বয়স ৭১। কিন্তু, কে বলে তিনি বৃদ্ধ হলেন? তিনি তো রোডরোলার দিয়ে নিজের জামাকাপড় ইস্ত্রি করেন! ৭১-এর ‘অতিমানব’ রজনীকান্তকে নিয়ে এমন বহু মিম-ই শোনান রসিকজনেরা। সে তালিকায় নয়া সংযোজন— রজনীকান্তকে ছুঁয়ে ফেলায় কোয়রান্টিনে চলে গিয়েছে ওমিক্রন।
এটিএম থেকে টাকা তুলতে আমার-আপনার এটিএম কার্ড প্রয়োজন হয়। তবে রজনীর ক্ষেত্রে তাঁর ভিজিটিং কার্ডই যথেষ্ট। এমন মজার কথা শুনিয়ে রজনীর প্রসঙ্গ টেনে তোলেন অনেকে। তবে রজনীর এই ‘অতিমানব’ ভাবমূর্তি এক দিনে তৈরি হয়নি। রবিবার দক্ষিণী ছবির মেগাস্টার রজনীর জন্মদিনে ফিরে দেখা তাঁর যাত্রাপথ।
এক সময় রুজি রোজগারের জন্য কুলিগিরি থেকে বাস কন্ডাক্টরি— সবই করতে হয়েছে আজকের ‘থালাইভা’-কে। ৫০০ কোটির মালিক রজনী এক একটি ছবির জন্য নাকি ১০০ কোটি টাকাও পারিশ্রমিক নেন। এ হেন রজনীর সম্পর্কে চালু কথা, আম জনতা হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট করে আর রজনী তা করেন ক্যালকুলেটরে!
বেঙ্গালুরুর এক মরাঠি পরিবারে জন্মেছিলেন রজনীকান্ত অর্থাৎ শিবাজিরাও গায়কোয়াড়। সালটা ১৯৫০। সংসারের কাজে সারা দিন ব্যস্ত থাকতেন তাঁর মা। বাবা রামোজিরাও গায়কো়য়াড় ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল।
ছোট থেকে অভাবের সংসার দেখেছেন রজনী। ১৯৫৬ সালে তাঁর বাবা রামোজিরাও গায়কোয়াড় চাকরি থেকে অবসর নেন। সে সময় রজনী সবে ছ’বছরের। বাবার পেনশনের টাকায় কোনও মতে তাঁদের সংসার চলত।
কষ্টের মধ্যেও দুই দাদা এবং এক বোনকে নিয়ে রজনীর ছোটবেলা কাটছিল। ফের বিপর্যয় ন’বছর বয়সে। ওই বয়সে মা-কে হারান রজনী।
মা মারা যাওয়ার পর বেঙ্গালুরু শহর ছেড়ে শহরতলির হনুমন্থনগর বস্তিতে বসবাস করতে শুরু করেন রজনীরা। তবে পড়াশোনার মাঝে খেলাধুলোয় ফাঁকি ছিল না রজনীর। মেধাবী বলে পরিচিত রজনী ছেলেবেলায় ফুটবল-ক্রিকেটের পাশাপাশি বাস্কেটবলেও বেশ আগ্রহ ছিল। রজনীর স্কুলজীবনকে ঘিরেও একটি মিম ছড়িয়েছে নেটমাধ্যমে। এক বার রজনী স্কুলে যাননি। সেই দিনটিকেই নাকি আমরা রবিবার বলে জানি।
ছোটবেলায় অভিনয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না রজনীর। রজনীকে রামকৃষ্ণ মঠে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর দাদা। ওই মঠেই একটি নাটকে একলব্যের ভূমিকায় অভিনয়ের হাতেখড়ি রজনীর। ছোটবেলায় দুষ্টুমিতেও কম যেতেন না। পরে অবশ্য তাঁর নামেই বেশ ‘দুষ্টু’ মিম ছড়িয়েছিল। এক বার নাকি রজনীকান্ত একটি বাচ্চার সামনে তাঁর বান্ধবীকে চুমু খেয়েছিলেন। ওই বাচ্চাটিকেই আমরা ইমরান হাশমি বলে চিনি!
টানাটানির সংসারের অর্থ রোজগারই লক্ষ্য ছিল রজনীর। স্কুলের গণ্ডি পার করার পর কখনও কুলিগিরি তো কখনও আবার কাঠের মিস্ত্রির কাজ করেছেন তিনি। এক সময় তো বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিএমটিসি)-এর বাস কনডাক্টর হিসাবে কাজও করেছেন ‘থালাইভা’।
কন্ডাক্টর হিসাবে যাত্রীদের মধ্যে কম জনপ্রিয় ছিলেন না রজনী। বাসে ওঠার পর যাত্রীদের থেকে টিকিট চাওয়ার সময় নিজের অদ্ভুত ভঙ্গিমায় তাঁদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতেন তিনি।
চাকরির ফাঁকেই পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন রজনী। এক সময় তাঁকে একটি নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন কন্নড় ভাষার নাট্যকার টোপি মুনিয়াপ্পা। সে সময়ই তৎকালীন মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে হাতেকলমে অভিনয় শেখা শুরু করেন রজনী।
ফিল্ম ইনস্টিটিউটেই তামিল ফিল্ম পরিচালক কে বালাচন্দ্রের নজরে পড়েন রজনী। তাঁর পরামর্শেই তামিল ভাষা শেখেন। ১৯৭৫ সালে বালাচন্দ্রের ছবি ‘অপূর্ব রাগঙ্গল’-এ প্রথম অভিনয়। জাতীয় পুরস্কারজয়ী সে ছবির পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রজনীকে। দক্ষিণী সিনেমার জগতে তো বটেই, বলিউডেও কম ‘ভূমিকম্প’ ঘটাননি তিনি। তা ভূমিকম্প কেন হয় জানেন? সে সময় রজনীর মোবাইল নাকি ‘ভাইব্রেশন মোড’-এ থাকে!
নিজের কেরিয়ারে বহু সম্মান পেয়েছেন রজনী। ২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ এবং ২০১৬-তে ‘পদ্মবিভূষণ’-এ সম্মানিত। পেয়েছেন চোখ কপালে তোলার মতো পারিশ্রমিকও। ২০০৭ সালে ‘শিবাজি’ ছবিতে ২৬ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নেন তিনি। সে বছর পারিশ্রমিকের নিরিখে গোটা বিশ্বে প্রথম ছিলেন জ্যাকি চ্যান। দ্বিতীয় স্থানে এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেতা ছিলেন রজনীকান্ত!