রাকেশ শর্মা। ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হিসাবে মহাশূন্যের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। ছোটদের বইয়ের পাতায় তাঁর নাম জ্বলজ্বল করে এখনও।
১৯৮৪ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যৌথ ভাবে মহাকাশ অভিযানে অংশ নিয়েছিল ভারত। প্রথম ভারতীয় হিসাবে সেই অভিযানে মহাকাশে পাড়ি দেন রাকেশ।
ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট হিসাবে কেরিয়ার যখন তুঙ্গে, সেই সময় মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ আসে রাকেশের কাছে। সুযোগ লুফে নিয়েছিলেন ৩৫ বছরের যুবক।
১৯৪৯ সালের ১৩ জানুয়ারি পঞ্জাবের পটিয়ালায় জন্ম রাকেশের। ভারতীয় বায়ুসেনায় পাইলট হিসাবে যোগ দেন ১৯৭০ সালে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পদোন্নতি হয়।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধে রাকেশের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ২১টি কমব্যাট মিশনে মিগ-২১ বিমান চালিয়েছিলেন।
১৯৮৪ সালে সোয়ুজ় টি-১১ নামের সোভিয়েত মহাকাশযানে চড়ে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন রাকেশরা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জন সোভিয়েত নাগরিক।
মহাকাশ অভিযানে রাকেশের সঙ্গী হয়েছিলেন শিপ কমান্ডার ইউরি ম্যালিশেভ এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার গেন্নাদি স্ট্রেকালভ। মহাকাশে টানা ৭ দিন ২১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট কাটিয়ে ফেরেন তাঁরা।
এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে থেকে যথাসম্ভব তথ্য তাঁরা সংগ্রহ করেন। সফল অভিযানের শেষে আবার পৃথিবীর মাটি ছোঁয়ার পর রাকেশ এবং তাঁর মহাকাশচারী সঙ্গীদের নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়।
রাকেশের মহাকাশযাত্রার মাধ্যমে ভারত ১৪তম দেশ হিসাবে মহাকাশে মানুষ পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল। সে সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
রাকেশরা পৃথিবীতে ফিরে আসার পর মস্কোয় একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। তিন মহাকাশচারীর সঙ্গে সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীও।
ইন্দিরা গান্ধী রাকেশকে সকলের সামনেই প্রশ্ন করেছিলেন, মহাশূন্য থেকে ভারতকে কেমন দেখতে লাগে? প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রাকেশ সদর্পে বলেন, ‘‘সারে জহাঁ সে অচ্ছা’’, অর্থাৎ, ‘ভারতই সবচেয়ে সুন্দর’।
রাকেশের এই জবাবের মাধ্যমে ফুটে উঠেছিল তাঁর দেশভক্তি। যা নিয়ে সে সময় ব্যাপক চর্চা হয়। পরবর্তীকালেও ভারতের মহাকাশ গবেষণার প্রসঙ্গ উঠলে প্রথমেই উঠে আসে রাকেশের নাম।
কিন্তু দেশের মহাকাশ গবেষণা চর্চায় এহেন প্রথম সারির ব্যক্তিত্ব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন হারিয়ে গিয়েছেন। দীর্ঘ দিন প্রচারে নেই রাকেশ।
১৯৮৪ সালে মহাকাশে যাওয়ার পর ভারতীয় বায়ুসেনা থেকে ১৯৮৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন রাকেশ। এর পর হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড নামের একটি মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় যোগ দেন প্রধান পাইলট হিসাবে। ২০০১ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন তিনি।
তামিলনাড়ুর কুন্নুরে কাটছে রাকেশের অবসর জীবন। বর্তমানে তাঁর বয়স প্রায় ৭৪। প্রচারের আলোর বাইরে থাকতেই ভালবাসেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী।
স্ত্রী মধুর সঙ্গে কুন্নুরের বাড়িতে নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছেন রাকেশ। তাঁর পুত্র কপিল পেশায় চলচ্চিত্র পরিচালক। কন্যা কৃত্তিকা কাজ করেন মিডিয়া আর্টিস্ট হিসাবে।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সঙ্গেও বেশ কিছু দিন কাজ করেছেন রাকেশ। ইসরোর ‘গগনযান’ প্রকল্পের পরামর্শদাতা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন তিনি। মহাকাশচারী নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বেশ কিছু দিন।
রাকেশের জীবন নিয়ে একটি হিন্দি ছবি তৈরির ভাবনাচিন্তা চলছে। ২০১৮ সাল থেকে সেই ছবির কাজ শুরু হয়েছে। তবে কাজ বিশেষ এগোয়নি। ছবিটির নাম প্রথমে রাখা হয়েছিল ‘স্যালুট’। পরে তা পরিবর্তন করে রাকেশের বায়োপিকের নাম দেওয়া হয় ‘সারে জহাঁ সে অচ্ছা।’
আবার মহাকাশে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রাকেশ। ২০১৮ সালে সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি জানান, সুযোগ পেলে আবার মহাকাশে পাড়ি দিতে পারেন। সে ইচ্ছা রয়েছে ষোলো আনা।