বাবা-ছেলের সম্পর্ক নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘অ্যানিম্যাল’ ছবি। মুক্তির প্রথম দিনেই বক্স অফিসে তা ভেঙেছে বহু নজির। প্রথম দিনে শুধু ভারতের বাজার থেকেই এই ছবি আয় করেছে ৬১ কোটি টাকা। ‘অ্যানিম্যাল’ যখন বাজার কাঁপাচ্ছে, তখনই প্রকাশ্যে এল রণবীরের একটি পুরনো সাক্ষাৎকার, যেখানে তিনি জানিয়েছিলেন বাবা ঋষি কপূরের সঙ্গে ঠিক কেমন ছিল তাঁর সম্পর্ক?
১ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে সন্দীপ রেড্ডি ভঙ্গা পরিচালিত ছবি ‘অ্যানিম্যাল’। অভিনয় করেছেন রণবীর কপূর, রশ্মিকা মন্দানা, অনিল কপূর। এই ছবির পরতে পরতে রয়েছে হিংস্রতা। যদিও ছবিকে টেনে নিয়ে গিয়েছে বাবা-ছেলের সম্পর্ক।
রণবীরের মা নীতু কপূর এই নিয়ে বেশ আক্ষেপই করেছেন। ছবি দেখার পর সমাজমাধ্যমে রণবীরের চরিত্রের একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘যদি ঋষিজি আজ বেঁচে থাকতেন।’’
এই আবহেই বাবার সঙ্গে রণবীরে সম্পর্কের রসায়ন আরও এক বার প্রকাশ্যে। ছোটবেলায় কেমন ছিল ঋষির সঙ্গে সম্পর্ক, কী কথা হত, সবই জানিয়েছেন রণবীর।
‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে বাবা অনিল কপূরের সঙ্গে ছেলে রণবীরের খুব একটা সদ্ভাব নেই। ঋষি যখন বেঁচে ছিলেন, সে সময় তাঁর সঙ্গেও রণবীরের সম্পর্ক খুব একটা ভাল ছিল না। বরাবর একটু দূরত্ব ছিলই। সে কথা নিজেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন রণবীর।
রণবীর জানিয়েছিলেন, মায়ের অনেক কাছে ছিলেন তিনি। মায়ের সঙ্গে গল্পগুজব হত। সময়ও কাটাতেন। অনেক কথাই ভাগ করে নিতেন মায়ের সঙ্গে।
একটি সাক্ষাৎকারে রণবীর জানিয়েছিলেন, যখন ছোট ছিলেন, তাঁর বাবা প্রায় কখনওই বাড়িতে থাকতেন না। শুটিংয়ের জন্য বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে, এমনকি শহরের বাইরে থাকতেন। সে কারণে সময় পেতেন না ঋষি।
রণবীর যখন ছোট, তখন ঋষি বলিউডের ব্যস্ত নায়ক। একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি। সে কারণে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতেন ছবির শুটিংয়ে। ৯। রণবীর জানিয়েছেন, যখন বাড়িতে থাকতেন, তখনও বাবার সঙ্গে খুব একটা কথা হত না। বন্ধুত্বের সম্পর্ক বাবার সঙ্গে কোনও দিনই ছিল না, সে কথা স্পষ্টই জানিয়েছিলেন তিনি।
রণবীর জানিয়েছেন, যখন বাড়িতে থাকতেন, তখনও বাবার সঙ্গে খুব একটা কথা হত না। বন্ধুত্বের সম্পর্ক বাবার সঙ্গে কোনও দিনই ছিল না, সে কথা স্পষ্টই জানিয়েছিলেন তিনি।
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালে মৃত্যু হয়েছে ঋষির। বাবাকে নিয়ে এখন আফসোস হয় রণবীরের। প্রায়ই মনে হয়, যদি বাবার সঙ্গে সম্পর্ক আর একটু ভাল হত! যদি আরও একটু কথা বলতে পারতেন দু’জনে! আরও কিছু সময় কাটাতে পারতেন এক সঙ্গে!
তবে রণবীর একটি কথা বার বার বলে থাকেন। তিনি বলেন, বাবার সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল না। একটু ভয়ও পেতেন। সে কারণে দূরত্ব রেখে চলতেন। একই সঙ্গে তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। এখনও করেন।
রণবীর মনে করেন, দাদু রাজ কপূরের সঙ্গে তাঁর বাবা ঋষির যেমন সম্পর্ক ছিল, ঋষির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও তেমনই ছিল। আসলে ঋষি তেমনই চাইতেন। চাইতেন, নিজের বাবার সঙ্গে তাঁর যে সম্পর্ক ছিল, ছেলের সঙ্গেও তেমনই থাকুক। ছেলেও তাঁকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখুক।
রণবীর জানিয়েছেন, বাবা তাঁকে একটি বিষয় শিখিয়ে গিয়েছেন, মা নীতুকে শর্তহীন ভাবে ভালবাসতে। আর সেই কাজটাই করে চলেছেন রণবীর। বাবা বুঝিয়েছিলে, জীবন এবং বাড়ির কেন্দ্রে রয়েছেন নীতু। তিনি যত ক্ষণ রয়েছেন, তত ক্ষণ তাঁদের জীবনে কোনও বাধা-বিপত্তি আসবে না। বাবার এই শিক্ষা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন রণবীর।
রণবীর একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, বাবার থেকে আরও একটি বিষয় শিখেছেন তিনি। নিজের কাজকে ভালবাসা। রণবীর জানিয়েছেন, তাঁর বাবা নিজের কাজের বিষয়ে অত্যন্ত খুঁতখুঁতে ছিলেন। ছবির পোশাক নিজেই কেনাকাটা করতে যেতেন। সব সময় চরিত্র নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতেন। তিনিও সেটাই করে চলেছেন।
রণবীর সাক্ষাৎকারে এও জানিয়েছেন, বাবার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস পর্যন্ত তাঁর ছিল না। তবে সেই দূরত্ব কিছুটা হলেও মিটেছিল যখন ক্যানসারের চিকিৎসা চলছিল ঋষির। সে সময় বাবা-ছেলে অনেকটাই কাছাকাছি এসেছিলেন। তবু আক্ষেপ রয়েছে, যদি বাবার সঙ্গে আরও একটু সময় কাটানো যেত!
বাবা হিসাবে সেই আক্ষেপ মিটিয়ে নিতে চান রণবীর। চান, একরত্তি রাহাকে আরও সময় দিতে। তাঁর ইচ্ছা, মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অন্য রকম হোক। সেই সম্পর্কই গড়ে তোলার কাজ করছেন রণবীর।