পেশায় অভিনেত্রী, নামও রানি। তবে ইনি মুখোপাধ্যায় নয়, রানি চট্টোপাধ্যায়। ভোজপুরী ফিল্মের প্রথম সারির নায়িকা। খবরে এসেছেন বলিউডের পরিচালক সাজিদ খানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনে। তবে এই ঘটনার আগে এবং পরেও বহু বিতর্কে জড়িয়েছে তাঁর নাম।
ভোজপুরী ফিল্মের এই অভিনেত্রীর বয়স ৩২। যদিও ইতিমধ্যেই তিনি ৩০০ ছবিতে কাজ করে ফেলেছেন। পেয়েছেন দাদা সাহেব ফালকে ফাউন্ডেশনের পুরস্কার-সহ সেরা অভিনেত্রীর বহু সম্মানও।
রানির অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল ১৫ বছর বয়স থেকে। তখন ক্লাস টেনের ছাত্রী তিনি। মুম্বইয়ে থাকতেন। প্রথম ছবিতেই ভোজপুরী সুপারস্টার এবং অধুনা রাজনীতিবিদ মনোজ তিওয়ারিকে নায়ক হিসাবে পেয়েছিলেন। ছবি ‘ব্লকবাস্টার হিট’ ছিল।
২০০৪ সালে মুক্তি পায় প্রথম ছবি। তার পর থেকে গত ১৮ বছরে ভোজপুরী সিনেমাকে বহু হিট উপহার দিয়েছেন রানি। বস্তুত, ভোজপুরী সিনেমায় এই বিপুল জনপ্রিয়তা আর সম্মান পাওয়ার পরই বলিউডে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন রানি। কিন্তু সেই স্বপ্ন শুরুতেই ধাক্কা খায়।
২০১৩ সালে মুক্তি পায় সাজিদের ছবি ‘হিম্মতওয়ালা’। রানি জানিয়েছেন, সেই ছবির একটি ‘আইটেম’ গানে নাচের দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাজিদ। নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান আলোচনা করার জন্য। সেখানে গিয়েই ভয়ানক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় রানিকে।
সাজিদ প্রথমে তাঁকে তাঁর পরনের স্কার্টটি তুলে পায়ের গড়ন দেখাতে বলেছিলেন। সেই অনুরোধ রাখার পর, রানির বক্ষদেশের আকার-আকৃতি নিয়েও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেন সাজিদ। এমনকি তাঁর যৌনজীবন সম্পর্কেও জানতে চান। তখন অভিনেত্রীর বয়স অনেকটাই কম। তিনি জানিয়েছেন, ঘাবড়ে গিয়ে পরিচালকের বাড়ি থেকে সে দিন চলে এসেছিলেন তিনি।
বলিউডের স্বপ্ন সেখানে থমকে যায় রানির। তবে ভোজপুরী ছবির এই নায়িকা এর পরেও বিতর্কে জড়িয়েছেন। ভোজপুরী ছবির বহু প্রথম সারির অভিনেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে গুজব ছড়াতে শুরু করে। এর মধ্যে ছিলেন ভোজপুরী তারকা অভিনেতা রবি কিষণও।
রবির সঙ্গে সম্পর্কের কথা নাকি নিজেই জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে নাম না করে। অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘‘ভোজপুরী ছবির এক গায়ক-নায়ক সুপারস্টারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম। কিন্তু মাত্র দু’মাসের মধ্যেই সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়।’’ এমনকি, বিচ্ছেদের আগে ওই সম্পর্কে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় বলেও জানিয়েছিলেন রানি।
এর পরও বারবার ভোজপুরী ছবির অভিনেতাদের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে রানির। পবন সিংহ নামে এক অভিনেতার সঙ্গে রানির সম্পর্ক তিক্ততায় শেষ হয়। পবনের বিরুদ্ধে রানি পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, পবন প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে তাঁকে।
আবার এই পবনের সঙ্গেই রানিকে নিয়ে এক সময় রেষারেষি হয় ভোজপুরী ছবির আর এক অভিনেতা অক্ষরা সিংহের। তখন যদিও রানি পবনেরই পক্ষ নিয়েছিলেন।
তবে বিতর্কে জড়ালেও রানির অভিনয়ে তার ছাপ পড়েনি কখনও। এক দিকে অভিনয় যেমন চালিয়ে গিয়েছেন, তার পাশাপাশিই চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনাও। মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেন। ভোজপুরী সিনেমার এই অভিনেত্রী পেশাদার নাচের প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।
জন্ম মুম্বইয়ে। তবে রানির পদবি চট্টোপাধ্যায় হলেও তিনি বাঙালি নন। তাঁর আসল নাম সাবিহা শেখ।
সাবিহা থেকে তাঁর রানি হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে স্বয়ং বলিউডের অভিনেত্রী রানি মুখোপাধ্যায়ই। বলিউডে যখন একের পর এক হিট ছবি দিচ্ছেন এই বাঙালি কন্যা, তখনই ভোজপুরী সিনেমায় আগমন হয় নবাগতা সাবিহার। ছবির চুক্তিপত্রে সই করার পর পরিচালকই বদলে দিয়েছিলেন তাঁর নাম।
রানি জানিয়েছেন, ছবিতে তাঁর শিব মন্দিরে পুজো করার অনেকগুলি দৃশ্য ছিল। পরিচালকের মনে হয়েছিল, মুসলিম নাম বললে ছবির উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই নায়িকার নাম জানতে চাওয়া হলে আচমকা তাঁর বলিউডের অভিনেত্রীর রানির কথাই মনে আসে। সেই নামই বলে দেন সাংবাদিকদের। আর পদবিও ‘মুখার্জি’র সঙ্গে মিলিয়ে ‘চ্যাটার্জি’ করে দেন তিনি।
রানি জানিয়েছেন, তাঁর নাম বদলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছিল পরিবার কিন্তু যেহেতু প্রথম ছবিটি হিট করেছিল, রানির মনে হয়েছিল, ওই নামটি তাঁর জন্য সৌভাগ্যপ্রদ। শেষপর্যন্ত নামটি তাই তিনি বদলাননি।
তবে গত বেশ কয়েক বছর ধরে সেভাবে সিনেমা করেননি রানি। বদলে শরীর চর্চায় মন দিয়েছেন অনেক বেশি। তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভর্তি শরীরচর্চার সেই সব ছবি।
রানি যোগ দিয়েছেন রাজনীতিতেও। ২০২২ সালে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। যদিও ভোটের পর আর সে ভাবে রানিকে রাজনীতির অঙ্গনে পাওয়া যায়নি।
সাজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সেই অর্থে নতুন করে খবর এলেন রানি। দীর্ঘ চার পাঁচ বছর পর্দার আড়ালে থাকার পর আবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে তাঁকে নিয়ে।