ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে ক্রমেই নানা বিতর্ক প্রকাশ্যে আসছে। সম্প্রতি দাবি করা হয়েছে, আরও দুই গোপন সন্তান রয়েছে পুতিনের! তাদের মা নাকি পুতিনের ‘হাঁটুর বয়সি’ স্বর্ণপদক জয়ী এক জিমন্যাস্ট।
ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই পুতিন সংবাদমাধ্যমের আতসকাচের তলায়। তাঁর নানা কীর্তি নিয়ে খোঁজখবর চলছে। উঠে আসছে বিভিন্ন চমকপ্রদ তথ্য।
সম্প্রতি পুতিনের বিষয়ে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল। দাবি করা হল, ২০১৯ সালে রুশ গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছিল তাঁর নগ্ন ছবি প্রকাশ্যে আসায়।
সাইবেরিয়ার বাসিন্দা সেই গোয়েন্দা কর্মী আনা আনুফ্রিয়েভা পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, এক প্রতিযোগিতার জন্য তিনি এই ফটোশ্যুট করেছিলেন। আর সেই কারণেই তাঁকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
২০১৯ সালের সেই ঘটনার স্মৃতি এখনও তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ‘প্লেবয়’ পত্রিকার সেই ছবিগুলি যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন তাঁর বয়স ২৭ বছর। ছবি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর মানসিক চাপ ও তার ফলে জাত অন্যান্য অসুস্থতার শিকার হন। তবু তিনি কখনও তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুশোচনা বোধ করেননি।
তাঁর কথায়, ‘‘আমি আমার দেশের সামনে নিজের লাজ-লজ্জা সব বিসর্জন দিয়েছি।’’ চাকরি চলে যাওয়ায় অর্থনৈতিক টানাপড়নের মধ্যে পড়েন আনা। এমনকি, নতুন কোনও কাজও জুটছিল না তাঁর। তিনি যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, তার ঋণ পরিশোধ করাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। অবশেষে তিনি নিজের ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন।
আনার কথায়, ‘‘আমার মাথার উপর কোনও ছাদ ছিল না। চাকরির জন্য চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছিল না। কোনও বন্ধুও পাশে এসে দাঁড়ায়নি। মাঝে মাঝে মনে হত, আমি খুব বড় অপরাধ করে ফেলেছি। এমনিতেই, ঋতু সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলাম। ধীরে ধীরে আমার ওজনও কমতে শুরু করেছিল।’’
আনা আরও বলেন, ‘‘আমার পরিবারের সদস্যরাও আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাবা বলেছিলেন, আমি নাকি ভয়ানক নির্লজ্জ কাজ করেছি।’’
সেই সময়টাই ছিল অন্য রকম। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ আমাকে কাজ দিতে চাইত না। নানা অজুহাতে আমাকে বাতিল করে দিত। কিন্তু আমি জানতাম, এর পিছনে কারণ একটাই। তাঁরা মুখের উপর আমার নামের সঙ্গে জুড়ে থাকা ‘কেচ্ছা’র কথা বলতে পারতেন না। কেউ বলতেন, কোনও পদ খালি নেই। কেউ বলতেন, তাঁরা আমার চেয়েও উপযুক্ত প্রার্থী পেয়ে গিয়েছেন।’’
আসলে গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত অবস্থায় তিনি ‘প্লেবয়’ পত্রিকা দ্বারা আয়োজিত এক অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। বলা হয়েছিল, জিতলে পত্রিকার বার্ষিক ক্যালেন্ডারে তাঁর ছবি প্রকাশিত হবে।
যখন তাঁর ছবি প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন, ‘‘কেন শুধু মডেল, ফিটনেস কোচ এবং সিনেমার নায়িকারাই তাদের শরীর দেখাবেন?’’
তাঁর মতে, সরকারি কর্মচারীদেরও সেই অধিকার রয়েছে। প্রতিটি মেয়েদের উচিত, নিজেকে ভালবাসা, নিজের শরীরকে আনন্দ দেওয়া। তিনি পেশায় শিক্ষিকাই হন বা চিকিৎসক।
‘‘আমার ন্যুড ফটোগ্রাফি ভাল লাগত। মহিলাদের শরীর আমার কাছে এক একটি শিল্প বলে মনে হয়। এ সবের ভাল-মন্দ বিচার না করে উপভোগ করলেই ভাল।’’
তিনি প্রতিযোগিতার ‘সেরা বারো’-র মধ্যে থাকতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু তাতে অংশগ্রহণ করে তিনি বিন্দুমাত্র আক্ষেপ বোধ করেননি।
আনা জানিয়েছেন, প্রায়শই তাঁকে শুনতে হয়, এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চাকরি খোয়ানো কি খুব বুদ্ধিমানের কাজ? কিন্তু তাঁর মনে হয়, তিনি কোনও ভুল করেননি।
তিনি এখনও ইনস্টাগ্রামে তাঁর বিভিন্ন ছবি আপলোড করেন। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ারও অনেক। কখনও ভ্রমণ-চিত্র, কখনও বা নিজস্বী। তার মধ্যে তাঁর কিছু স্বল্পবসনা ছবিও রয়েছে।
ইউক্রেন আক্রমণ করে পুতিন এখন বিভিন্ন বিতর্কের আকর। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চলছে চর্চা। নারীঘটিত বিষয়ে তাঁর জড়িত থাকা নিয়ে যখন জল্পনা জমজমাট, তখন আনার কাহিনি প্রকাশ্যে নিয়ে এল তাঁর এক ‘নীতিবাগীশ’ অবতারকে। তিনি নিজেই যখন সেই জিমন্যাস্টের সঙ্গে তথাকথিত গোপন ও বিতর্কিত রোম্যান্সে লিপ্ত বলে জানা যাচ্ছে, তখন আনার কাহিনি তাঁকে আরও বেশি করে বিতর্কে টেনে আনল।