ষাটের দশকে বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন রাজেশ খন্না। প্রিয়জনের কাছে ‘কাকা’ হিসাবে অধিক পরিচিত রাজেশ কম সময়ের মধ্যেই হিন্দি চলচ্চিত্রজগতে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পারিশ্রমিকও লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি তাঁর এতই নিষ্ঠা ছিল যে, জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেও নিজের পারিশ্রমিক ৮৫ শতাংশ কমাতে রাজি হয়েছিলেন রাজেশ।
রাজেশের পর বলিউডে কেরিয়ার শুরু করেন বলিপাড়ার ‘শাহেনশা’ অমিতাভ বচ্চন। অমিতাভ যখন বলিউডের নবাগত, তখন রাজেশ তাঁর কেরিয়ারের মধ্যগগনে। তবে সত্তরের দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ছবি এই দুই সুপারস্টারের অভিনয়কে একই সুতোয় বেঁধেছিল।
১৯৭১ সালে হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘আনন্দ’। এই ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বাঙালি সুরকার সলিল চৌধুরী। রাজেশের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় অমিতাভকে। ‘বাবুমশাই, জ়িন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে, লম্বি নেহি’— ‘আনন্দ’ ছবির এই সংলাপ আজও লোকের মুখে মুখে ঘোরে।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘আনন্দ’ ছবিতে আনন্দের চরিত্রের জন্য ছবিনির্মাতাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন না রাজেশ। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ধর্মেন্দ্রকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, শুটিংয়ের জন্য সময় বার করতে পারছিলেন না ধর্মেন্দ্র। তাই ‘আনন্দ’ ছবিতে অভিনয়ের ইচ্ছা থাকলেও ছবিনির্মাতাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র।
ধর্মেন্দ্র যে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সে কথা কানে গিয়েছিল রাজেশের। শোনা যায়, এই কথা জানার পর দেরি না করে ‘আনন্দ’ ছবির পরিচালক হৃষীকেশের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাজেশ।
বলিউডের গুঞ্জন, ধর্মেন্দ্রের পরেও বলিপাড়ার কয়েক জন অভিনেতাকে আনন্দের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সকলেই কোনও না কোনও কারণে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। হৃষীকেশের কাছে গিয়ে সেই চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন রাজেশ।
রাজেশ ছবির শুটিং শুরুর আগেই আন্দাজ করে ফেলেছিলেন যে, ‘আনন্দ’ ছবিটি দর্শকের মনে সাড়া ফেলবে। তাই তিনি মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। হৃষীকেশের কাছেও বার বার সেই অনুরোধ করতে থাকেন তিনি।
কিন্তু রাজেশের অনুরোধ রাখা সহজ ছিল না হৃষীকেশের কাছে। সেই সময় রাজেশ খ্যাতনামী অভিনেতা। তাঁর পারিশ্রমিকও আকাশছোঁয়া। রাজেশের পারিশ্রমিক মেটানোর পাশাপাশি ছবির বাজেট নিয়েও চিন্তিত ছিলেন পরিচালক। অর্থ নিয়ে যে পরে সমস্যা হতে পারে তা ভাবছিলেন তিনি। তাই রাজেশের কাছে কিছু শর্ত রেখেছিলেন হৃষীকেশ।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, সেই সময় ছবিপ্রতি অভিনয় করতে সাত লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক আদায় করতেন রাজেশ। কিন্তু হৃষীকেশের পক্ষে অত পারিশ্রমিক দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই রাজেশকে কম পারিশ্রমিকে অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন পরিচালক।
বলিউডের জনশ্রুতি, রাজেশকে এক লক্ষ টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ‘আনন্দ’ ছবিতে অভিনয়ের শর্ত দিয়েছিলেন হৃষীকেশ। পরিচালকের এই শর্তে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা। এক ধাক্কায় নিজের পারিশ্রমিক ৮৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
পারিশ্রমিক কমানোর পাশাপাশি আরও দু’টি শর্তে রাজেশকে বেঁধে দিয়েছিলেন হৃষীকেশ। তিনি রাজেশকে জানিয়েছিলেন, শুটিংয়ের জন্য তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। রাজেশকে যথাযথ সময় দিতে হবে। সেই শর্তেও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন রাজেশ।
পরিচালকের তৃতীয় শর্ত ছিল, শুটিংয়ের সময় রাজেশ যেন ঘড়ি ধরে সেটে পৌঁছে যান। তাঁর জন্য শুটিং শুরু করতে যেন দেরি না হয়ে যায়। পরিচালকের তৃতীয় শর্তও মুখ বুজে মেনে নিয়েছিলেন রাজেশ। আসলে, তিনি ‘আনন্দ’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ চেয়েছিলেন মাত্র।
পরিচালকের তিন শর্ত মেনে কাজ শুরু করেছিলেন রাজেশ। ১৯৭১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর ‘আনন্দ’ ছবির প্রশংসা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। রাজেশ এবং অমিতাভকে একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে দেখে দর্শকের মধ্যে মুগ্ধতা দেখা যায়।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘আনন্দ’ ছবি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ৩০ লক্ষ টাকা। মুক্তির পর বক্স অফিস থেকে ৯৮ লক্ষ টাকা অর্জন করে ছবিটি। ৬৮ লক্ষ টাকা লাভ করে বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ করে ‘আনন্দ’।