যত দিন গড়াচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিষয়ে তত নতুন তথ্য উঠে আসছে। অভিযোগ, এই যুদ্ধে রুশ বাহিনী অত্যাধুনিক অস্ত্রের সঙ্গে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত প্রাণঘাতী অস্ত্রও প্রয়োগ করেছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে।
অস্ত্র হিসাবে ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে রেখে ছোট ডার্টকে ব্যবহার করা হচ্ছে । ইউক্রেনের শহর বুচাতে এই ডার্ট ব্যবহারের উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে।
ডার্টগুলি দেখতে এক ইঞ্চি পেরেকের মতো। যেগুলির এক প্রান্তে তীরের মতো পাখনা থাকে। বাতাসের মধ্যে গিয়ে এইগুলি গতিশীল হয়ে ওঠে।
বুচার বাসিন্দারা তাঁদের বাগানে এবং রাস্তা থেকে এই রকম প্রচুর ডার্ট উদ্ধার করেছেন। ডার্টগুলি বাগানে গাছের গায়ে, বাড়ির দেওয়ালে এবং গাড়ির গায়ে আটকে ছিল।
বুচার স্থানীয় এক বাসিন্দা স্বিতলানা চুমতের কথায়, ‘‘আপনি যদি আমার বাড়ির দিকে তাকান তবে এ রকম জিনিস অনেক পাবেন।’’ যুদ্ধ চলাকালীন তিনি এক দিন সকালে দেখেন তাঁর বাডি়র দেওয়ালে এবং ঘরের ভিতর এই ধরনের ডার্ট আটকে রয়েছে।
এই ডার্টগুলি ছুড়ে দেওয়ার সময় শঙ্কু আকৃতির এক ধরনের ‘ফ্লোচেট’ সেল ব্যবহার করছে রাশিয়া। যার মুখের ছিদ্র দিয়ে নাগাড়ে বেরোতে থাকে ডার্টগুলি। সেগুলি ৩০০ গজ দূর পর্যন্ত যেতে পারে।
যুদ্ধে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মানুষ মারার জন্য ডার্ট ব্যবহার করার উদাহরণ রয়েছে। এ ছাড়া ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকা একে ‘অ্যান্টি-পারসনেল প্রজেক্টাইল’ হিসাবে উল্লেখ করে এর ব্যবহার করা হত।
২০১৪ সালে গাজায় ‘ফ্লোচেট’ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। একটি মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ অনুযায়ী ১৭ জুলাই খান ইউনিসের পূর্বে খুজা গ্রামের উদ্দেশে ৬টি ‘ফ্লোচেট’ ছোড়ে ইজরায়েল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ডার্টের মুখগুলি কিছুটা ইউ আকৃতি করা হত। কতকটা মাছের বড়শির মতো। এর ফলে শরীরে মারাত্মক ক্ষত তৈরি হত। এই ক্ষত থেকে মৃত্যুও হত।
যুদ্ধে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহারে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে কারণ এই ধরনের অস্ত্র লক্ষ্যের বাইরে অন্য কাউকে আঘাত করত। কতকটা ছররা গুলির মতো।
ইজরায়েলে ক্যামেরাকে অস্ত্র ভেবে ২০১০ সালে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক সাংবাদিককে ‘ফ্লোচেট’ ছুড়ে আঘাত করা হয়। কিন্তু এই হামলায় সাংবাদিক ছাড়াও আরও আট জন অসমারিক ব্যক্তি আহত হন। এই ঘটনার পর ইজরায়েল ‘ফ্লোচেট’ ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তার পরেও তাদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে এই অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলিও যুদ্ধে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
যদিও এই অস্ত্র ব্যবহারকে এখনও নিষিদ্ধ করেনি কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠন। মানবাধিকার সংগঠনগুলি এর নির্বিচার ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি করে আসছে।
বুচা শহরটিকে দখলদার মুক্ত করার পর রাশিয়ান বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত নৃশংসতা উন্মোচিত হয়েছিল। এর নিন্দায় সরব হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক মহল।
বুচার রাস্তাগুলি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় স্থানীয় বাসিন্দারা তা পরিষ্কার করেছেন।
স্বেচ্ছাসেবকরা শহরের আশেপাশে এলাকাগুলি পরিষ্কারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। সপ্তাহ খানেক আগে শহরের যে ছবি দেখেছিল বিশ্ব তার অনেকটাই বদল এনেছেন বাসিন্দারা।