এক দিকে করোনাভাইরাসের কামড়। অন্য দিকে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ। এই দুইয়ের জেরে রাশিয়ায় বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তার জেরে সে দেশে জনসংখ্যা কমছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের জনসংখ্যার ঘাটতি মেটাতে অভিনব ঘোষণা করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১০ ও তারও বেশি সন্তান ধারণের জন্য মহিলাদের টাকা দেওয়ার ঘোষণা করলেন পুতিন।
তবে একটি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। কোনও মহিলার দশ নম্বর সন্তানের যখন প্রথম জন্মদিন হবে এবং সে সময় যদি বাকি নয় সন্তান জীবিত থাকে, তবেই সরকারের থেকে ১ মিলিয়ন রুবেল (রাশিয়ার মুদ্রা), যা ভারতীয় মুদ্রায় ১৩ লক্ষ টাকা পাবেন এক জন মহিলা।
জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে জোর দিতে ‘মাদার হিরোইন’ নামে এই বিশেষ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
‘টাইমস রেডিও’তে এই প্রকল্প সম্পর্কে বিশদে জানিয়েছেন রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ জেনি ম্যাথার্স।
জেনি বলেছেন, ‘‘দশ বা তার বেশি সন্তান হলে মহিলাদের জন্য এই পুরষ্কারের চল সোভিয়েত যুগের। একে মাদার হিরোইন বলা হয়। রাশিয়ার জনসংখ্যা সঙ্কট দূর করতেই এই প্রয়াস। বর্তমানে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে এই সঙ্কট আরও গাঢ় হয়েছে।’’
তবে মাত্র ১৩ লক্ষ টাকায় ১০ সন্তানের প্রতিপালন কি সম্ভব? এই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁদের মতে, এমনিতেই যুদ্ধের ফলে রুশ অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। এই অবস্থায় এত সন্তানের ভরণপোষণ কী ভাবে সম্ভব।
জেনির কথায়, পুতিন বলে থাকেন, রাশিয়ায় যে সব পরিবারে বেশি সন্তান রয়েছে, তারাই সবচেয়ে বেশি দেশপ্রেমিক।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে রাশিয়ায় দৈনিক করোনা সংক্রমণ মাথাচাড়া দিয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার রুশ সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশকে জনবহুল করতে তাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন পুতিন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যাপক হারে জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় ১৯৪৪ সালে এই বিশেষ আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
জনসংখ্যা বাড়াতে গত ১৬ অগস্ট আবার এই আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছেন পুতিন।
জানা গিয়েছে, গত কয়েক দশকে রাশিয়ার জনসংখ্যা কমেছে। চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়ার জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৬০ লক্ষ।
এরই মধ্যে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কোনও বিরতি নেই। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলছে, ক্রিমিয়ায় একটি গোলাবারুদের গুদামে হামলা চালানো হয়েছে।
ক্রিমিয়ার ডিজানকোই শহরের কাছে এই গুদামে বিস্ফোরণের পর নিকটবর্তী বিভিন্ন অবকাঠামোরও ক্ষতি হয়েছে, এবং প্রায় ২০০০ মানুষকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে ক্রমিয়ায় রাশিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতেও হামলা হয়েছিল, যেটিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। অভিযোগের তির ইউক্রেনের দিকে। তবে ইউক্রেনের সরকার এই দু’টি হামলার কোনওটিরই দায়িত্ব এখনও স্বীকার করেনি।