মুনাফার নিরিখে প্রথম ফিল্ম ডাঁহা ফেল। তবে তাতে ঋষি কপূর এবং নীতু সিংহের ছেলেকে বেশ মনে ধরেছিল অনেকের। সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘সাওয়ারিয়া’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লেও তারিফ কুড়িয়েছিলেন রণবীর কপূর। বলিউডে এখনও পর্যন্ত কাটানো বছর পনেরোরে মধ্যে বেশ কয়েকটি নজিরও গড়েছেন তিনি। যদিও তার মধ্যে রণবীরের একটি রেকর্ড গড়তে চাইবেন না কোনও অভিনেতাই।
কী সেই রেকর্ড? তা জানানোর আগে অভিনেতা রণবীরের দিকে আলো ফেলা যাক। ২০০৭ সালে অভিষেকেই নজর কে়ড়েছিলেন রণবীর। সুঠাম দেহ, আয়ত চোখের ‘সাওয়ারিয়া’ রণবীরকে প্রথম দেখাতেই মন দিয়ে ফেলেছিলেন অনেকে। সে ছবিতে ‘যব সে তেরে নয়না’ গানটি তো তুমুল হিট। তবে বক্স অফিসে মোটেও ভালবাসা জোটেনি রণবীরদের।
‘সাওয়ারিয়া’-র পরের ছবিগুলিতে অবশ্য জোরদার ভাবে ফিরেছিলেন রণবীর। ‘বচনা অ্যায় হাসিনো’-র মতো রোম্যান্টিক কমেডিতে রাজ কপূরের নাতিকে আপন করে নিয়েছিল বলিউড। তার পর এসেছিল ‘আজব প্রেম কি গজব কহানি’। সেই স্ল্যাপস্টিক কমেডিতেও সাবলীল রণবীর। ‘ওয়েক আপ সিড’-এ কঙ্কনা সেনশর্মার মতো শক্তিশালী অভিনেতার পাশে কলেজপড়ুয়ার বেড়ে ওঠার কাহিনিতেও দর্শকদের ছুঁয়ে ফেলেছিলেন রণবীর।
দুর্দান্ত নাচিয়ে। অভিনয়েও বেশ নজরকাড়া। কেঠো অভিব্যক্তি নেই। বরং নিষ্পাপ মুখের রণবীর ধীরে ধীরে বলিউডে জায়গা পাকা করতে শুরু করেছিলেন। এক সময় এল তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে ব়ড় হিট— ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’।
উঁচুতে উড়তে শুরু করামাত্রই বক্স অফিসে ফের মুখ থুবড়ে পড়েছিল রণবীরের ছবি। এ বার টানা চারটি ফ্লপ। ‘বেশরম’, ‘রয়’, ‘বম্বে ভেলভেট’ এবং ‘তামাশা’।
২০১৮ সালে ছক পাল্টে ফেলেন রণবীর। এ বার সঞ্জয় দত্তকেই হুবহু পর্দায় তুলে আনলেন তিনি। কেরিয়ারের প্রথম বায়োপিক ‘সঞ্জু’। তাতে নানা বয়সের সঞ্জুবাবার ভূমিকায় বার বার ভোলবদল করলেন রণবীর। দর্শকেরাও খুশি। বক্স অফিসে তাঁদের ভালভাসার ফসল ঘরে তুলেছিলেন প্রযোজকেরা। বলিউডে সবচেয়ে বড় হিট ছবিগুলির মধ্যে আপাতত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ‘সঞ্জু’।
বক্স অফিসে সাফল্যের নিরিখে রণবীরের কেরিয়ারকে নয়া উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল রাজকুমার হিরানি পরিচালিত ‘সঞ্জু’। বলিউডের সবচেয়ে বড় হিট ছবিগুলির মধ্যে আরও একটিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেটিও রাজকুমারের নির্দেশিত।
‘সঞ্জু’ মুক্তির বছর চারেক আগে ‘পিকে’-তে ছোট্ট ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল রণবীরকে। মূলত আমিরের ছবি বলেই তা মনে রেখেছেন দর্শকেরা। তবে বলিউডের প্রথম পাঁচটি সবচেয়ে হিট ছবির তালিকায় তা ঢুকে পড়েছিল। ফলে ঘটনাচক্রে রণবীরই এমন অভিনেতা, যাঁর এ নজির রয়েছে।
আলোর নীচে অন্ধকারও দেখে নিয়েছেন রণবীর। বলিউডের সর্বকালীন ফ্লপের তালিকাতেও রয়েছে তাঁর দু’টি ছবি। ২০১৫ সালে অনুরাগ কাশ্যপের তৈরি ‘বম্বে ভেলভেট’ এবং তার দু’বছর পর ‘জগ্গা জাসুস’। অনুরাগ বসুর ‘জগ্গা... ’-তে আবার সহ-প্রযোজক রণবীর।
‘বক্স অফিস ইন্ডিয়া’ নামে একটি ওয়েবসাইটের দাবি, বলিউডের যে পাঁচটি ছবি তুমুল অসফল, তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আর এক রণবীরের ছবি। কপিল দেবের বায়োপিক ‘৮৩’-এ কপিলবেশী রণবীর সিংহকে একেবারেই মনে ধরেনি দর্শকদের।
‘বম্বে ভেলভেট’ দেখতে মাত্র ২২ লক্ষ ২৪ হাজার দর্শক সিনেমা হলে ঢুকেছিলেন। সে ছবিতে ৭০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছিল প্রযোজকদের। অন্য দিকে, ফ্লপ ছবির তালিকায় ‘জগ্গা জাসুস’ রয়েছে পঞ্চম স্থানে। ৪৯ লক্ষ ৭৪ হাজার তা সিনেমা হলে দেখেছেন। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি।
১১৮ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা ‘বম্বে ভেলভেট’ থেকে আয় হয়েছিল মাত্র ২২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। আর ‘জগ্গা জাসুস’-এর বাজেট ছিল ১৩১ কোটি টাকা। কিন্তু, মাত্র ৫২ কোটি ৬১ লক্ষ টাকাই ফেরত পেয়েছিলেন প্রযোজকেরা।
মোদ্দা কথা হল, কেরিয়ারে তুমুল হিট হোক বা চরম ফ্লপ— দু’তরীতেই পা রেখেছেন রণবীর। সত্যিই, এমন নজির গড়তে নিশ্চয়ই চাইবেন না কোনও অভিনেতা।