Rahul Gandhi Disqualification

ভারত জোড়ার যাত্রাতেই সাংসদ রাহুলের যাত্রাভঙ্গ! শুরু কাশ্মীরে, শেষ কি সত্যিই হল দিল্লিতে?

কিছুটা এগিয়ে ভাবলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাহুলের কংগ্রেসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করাও হবে না। এমনকি, তার পরের লোকসভা ভোটেও নয়। যদি না পাশা পাল্টায়।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৭:৫০
Share:
০১ ১৮

এক মাসও হয়নি লন্ডনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মাইক খারাপ হয়ে যাওয়া দেখে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘‘ভারতীয় সংসদে অবশ্য মাইকটা খারাপ হয়ে যায়নি। সেখানে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ সেই বক্তৃতার ঠিক ২৩ দিন পর লোকসভায় রাহুলের আসনের সামনে থাকা মাইকটি সত্যিই বন্ধ করা হল।

০২ ১৮

কংগ্রেস সাংসদ তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর পুত্র এবং দেশের একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতি রাহুলের বিরুদ্ধে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করার অভিযোগ উঠছে। যার জেরে তাঁকে দু’বছরের জেলের সাজা শুনিয়েছে আদালত। ফলত খারিজ করা হয়েছে রাহুলের সাংসদ পদ। শুক্রবার, ২৪ মার্চের পর আগামী অন্তত ছ’বছর রাহুলকে সংসদের নিম্নকক্ষ বা লোকসভায় দেখা যাবে না! যদি না উচ্চ আদালতে নিম্ন আদালতের রায়ের কোনও পরিবর্তন হয়।

Advertisement
০৩ ১৮

সংসদের নিয়ম মানলে আগামী অন্তত ছ’বছর লোকসভার ভোটেও দাঁড়াতে পারবেন না কংগ্রেস নেতা রাহুল। কিছুটা এগিয়ে ভাবলে সে ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাহুলের কংগ্রেসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করাও হবে না। এমনকি, তার পরের লোকসভা ভোটেও নয়। যদি না পাশা পাল্টায়। নিয়মে কোনও বদল ঘটে, তবে কেন্দ্রের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী হিসাবেও বেছে নেওয়া যাবে না রাহুলকে! কিন্তু সে সব অনেক পরের কথা, কিছুটা কল্পনার কথাও।

০৪ ১৮

আপাতত বিরোধীরা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অবমাননার মামলায় রাহুলের যে শাস্তি হল, তা যত না শাস্তি, তার চেয়ে অনেক বেশি ‘গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ’। সংসদে রাহুলের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা। যা চার বছর আগেই বুঝতে পেরেছিলেন রাহুল। কিন্তু পাত্তা দেননি।

০৫ ১৮

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগের একটি প্রচারসভায় কর্নাটকে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পদবি সংক্রান্ত মন্তব্যটি করেছিলেন রাহুল। যা থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। রাহুল বলেছিলেন, ‘‘সব চোরেদের পদবি ‘মোদী’ হয় কেন?’’

০৬ ১৮

রাহুল অবশ্য শুধু ওই একটিই কথা বলেননি। আইপিএল কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ললিত মোদী, ব্যাঙ্ক-ঋণ মামলায় ‘পলাতক’ নীরব মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তুলনা টেনে যা বলেছিলেন তার বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘‘ললিত মোদী, নীরব মোদী, নরেন্দ্র মোদী... আমি ভাবছি এঁদের সবার নামের একই পদবি কেন? সব চোরেদেরই পদবি মোদী হয় কেন?’’

০৭ ১৮

রাহুলের এই মন্তব্যের বিরুদ্ধেই আদালতে মামলা করেছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেশ মোদী। রাহুল ‘মোদী’ সম্প্রদায়কে অপমান করেছেন অভিযোগ করেই রাহুলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় ‘পদবি অবমাননার’ অপরাধমূলক মানহানির মামলা করেছিলেন পূর্ণেশ।

০৮ ১৮

রাহুল তখন বলেছিলেন, ‘‘এ সব আসলে তাঁর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা।’’ মামলাকে গুরুত্ব দিতে চাননি তিনি।’’ যদিও মামলাটি চলছিল গুজরাতের আদালতে।

০৯ ১৮

এর পর লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের হার। বিজেপির দ্বিতীয় বার ‘মোদী ২.০’ সরকার গঠন। কংগ্রেসের পর পর হারের দায় নিয়ে রাহুলের কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর মতো অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। তবে রাহুল আর কংগ্রেস নেতা হিসাবে সে ভাবে সক্রিয় হননি। টুইটারে আক্রমণ আর মাঝেসাঝে গোনাগুনতি জনসভাতেই নিজেকে আটকে রেখেছিলেন। কিন্তু আচমকাই সেই ধারায় একটা বদল এল ২০২২ সালে।

১০ ১৮

রাহুল হঠাৎই ঠিক করলেন দলের জন্য তিনি ভারত ভ্রমণ করবেন। কংগ্রেসের জন্য জনমত সংগ্রহ করবেন। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত পৌঁছবে তাঁর যাত্রা। যার লক্ষ্য ভারতের মানুষকে এক সূত্রে গাঁথা। শাসক বিজেপির অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষকে জোটবদ্ধ করার জন্য ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’।

১১ ১৮

সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত হাঁটতে শুরু করেন রাহুল। তাঁর সঙ্গে কখনও হাঁটেন বোন প্রিয়াঙ্কা, মা সনিয়া, দলমত নির্বিশেষে বিজেপি বিরোধীরাও। এমনকি স্বরা ভাস্করের মতো অভিনেত্রী তথা আন্দোলন কর্মীদেরও দেখা যায় রাহুলের সঙ্গে হাঁটতে।

১২ ১৮

সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সেই যাত্রায় ১৪টি রাজ্যের রাস্তায় হাঁটেন রাহুল। তার মধ্যে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য যেমন ছিল, তেমনই ছিল উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যও। রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা নজর টানে, টানে সমর্থনও। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলতে শুরু করেন, ভারত জোড়ো কিছুটা হলেও কংগ্রেসের ভাবমূর্তিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

১৩ ১৮

৩০ জানুয়ারি শেষ হয় যাত্রা। তার ঠিক এক মাস পর মার্চের শুরুতে রাহুল যান লন্ডনে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতাও দেন। সেখানেই উঠে আসে ‘মাইক প্রসঙ্গ’। বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই রাহুলকে ভারতে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের কথা বলতে শোনা যায়। রাহুলের সেই মন্তব্য নিয়ে উত্তাল হয় সংসদ। গেরুয়া শিবির বলতে থাকে, যেখানে বিদেশে ভারতের ভাবমূর্তি শোধনের কাজে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, সেখানে দেশ নিয়ে এত বড় কথা!

১৪ ১৮

রাহুলের বিরুদ্ধে উত্তাল হয় সংসদ। বিজেপি সাংসদেরা লাগাতার বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন রাহুলের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবিতে। ঘটনাটিকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছিলেন রাজনীতির কারবারিরা। যদিও রাহুল ক্ষমা চাননি। উল্টে তিনি জানিয়ে দেন, লন্ডনে তিনি ভারত বিরোধী কিছুই বলেননি।

১৫ ১৮

এর পরেই রাহুলের বিরুদ্ধে গুজরাতের আদালতে মামলা হঠাৎ সক্রিয় হয়। বৃহস্পতিবার ওই মামলায় ‘মোদী’ পদবি তুলে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে গুজরাতে সুরত জেলা আদালত রাহুলকে ২ বছর জেলের সাজা দেয়।

১৬ ১৮

সুরত জেলা আদালতের বিচারক এইচএইচ বর্মা রাহুলকে ১০ হাজার টাকার জামিনে মুক্তি দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে উচ্চতর আদালতে আপিল করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত করার উপর কোনও স্থগিতাদেশ দেননি তিনি।

১৭ ১৮

জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাংসদ-বিধায়কের দু’বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলে তৎক্ষণাৎ সাংসদ বা বিধায়ক পদ চলে যাবে। শুধু তা-ই নয় ২০১৩ সালের সুপ্রিম কোর্টে চলা এই ধরনের একটি মামলায় সাংসদ-বিধায়ক দোষী সাব্যস্ত হলে তাতে স্থগিতাদেশ পাওয়ার জন্য আগে যে তিন মাস সময় দেওয়া হত, তা-ও খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।

১৮ ১৮

রাহুলকে মোদী সম্প্রদায় অবমাননা মামলায় ঠিক দু’বছরেরই সাজা দেওয়ায় তাঁর সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। অনেকেই বলছেন, ভারত জোড়ার যাত্রাতেই সাংসদ রাহুলের যাত্রাভঙ্গ হল! যার শুরু কাশ্মীরে, সত্যিই কি শেষ হল দিল্লিতে? উত্তর ভবিষ্যৎই দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement