দু’জনে দু’জনের কপালে কপাল ঠেকিয়ে হাসছেন। দেখানেপনা, পরিমিতিবোধের পরোয়া না করা আকর্ণবিস্তৃত হাসি। সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীর হাতখানা শক্ত করে ধরে রেখেছেন রাজকুমার রাও। আরেকটি দৃশ্যে কনের সাজে বাঙালি মেয়ে অন্বিতা পাল ওরফে পর্দার পত্রলেখাকে দেখা যাচ্ছে দু’হাতের তালুতে স্বামীর হাত দু’খানা ধরে থাকতে। লাল বেনারসির পাড়ে লেখা, ‘আমার পরান ভরা ভালবাসা আমি তোমায় সমর্পণ করিলাম’। এঁরাই বলিউডের নয়া বিবাহিত জুটি, আগামী কিছু দিনের জন্য বলিউডের সিনেমাপ্রেমীদের নয়নমণি।
দুই সহকর্মী অভিনেতার প্রেমকে বরাবরই আশকারা দিয়েছে বলিউড। বিয়েতে আনন্দ তো হবেই। আবার বিচ্ছেদ হলে বলিউড দুঃখও পেয়েছে। রাজকুমার-পত্রলেখা অবশ্য ১১ বছর প্রেমের পর সবে এক হয়েছেন। বিয়ের পরে একটি ফেসবুক পোস্টে পত্রলেখা লিখেছেন, ‘আগামী বা ভবিষ্যতে কী হবে তাঁরা জানেন না। তবে আপাতত এই এক সঙ্গে থাকতে পারার আনন্দটাই তাদের কাছে যথেষ্ট।’
অথচ এই রাজকুমারকেই যখন প্রথমবার পর্দায় দেখেছিলেন পত্রলেখা, তখন বেশ অদ্ভুত লেগেছিল তাঁর। ‘লাভ সেক্স অউর ধোকা’ (ছোট করে এলএসডি) ছবিতে আত্মপ্রকাশ রাজকুমারের। ছবিতে তাঁর চরিত্রটি ছিল বেশ অদ্ভুত ধরনের। পত্রলেখার কথায়, ‘‘সিনেমাটা দেখে আমার মনে হয়েছিল রাজকুমার ব্যক্তিগত জীবনেও ওই রকমই অদ্ভুত মানুষ।’’ সোজা কথায় রাজকুমারকে মনে ধরেনি একেবারেই।
রাজকুমারের ক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটা ছিল একেবারে উলটো। একটি টিভি বিজ্ঞাপনে প্রথম পর্দায় পত্রলেখাকে দেখেন রাজকুমার। দেখেই তাঁর মনে হয়েছিল, বিয়ে করলে এই মেয়েকেই করবেন।
অথচ দু’জনে দু’জনকে পর্দায় দেখার অনেক আগে থেকেই চিনতেন। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টটিটিউট অফ ইন্ডিয়া থেকে একসঙ্গে পাশ করেছেন। তবে কলেজের পরিচয় মুখ-চেনার পর্যায়েই আটকে ছিল। প্রেম শুরু হয় দু’জনে একসঙ্গে বলিউডে কাজ শুরু করার পর।
সিটি লাইটসে প্রথম একসঙ্গে কাজ। পত্রলেখা জানিয়েছেন অভিনেতা রাজকুমারের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই এক অদ্ভুত জাদু অনুভূতি হয়েছিল তাঁর। কী রকম সেই অনুভূতি? পত্রলেখার ব্যখ্যা, ‘‘ও একটা ঘূর্ণিঝড়ের মতো সবাইকে একসঙ্গে টেনে নিয়ে এগোত। শুধু নিজে নয় বাকিদেরও ভাল কাজ করতে অনুপ্রাণিত করত ও। এমনই শক্তি ছিল সেই ‘রাজকুমার’ ঝড়ের। ওঁর কাজের প্রতি আবেগ এতটাই বেশি, যে তাতে কিছুটা অসহায় ভাবেই আক্রান্ত হতে বাধ্য হতেন বাকিরা।’’ পত্রলেখা জানিয়েছেন, রাজকুমারকে ও ভাবে কাজ করতে দেখে শ্রদ্ধা জেগেছিল তাঁর।
পত্রলেখা জানিয়েছেন প্রেমেও বরাবর ১০০ শতাংশ দিয়েছেন রাজকুমার। ভালবাসা প্রকাশে রাজকুমারের তরফে কখনও কোনও চ্যুতি দেখেননি তিনি। প্রত্যেক বার আগের থেকে এক ধাপ এগিয়েছেন আর অবাক করে দিয়েছেন পত্রলেখাকে।
কেমন ছিল সেই আবেগের প্রকাশ? পত্রলেখা জানিয়েছেন, একবার তাঁদের দেখা করার কথা ছিল। রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে দেরি হচ্ছিল বলে এয়ারপোর্টে গাড়ি দাঁড় করিয়ে জুহু পর্যন্ত দৌড়ে পৌঁছেছিলেন রাজকুমার। আবার যখন দু’জনেই বলিউডে লড়াই করছেন, তেমন উপার্জন নেই, তখন হঠাৎই এক দিন একটা অত্যন্ত বেশি দামি হাতব্যাগ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন রাজকুমার। যে ব্যাগটির প্রতি পছন্দের কথা কোনও এক দুর্বল মুহূর্তে জানিয়ে ফেলেছিলেন পত্রলেখা। পত্রলেখার কাছে সেই ব্যাগের মূল্য ছিল অসীম। কিন্তু বেশ কয়েক বছর পর লন্ডনে সেই ব্যাগ চুরি যায়। সে কথা জানিয়ে রাজকুমারের কাছে কান্নাকাটি করেছিলেন পত্রলেখা। সে দিনই হোটেলে ফিরে দেখেন তার জন্য একদম এক রকম দেখতে একটি ব্যাগ তাঁর ঘরে রাখা রয়েছে।
এমনই টুকরো টুকরো ভাললাগার একরাশ স্মৃতি জড়িয়ে রাজকুমার-পত্রলেখার ১১ বছরের প্রেমে। যে প্রেম সোমবার পরিণতি পেল। তবে এই প্রেম কি বরাবরই মাখন পেলব? কখনও কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতি আসেনি? সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে এসেছে।
রাজকুমার নাকি প্রেমিকাকে নিয়ে বরাবরই একটু রক্ষণশীল। সেই রক্ষণশীলতা মাত্রা ছাড়িয়েছিল এক বার। নিজেদের বাড়ির লবিতে চিৎকার করে ঝগড়া করতে দেখা গিয়েছিল দু’জনকে। বলিউড ধরে নিয়েছিল ব্রেক আপ হতে চলেছে পত্রলেখা রাজকুমারের প্রেমে। সেটা ২০১৬ সাল।
‘লাভ গেমস’ নামে একটি শরীরী প্রেমের ছবিতে অভিনয় করেছিলেন পত্রলেখা। সেই ছবিতে অনেকগুলি সাহসী দৃশ্য ছিল। শরীরী প্রেমের ছবি বলে কথা। বিছানার দৃশ্যও ছিল। সংবাদ মাধ্যমের খবর, পত্রলেখার ওই সব দৃশ্যে অভিনয় পছন্দ হয়নি রাজকুমারের। অশান্তির কারণ সেটাই।
তার পর কী ভাবে দু’জনের ঝগড়া মিটল সে গল্প জানা যায়নি। তবে পত্রলেখাকে আর কোনও শরীরী প্রেমের ছবিতে দেখা যায়নি তারপর থেকে।