এ বার বার্ধক্যের সঙ্গে যুদ্ধে নামলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বয়স আটকে দিতে পারে এমন ফর্মুলা আবিষ্কারের জন্য গবেষকদের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান। সংবাদমাধ্যম মেডুজা এবং সিস্টেমার যৌথ প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
পুতিনের বর্তমান বয়স ৭১। ইউরোপ থেকে আমেরিকা, পশ্চিম এশিয়া থেকে আফ্রিকা, যে কোনও মহাদেশের প্রায় প্রতিটি দেশেই ক্ষমতা রয়েছে বয়স্ক নেতাদের হাতেই। তাই পঞ্চম বারের মতো রাশিয়ায় ক্ষমতা ধরে রাখার পর বয়সকে হারিয়ে দেওয়ার নতুন তাগিদ দেখা গিয়েছে রাশিয়ার একনায়কের মধ্যে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্য বলছে, জুনের শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে রাশিয়ান গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিতে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে যাতে বলা হয়েছে, বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বশেষ গবেষণার বিশদ তথ্য হস্তান্তর করতে হবে পুতিনকে।
দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তির থেকে এই ধরনের আদেশ পেয়ে চাপে পড়ে গিয়েছেন সে দেশের তাবড় বিজ্ঞানীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উচ্চপদস্থ রুশ কর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা যখন প্রেসিডেন্টের এই অনুরোধটি পেয়েছিলেন, তখন নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
পুতিনের আদেশ নিয়ে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক অবশ্য মন্ত্রগুপ্তি নিয়েছে। ক্রেমলিনের তরফে সরকারি ভাবে এমন কোনও সংবাদ স্বীকারও করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোষের ক্ষয় কমাতে বিশেষজ্ঞদের ‘উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি’ জমা দিতে বলা হয়েছে।
ফোর্বসের ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের’ তালিকায় নাম রয়েছে পুতিনের। তাঁর সম্পত্তি ও বিলাসবহুল জীবন যেমন বহুলচর্চিত, তেমনই তিনি নিজের বয়স বৃদ্ধি নিয়েও সচেতন। বার্ধক্যের প্রতিকার করার বিষয়ে তাঁর আগ্রহ বরাবরের।
রাশিয়ার এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি ডলার।
২০০০ সালে পুতিন প্রথম বার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তখন তিনি চার বছর করে মোট দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। পরে আবার প্রেসিডেন্ট হন তিনি। সেই মেয়াদও শেষ হবে ২০২৪ সালে।
সমালোচকেরা বলছেন, পুতিন আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার জন্যই এই কৌশল নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট পদে থাকার জন্য চাই শারীরিক সক্ষমতা।
‘দ্য সান’-এর এক প্রতিবেদনে ক্রেমলিনের এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে, বার্ধক্য রোধ করতে সাইবেরিয়ান লাল হরিণের শিংয়ের রক্তে স্নান করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
২০৩৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে হলে পুতিনের বয়স দাঁড়াবে ৮৩। সেই বয়সে এসে প্রেসিডেন্টের কাজকর্মের ধকল সামলাতে বয়সকে কব্জা করতে হবে।
পুতিন তো বটেই, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যেরাও মোটামুটি সকলে বার্ধক্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বয়স ৭৪, নিরাপত্তা পরিষেবা প্রধান আলেকজান্ডার বোর্টনিকভের ৭২ বছর।
প্রধান উপদেষ্টা নিকোলাই পাত্রুশেভ, তিনিও ৭৩। গুপ্তচর প্রধান সের্গেই নারিশকিন ৭০। অর্থাৎ, পুতিন ও তাঁর বন্ধুবলয়ের সকলেই বৃদ্ধ।
২০২২ সালে ব্রিটেনের একটি সংবাদমাধ্যমেও চাঞ্চল্যকর দাবি তোলা হয় যে, পুতিন সম্ভবত ক্যানসার বা পারকিনসন্সে ভুগছেন। রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রায় সব সময় দেখা যায় এক জন থাইরয়েড ক্যানসার বিশেষজ্ঞকেও।
তাই ক্ষমতা ধরে রাখতে নাকি বুড়ো হতে চান না পুতিন। খুঁজছেন বয়স থামানোর ওষুধ।