দোকানের খাবার খেয়ে তার প্যাকেটটি রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলেন কেউ। খিদে মেটাতে সেই কাগজের প্যাকেটটিই চিবিয়ে খাচ্ছিল একটি পথকুকুর।
বাসে করে যাওয়ার সময় সেই ক্ষুধাতুর কুকুরটিকে চোখে পড়েছিল রজনী শেট্টির। তবে অন্যদের মতো মুখ ফিরিয়ে নেননি তিনি।
কুকুরটির মুখে খাবার তুলে দিতে তখনই বাস থেকে নেমে পড়েছিলেন রজনী। সে ছিল প্রায় ১৫ বছর আগেকার কথা। তার পর থেকে প্রতি দিনই মেঙ্গালুরুর পথকুকুরদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন রজনী।
বছর ১৫ আগে সেই পথকুকুরের জন্য বাস থেকে নেমে রাস্তার দোকান থেকে অমলেট কিনেছিলেন রজনী। তার পর পরম যত্নে তাকে নিজের হাতে খাইয়েছিলেন।
মেঙ্গালুরুর বাসিন্দাদের ঘরে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান রজনী। তিন মেয়ে, স্বামীকে নিয়ে টানাটানির সংসারে হাজারো চাহিদা মিটিয়েও পথকুকুরদের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করে চলেছেন তিনি।
একটি-দু’টি নয়, প্রতি দিন ৮০০ পথকুকুরের জন্য খাবার রান্না করে তাদের খাওয়ান রজনী। এ কাজে তাঁকে সঙ্গ দেন তাঁর স্বামী-সহ গোটা পরিবার।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রজনী জানিয়েছেন তাঁর নিত্য দিনের জীবসেবার কথা। তিনি বলেন, ‘‘৮০০ কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য প্রতি দিন ৬০ কেজির বেশি মাংস-ভাত রান্না করি।’’
সংসারের নানা ঝক্কি সামলেও পথকুকুরদের জন্য খাবার তৈরির সময় বার করে নিয়েছেন রজনী। এ কাজ করতে করতেই বছর পনেরো কেটে গিয়েছে।
রজনীর কথায়, ‘‘প্রতি দিন রাত ৮টার পর রাস্তার কুকুরদের খাবার দিতে বার হই। যাতে রাস্তার গাড়িঘোড়ার জন্য কুকুরদের কোনও সমস্যা না হয়। এ কাজে আমার স্বামী আর পুরো পরিবার তো বটেই, এমনকি আশপাশের লোকজনও সাহায্য করে।’’
কুকুরদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের অনেককে নিজের বাড়িতে তুলে এনে চিকিৎসার বন্দোবস্তও করেন রজনী। নিজেই তাদের ক্ষতে ওষুধ লাগিয়ে দেন। রজনী বলেন, ‘‘কোনও কুকুরের চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। তাদের চিকিৎসা করি।’’
বছরের পর বছর ধরে অন্তরালে থাকা রজনীর এই কাহিনি বহু শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ পর্যন্ত দু’হাজার জীবজন্তুকে উদ্ধার করেছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমে রজনী বলেন, ‘‘ওই পথকুকুরদের মুখে কিছুটা খাবার তুলে দিলেই দেখবেন ওরা আপনাকে নিঃশর্ত ভালবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছে। ওদের ভালবাসায় যে আনন্দ পাই, সেটাই চাই এ জীবনে।’’
পথকুকুরদের খাবার জোগানোর পাশাপাশি কুকুর-বেড়াল, খরগোশ-সহ বহু পশুপাখিকেও উদ্ধার করেছেন রজনী।