Pakistani Woman in India

গেমের মধ্যে প্রেম করে পর পর ‘শত্রু’ নিধন! সংসার করতে ভারতে এসে জেলে রাত কাটছে ‘বীর-জ়ারা’র

শচীন-সীমার ‘প্রেমকাহিনি’ শাহরুখ খান এবং প্রীতি জ়িন্টা অভিনীত সুপারহিট ছবি ‘বীর-জ়ারা’র মতোই সীমান্ত অতিক্রম করেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ১৪:৫২
Share:
০১ ২৮

পাবজি গেম খেলতে খেলতে আলাপ। সেখান থেকে বন্ধুত্ব গ়ড়িয়ে প্রেম। তার পরই প্রেমিকের টানে চার সন্তানের হাত ধরে লুকিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসেন মহিলা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করে। গ্রেফতার হন ভারতীয় প্রেমিকও। মহিলার দাবি তাঁরা বিয়ে করে ভারতেই থাকতে চান। একসঙ্গে সংসার পাততে চান। তাঁদের দাবি, গেমের মধ্যে একসঙ্গে অনেক ‘শত্রু’ নিধন করেছেন তাঁরা। আর সেই কারণেই তাঁরা একসঙ্গে থাকার সাহস পেয়েছেন।

০২ ২৮

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে। ‘পাবজি’ খেলতে খেলতে নয়ডার বাসিন্দা শচীন সিংহের সঙ্গে আলাপ হয় বছর তিরিশের পাকিস্তানি মহিলা সীমা গুলাম হায়দরের। সেখান থেকে তাঁদের সম্পর্ক আরও এগোলে চার সন্তানকে নিয়ে ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নেন সীমা।

Advertisement
০৩ ২৮

প্রথমে তিনি পাকিস্তান থেকে নেপাল আসেন। গত মাসে সেখান থেকে লুকিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। এর পর একটি বাসে চেপে নয়ডা চলে আসেন। শচীন গ্রেটার নয়ডার রাবুপুরা এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। চার সন্তানকে নিয়ে প্রথমে সেখানেই যান সীমা। গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পেয়ে শচীনের বাড়িতে অভিযান চালায় এবং চার সন্তান-সহ সীমাকে আটক করে।

০৪ ২৮

শচীন-সীমার ‘প্রেমকাহিনি’ শাহরুখ খান এবং প্রীতি জ়িন্টা অভিনীত সুপারহিট ছবি ‘বীর-জ়ারা’র মতোই সীমান্ত অতিক্রম করেছে।

০৫ ২৮

পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন সীমা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে পাকিস্তানে তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি গুলাম হায়দরকে বিয়ে করেন। পরে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে কর্মসূত্রে সৌদি আরবে চলে যান গুলাম।

০৬ ২৮

পাকিস্তানে সন্তানদের নিয়ে একা একাই দিন কাটত সীমার। আর সেই কারণেই ২০১৯ সাল থেকে তিনি ‘পাবজি’ খেলতে শুরু করেন। তখনই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর থেকে ১১০০ কিমি দূরে থাকা গ্রেটার নয়ডার যুবক শচীনের।

০৭ ২৮

শচীন এবং সীমা, উভয়েই পাবজি গেমের মধ্যে আলাপ জমাতে শুরু করেন। গেম খেলার সময় তাঁরা একসঙ্গে অনেক ‘শত্রু’ হত্যা করেছেন। ভার্চুয়াল যুদ্ধক্ষেত্রে, তাঁরা কার্যত অপ্রতিরোধ্য ছিলেন বলেও সীমা পুলিশকে জানিয়েছেন।

০৮ ২৮

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতি রাতে দু’জনে ৩-৪ ঘণ্টা পাবজি খেলতেন। এ ভাবে তাঁদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। গেমের মধ্যেই তাঁরা একে অপরের মোবাইল নম্বর বিনিময় করেন। প্রতিনিয়ত তাঁরা হোয়াট্‌সঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা শুরু করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

০৯ ২৮

একে অপরের প্রেমে পড়তে সীমা এবং শচীনের বেশি সময় লাগেনি। তাঁদের দাবি, সব কিছুই হয়েছে একে অপরের প্রতি প্রবল অনুভূতি থেকে।

১০ ২৮

কোভিড লকডাউনের পর একে অপরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান শচীন এবং সীমা। তবে তা করতে গিয়ে অনেক ঝক্কিও পোহাতে হয়েছিল।

১১ ২৮

চলতি বছরের মার্চ মাসে, সীমা এবং শচীন উভয়েই নেপাল যান। তিন বছর প্রেমের মধ্যে সেটিই ছিল তাঁদের প্রথম দেখা। তাঁরা নেপালে সাত দিন একসঙ্গে ছিলেন। এর পর আবার তাঁরা যে যার দেশে ফিরে যান।

১২ ২৮

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেখা হওয়ার পর একে অপরের প্রতি টান আরও বাড়ে সীমা এবং শচীনের। একসঙ্গে সংসার পাতার পাকাপাকি ব্যবস্থার কথাও তাঁরা ভাবতে শুরু করেন।

১৩ ২৮

অনেক চিন্তাভাবনার পর তাঁরা নাকি সিদ্ধান্ত নেন, সীমা লুকিয়ে ভারতে চলে আসবেন। তবে সীমা সাফ জানিয়ে দেন, সন্তানদের পাকিস্তানে রেখে তিনি যাবেন না। সীমার প্রস্তাবে আপত্তি করেননি শচীনও। কিন্তু কী ভাবে সীমা ভারতে আসবেন, তা নিয়ে মাথা ঘামানো শুরু করেন তাঁরা।

১৪ ২৮

সীমা এবং শচীন— কেউই তেমন পড়াশোনা করেননি। সীমা পঞ্চম শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করেছেন। শচীন কাজ করতেন নয়ডার একটি মণিহারি দোকানে। তাঁর পড়াশোনা প্রাথমিক পর্যন্ত।

১৫ ২৮

তাই অসম্ভবকে সম্ভব করতে ইউটিউবের উপরই ভরসা রেখেছিলেন শচীন-সীমা।

১৬ ২৮

পুলিশ সূত্রে খবর, শচীন নাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইউটিউব ভিডিয়ো দেখে সীমাকে বুদ্ধি জোগাতেন কী ভাবে তিনি সন্তানদের নিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করতে পারবেন। ঠিক হয় নেপাল হয়ে ভারতে প্রবেশ করবেন সীমা। এর পর মে মাসে সীমা সেই পদক্ষেপ করেন।

১৭ ২৮

পুলিশ জানিয়েছে, এক জন ট্রাভেল এজেন্ট সীমাকে পাকিস্তান থেকে নেপাল যাওয়ার টিকিট দিয়েছিলেন।

১৮ ২৮

এর পর নেপাল থেকে পোখরা হয়ে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সীমা ভারতে পৌঁছন। নেপাল হয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য তিনি মোট ১২ লক্ষ টাকা খরচ করেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

১৯ ২৮

সঙ্গে কোনও পুরুষ না থাকায় সীমান্ত নিরাপত্তাকে সীমা সহজেই ফাঁকি দিতে পেরেছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শচীনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সীমা সহযাত্রীর হটস্পট ব্যবহার করেছিলেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

২০ ২৮

পুলিশ জানিয়েছেন, এর মধ্যেই গ্রেটার নয়ডায় সীমা এবং তাঁর সন্তানদের থাকার জায়গার ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন শচীন। শচীন তাঁর বাড়িওয়ালার কাছে সীমাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

২১ ২৮

সীমা ভারতে প্রবেশ করার এক সপ্তাহ পর শচীন তাঁকে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। শচীনের বাবা নেত্রপাল সিংহ তাঁদের বিয়ের বিরোধিতা করেননি। বিয়ের পর তাঁরা কী ভাবে একসঙ্গে থাকতে পারবেন, তার পরিকল্পনা শুরু করেন শচীনের বাবা।

২২ ২৮

এর পর বিয়ে করার জন্য সীমা এবং শচীন এক আইনজীবীর কাছে যান। সেই আইনজীবীই তাঁদের বিষয়ে পুলিশে খবর দেন।

২৩ ২৮

মঙ্গলবার হরিয়ানার বল্লভগড় থেকে যুগলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সীমাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে শচীনের বাবাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

২৪ ২৮

মঙ্গলবার তিন জনকেই ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, সীমার সন্তানেরা তাঁর সঙ্গে জেলেই থাকবে।

২৫ ২৮

প্রশাসনের তরফে ভারতে থাকা পাকিস্তানি দূতাবাসে ইতিমধ্যেই পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিও সীমার ভারতে প্রবেশের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে তদন্ত শুরু করছে। যদিও শচীন এবং সীমার অনুরোধ, ভারত সরকার যেন তাঁদের বিয়ে করে একসঙ্গে থাকার অনুমতি দেয়।

২৬ ২৮

আদালতে যাওয়ার সময় সীমা সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমি শচীনের সঙ্গে থাকার জন্য পাকিস্তান ছেড়েছি। ও-ই আমার কাছে সব। আমি ওকে ভীষণ ভালবাসি। আমি ওর জন্য সব ছেড়ে দিয়েছি। আমি বিয়ে করে এখানে (ভারতে) থেকে যেতে চাই।’’

২৭ ২৮

শচীনও ভারত সরকারের কাছে একই আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সরকারকে অনুরোধ করছি যাতে আমাদের বিয়ে করার এবং একসঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। আমরা একে অপরকে খুব ভালবাসি।’’

২৮ ২৮

বাস্তব জীবনের ‘বীর-জ়ারা’র গল্প কি পরিণতি পাবে? না কি সন্তানদের নিয়ে পাকিস্তান ফিরতে হবে সীমাকে? নিছকই প্রেম না সীমার ভারতে অনুপ্রবেশের নেপথ্যে রয়েছে কোনও বড় চক্রান্ত! তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্খাগুলি।

ছবি: সংগৃহীত এবং প্রতীকী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement