ্মিকা৷ কিছুক্ষণ এর মধ্যেই মনে পড়ে এবং মাস্ক পরেন কিন্তু তত ক্ষণে ট্রোলারদের শিকার হয়ে গিয়েছেন তিনি।
ছোটবেলার ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন রশ্মিকা৷ সেখানেই একজন মন্তব্য করেন 'দাগার', কন্নড় ভাষায় যার অর্থ 'যৌনকর্মী'৷
রশ্মিকা তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করেন এবং বলেন, কোনও ব্যক্তিকে এই ধরনের কুরুচিকর আক্রমণ করা উচিত নয়৷ তিনি প্রশ্ন তোলেন অভিনেতাদের এই ধরনের আক্রমণ করে কী লাভ হয়? শুধুমাত্র জনপ্রিয় বলেই কি একজনকে যা ইচ্ছে বলা যায়?
সেই সঙ্গে তিনি বলেন, 'কাজ নিয়ে সমালোচনা করুন৷ প্রত্যেক পেশার সম্মান আছে৷ অহেতুক পরিবার বা ব্যক্তিজীবন নিয়ে নোংরা মন্তব্য করবেন না৷ প্রত্যেককে সম্মান করা উচিত৷'
দিনের পর দিন এই সব নেতিবাচক কথাবার্তায় রশ্মিকা নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন৷ নিজের অভিনয় ক্ষমতা নিয়েও সন্দিহান হয়ে উঠছিলেন। এমনকি নিজের যোগ্যতা সম্পর্কেও সঠিক মূল্যায়ন করার শক্তি তাঁর হারিয়ে গিয়েছিল৷
এই সময়টি অত্যন্ত কঠিন ছিল। নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাভাবিক জীবনের পথে ফেরা, পুনরায় নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না৷
কিন্তু সমস্ত নেতিবাচক ঘৃণ্য মন্তব্যকে পেরিয়ে, মানসিক অবসাদকে হারিয়ে রশ্মিকা আজ স্বপ্রতিভায় ভাস্বর৷
রশ্মিকা তাঁর ইনস্টাগ্রামে লেখেন, 'মানুষ হিসেবে কিছু খু্ঁত রয়েছে সকলের মধ্যেই৷ কিছু বিষয় অপারগতা থাকবে৷ কিন্তু এমন এক সময় আসবে, যখন তুমি বুঝবে, লোকে কী বলবে, তার থেকেও তোমার ব্যাপ্তি অনেক বেশি৷'
'তুমি শক্তিশালী, তুমি সুন্দর এবং তুমি একাই পারবে। নিজের মধ্যে এই বোধ এলেই আর কেউ তোমাকে থামাতে পারবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'অন্য লোকে কী বলবে সেই বিষয়ে আমরা অতিরিক্ত ভাবনা-চিন্তা করি৷ মানুষ অন্য মানুষের প্রশংসা, ভালবাসা চায়৷’
'কিন্তু তোমার নিজের জীবনের মালিক তুমি৷ জীবনকে কী ভাবে চালাবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব শুধুই তোমার৷'
আত্মবিশ্বাসই রশ্মিকার এগিয়ে চলার মূলমন্ত্র৷ ২০১৬ সালে কন্নড় ছবিতে অভিনয় করে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন রশ্মিকা৷ এবং খুব শিগগির বলিউডে সিদ্ধার্থ মলহোত্রর বিপরীতে অভিনয় করবেন রশ্মিকা 'মিশন মজনু' ছবিতে৷