কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হতে আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। মনে করা হচ্ছে দেশ-বিদেশ থেকে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে কাতারে ভিড় জমাবেন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। আর সেই কারণেই আরও সতর্ক হচ্ছে ফিফা এবং কাতারের প্রশাসন। ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালীন কাতার যেন ‘বেআইনি’ কাজের আঁতুড়ঘরে পরিণত না হয়, তার দিকেও বিশেষ নজর রয়েছে কর্তৃপক্ষের। আর সেই কারণে আগে থেকেই বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য কাতারে প্রবেশ করতে চলা ফুটবলপ্রেমীদের যেন অন্য কিছুর প্রতি ‘প্রেম’ বা আসক্তি না তৈরি হয়, তার জন্য কড়া নিয়মও জারি করা হয়েছে। আর সেই বিধি মেনে না চললে দীর্ঘ দিন কাতারের জেলেও থাকতে হতে পারে ফুটবলপ্রেমীদের।
উদ্বেগ তৈরি হয়েছে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে আসা মহিলা এবং সমকামীদের নিয়েও। কাতারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বাদ দিয়ে যৌনমিলন এবং সমকামী সম্পর্ক নিষিদ্ধ। তাঁদের যেন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি না হতে হয়, তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে কাতারের পুলিশ।
পাশাপাশি ফুটবল দেখতে আসা মানুষদের জন্যও কর্তৃপক্ষের তরফে আরও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কাতারের প্রশাসন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বেশ কিছু জিনিসপত্রও নিয়ে কাতারে প্রবেশ করতে পারবেন না বিশ্বকাপ দর্শকেরা। তালিকায় রয়েছে কী কী?
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, শুল্কমুক্ত মদ নিয়ে কোনও ভাবেই কাতারে প্রবেশ করা যাবে না।
কোনও ফুটবলপ্রেমী আদর পুতুল (সেক্স টয়) নিয়ে কাতারে প্রবেশ করলে তাঁদেরও কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে কাতারের সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
কাতার বিমানবন্দরে প্রবেশ করা যাবে না শূকরের মাংস নিয়েও। শূকরের মাংস নিয়ে কাতারে প্রবেশ করলেই কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে আগতদের।
সে দেশে এক রাতের ‘অবৈধ’ যৌনমিলনের (ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড) জন্য হতে পারে সাত বছরের জেল। বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই দেখা যায় ম্যাচ শেষে রাতভর পার্টি। কিন্তু কাতারে তা নিষিদ্ধ। সমর্থকদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছে, এই ধরনের কোনও আশা যেন না রাখা হয় এ বারের বিশ্বকাপে।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, স্বামী-স্ত্রী জুটি না হলে বিশ্বকাপ দেখতে এসে যৌনমিলন করা যাবে না। এই প্রতিযোগিতায় ‘এক রাতের যৌনমিলন’ থাকবে না। কোনও পার্টি করা যাবে না। নিয়ম না মানলে জেল হতে পারে। বিশ্বকাপে প্রথম বার এমন ভাবে যৌনমিলন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। সমর্থকদের সতর্ক থাকতে হবে।
পর্নোগ্রাফি বানানো এবং জনসমক্ষে পর্নোগ্রাফি দেখার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কাতারের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, যাতে ফুটবল দেখতে আসা মানুষেরা স্থানীয় ঐতিহ্য ও রীতিনীতিকে সম্মান করেন। প্রকাশ্যে যৌনকর্ম এবং মাতলামি না করা এবং অশালীন পোশাক না পরার জন্যেও আবেদন জানানো হয়েছে। যে কোনও ধরনের ধর্মীয় বই নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বিমানবন্দরে জিনিসপত্র তল্লাশি করার সময় প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনও ওষুধ পাওয়া গেলেও হাজতবাস করতে হতে পারে আগত ব্যক্তিদের।
কাতারে নির্দিষ্ট কিছু হোটেল এবং সমুদ্রের ধারে একটি কিছু জায়গা ছাড়া মদ্যপানে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। তাই এই বিষয়টিও বিশ্বকাপ দেখতে আসা দর্শকদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে। ওই সময় কাতারে বিক্রি হওয়া মদের দাম বাড়ানো হতে পারে বলেও সূত্রের খবর।
জুয়া খেলার জন্য ধরা পড়লেও কারাবাস হতে পারে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। কাতারে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তারক্ষীদের সংখ্যা অনেক পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে।
ফুটবলপ্রেমীরা কোনও অসুবিধার সম্মুখীন যাতে না হন, সেই দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছে প্রশাসন। পাশাপাশি স্থানীয়দেরও এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
২০ নভেম্বর থেকে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হতে চলেছে।
উল্লেখযোগ্য যে, কাতার হল পশ্চিম এশিয়ার প্রথম দেশ, যারা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করছে।