আপাতদৃষ্টিতে কয়েকটি সংখ্যা। কিন্তু এই এক একটি সংখ্যার গভীরেই লুকিয়ে আছে ছোট-বড় কাহিনি। চরিত্রের বৈশিষ্ট্যও। ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের অনেকটা জুড়ে কখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, কখনও গুছিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল এই সংখ্যাগুলিই। কখনও তা তাঁর গরিমার কারণ হয়েছে, কখনও তা বিব্রত করেছে রাজপরিবারকে। সেই সংখ্যা দিয়েই গেঁথে নেওয়া যাক এক অন্য রানি-কাহিনি।
শূন্য— রানির জীবনেও কি ‘শূন্য’ থাকতে পারে! যে যা-ই বলুক, দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনে এমন অনেক শূন্য ছিল। যেমন রানি কখনও স্কুলে পড়াশোনা করেননি। প্রথাগত স্কুল-কলেজ-বিশ্ব বিদ্যালয়ের ডিগ্রি ছিল না তাঁর। ফলে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাসরুমে খুনসুটির অভিজ্ঞতা? শূন্য।
কখনও পাসপোর্টও ছিল না রানির। কী করেই বা হবে। দেশসুদ্ধ লোকের পাসপোর্টের দায়িত্ব তো তাঁরই। ব্রিটেনের দেশবাসীর পাসপোর্টে তিনিই সরকারের কাছে আর্জি জানান, ধারককে যেন ভিন্দেশে সফরের যাবতীয় অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর হয়ে এ কথা বলবেন? তাই রানির পাসপোর্টের সংখ্যাও শূন্য। একই কারণে ছিল না তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স এমনকি গাড়ির নম্বরপ্লেটও।
আরও একটি ‘শূন্য’তার কথা না বললেই নয়। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রান্না করার অভিজ্ঞতাও শূন্য। তাঁকে রেঁধেবেড়ে খাওয়ানোর লোকের কমতি নেই। কিন্তু সেই সুযোগ থাকলেও রাজপরিবারের বহু সদস্য নিজে হাতে রান্না করতে রান্নাঘরে ঢোকেন। বাকিংহামের রাঁধুনিরা বহু বার বলেছেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপই এই দলে ছিলেন। ফিলিপ বরাবর নিজের এবং রানির জন্য ওমলেট নিজে হাতেই তৈরি করতেন। কিন্তু রানির ব্যাপারে এমন দাবি করতে পারবে না কেউ । রানি রান্না করা তো দূর রান্নাঘরে ঢোকার ইচ্ছেও প্রকাশ করেননি কখনও।
এ তো গেল রান্নার কথা। একটি অতি জনপ্রিয় পদের স্বাদও আজীবন নেননি রানি। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পিৎজা খাওয়ার অভিজ্ঞতাও শূন্য। বাকিংহামের এক রাঁধুনিই বিষয়টি ফাঁস করেছিলেন এক সাক্ষাৎকারে। তিনি জানিয়েছিলেন, রানিকে তিনি কখনও পিৎজা বানিয়ে দেননি। রানিমার কাছ থেকে তেমন অনুরোধও কখনও আসেনি তাঁর কাছে।
এক— তিনি ব্রিটেনের ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন। সেই অর্থে তিনিই ছিলেন একমেবাদ্বিতীয়ম। আবার ব্রিটেনের সবচেয়ে বেশি দিন সিংহাসনে থাকা রাজপরিবারের সদস্যও তিনিই। তাতেও এক নম্বর। এক সংখ্যার সঙ্গে নিশ্চয়ই আরও অনেক ঘটনা জড়িয়ে আছে রানির ব্যক্তিগত জীবনে। তবে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ্যে আনা পছন্দ করতেন না। টিভির ক্যামেরার সামনে রানি যদিও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন এনেছিলেন। তবে সে-ও ওই এক বারই।
দুই— জন্মদিন সবার একটিই হয়। তবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিন দু’টি। একটি তাঁর আসল জন্মদিন, ২১ এপ্রিল। অন্যটি পালন করা হয় জুন মাসের কোনও এক সপ্তাহান্তে। ওই সময় ব্রিটেনের আবহাওয়া থাকে ঝলমলে। রানির জন্মদিন দেশজুড়ে পালন করার উপযোগী দিন দেখেই ঠিক হয় জন্মদিন। সেনা প্যারে়ডের সঙ্গে পালন করা হয় ‘ট্রুপিং দ্য কালার’।
তিন— দ্বিতীয় এলিজাবেথই প্রথম শাসনকর্তা যিনি নিজের তিন সন্তানের বিবাহবিচ্ছেদ দেখেছেন।
চার— ঘোড়ায় চড়া পছন্দ করতেন রানি। অনেক বৃদ্ধ বয়সেও তাঁকে ঘোড়ায় চড়ে বাকিংহামের বাগানে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। তবে ঘোড়ায় চড়ার সেই শখের শুরু রানির চার বছর বয়সে। দাদু, ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জ ছোট্ট লিলিবেথকে তাঁর প্রথম ঘোড়া উপহার দিয়েছিলেন। হবু রানি আদর করে সেই ঘোড়ার নাম রেখেছিলেন ‘পেগি’।
ছয়— দিনে ছ’বার সুরা পান করতেন রানি। এই নিয়ম বদলায়নি কখনও। মধ্যাহ্ণভোজের আগে জিন এবং ডাবোনেট। মধ্যাহ্ণভোজের সঙ্গে ওয়াইন। সন্ধ্যায় একটি ড্রাই মার্টিনি এবং রাতের খাবারের আগে একটি শ্যাম্পেন।
ছয়— ইংল্যান্ড এবং ব্রিটেনের শাসক হিসেবে তাঁর আগে দায়িত্ব পালন করেছেন আরও ছ’ জন রানি।
সাত— তিনি ইংল্যান্ডের সপ্তম রানি। আবার তাঁর শাসনকালে সাত জন ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপও ছিলেন ইংল্যান্ডের চার্চে। রানির প্রথম পোট্রেটও আঁকা হয়েছিল তাঁর সাত বছর বয়সে।
১৩— মাত্র ১৩ বছর বয়সেই প্রেমে প়ড়েন রানি। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ভ্রাতুষ্পুত্র ফিলিপের। ১৩ বছর বয়স থেকেই দু’জনে দু’জনকে চিঠি লিখতেও শুরু করেন।
১৫— রানির শাসনকালে কাজ করেছেন ব্রিটেনের ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম জন ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। সদ্য দায়িত্ব নেওয়া লিজ ট্রাস এই তালিকায় শেষতম।
২৫— বাবা ব্রিটেনের রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটেনের সিংহাসনে বসেছিলেন রানি।
৩৯— রানির আগে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেছেন ৩৯ জন শাসক।
৭৩— ফিলিপের সঙ্গে তাঁর বিবাহিত জীবন ৭৩ বছরের।
১১৭— মোট ১১৭টি দেশ ঘুরেছেন রানি। ১৭ লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে তাঁর বিশ্বসফর।