৩১ অগস্টের পর থেকে দামি হয়েছে গ্রিসের গোল্ডেন ভিসা। আর এই নিয়ম পরিবর্তনের পর গ্রিসে স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য আগের চেয়েও আগ্রহ বেড়েছে ভারতীয় উচ্চবিত্তদের।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই দেশটিতে ভারতীয়দের মধ্যে সম্পত্তি কেনার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। জুলাই এবং অগস্টের মধ্যে এই দেশে বাড়ি বা সম্পত্তি কেনার পরিমাণ বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। তবে গোল্ডেন ভিসার নিয়ম পরিবর্তন হলে গ্রিসে বসবাস করা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
কী এই গোল্ডেন ভিসা? কোন নিয়মের রদবদল ঘটাতে চাইছে গ্রিস সরকার?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশের নাগরিকদের দ্রুত বসবাসের অনুমতি পাওয়ার একটি মাধ্যম ছিল এই গোল্ডেন ভিসা। অন্য দেশের নাগরিকেরা বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করলে তাঁদের এই নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
গ্রিসের বেশ কিছু জায়গা, যেমন রাজধানী আথেন্স-সহ থেসালোনিকি, মাইকোনোস এবং সান্তোরিনির মতো শহরে বসবাসের জন্যে ন্যূনতম বিনিয়োগ ছিল ৪ কোটি টাকা। গোল্ডেন ভিসার নতুন নিয়ম সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হলে এই সব অঞ্চলে বাড়ি বা বহুতল কিনতে হলে প্রায় ৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
২০১৩ সালে চালু করা হয়েছিল গোল্ডেন ভিসা প্রকল্প। সরকারি সম্পত্তি বা বিনিয়োগের বিনিময়ে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হত বিদেশি দেশগুলির নাগরিকদের।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয় এমন দেশের নাগরিকেরা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। কারণ প্রারম্ভিক সুযোগে মাত্র ২.২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেই মিলত গোল্ডেন ভিসা।
প্রধান শহর ছাড়া অপেক্ষাকৃত কম উন্নত অঞ্চলে বাস করতে হলে আড়াই কোটিতেই পাওয়া যেত মাথা গোঁজার আস্তানা।
গ্রিস সরকারের ভিসা নীতিতে এই পরিবর্তনের ফলে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বেশ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্পত্তি উন্নয়ন সংস্থা লেপ্টোস এস্টেটসের গ্লোবাল মার্কেটিং ডিরেক্টর সঞ্জয় সচদেব।
তিনি আরও বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমরা ভারতীয় ক্রেতাদের মধ্যে বাড়ি কেনার আগ্রহ দেখেছি। অনেক বিনিয়োগকারী ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে শেষ হবে এমন নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো কিনেছেন।’’
মনোরম পরিবেশ, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের জন্য পরিচিত গ্রিস সারা বিশ্ব থেকে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করেছে দশকের পর দশক। তবে গোল্ডেন ভিসা চালু হওয়ার পরেই নানা অঞ্চলে তীব্র আবাসন সঙ্কট দেখা দেওয়ায় এ নিয়ম কিছুটা কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
গ্রিসের অর্থমন্ত্রী কোস্টিস হাৎসিদাকিস বলেছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত সরকারের আবাসন নীতির অংশ, যার লক্ষ্য বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় সব নাগরিকের জন্য সাশ্রয়ী ও মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করা।’’
রিয়্যাল এস্টেট, সরকারি বন্ড বা অন্যান্য অনুমোদিত যানবাহনে বিনিয়োগের বিনিময়ে বসবাস বা নাগরিকত্ব পাওয়ার এই নীতি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ধনী ভারতীয়দের মধ্যে। ইউরোপীয় দেশে নিজের আরও একটি আস্তানা খুঁজে নেওয়ার জন্য গ্রিসকে বেছে নেওয়ার কারণ হল আয়ের সুবিধা, উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ।
অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত বছরের ভিসা গ্রহণের জন্য ১০ হাজার ২১৪টি আবেদন জমা পড়েছে। ২০২৩ সালে মোট ৫ হাজার ৭০১টি গোল্ডেন ভিসা অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং আরও ৮ হাজার ৮০০টি আবেদন এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
নতুন গোল্ডেন ভিসার কার্যকর করার সময়সীমা যতই কমবে গ্রিসে বাড়ি বা সম্পত্তির দাম ততই আকাশছোঁয়া হবে। অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে ভারতীয়দের পড়তে হবে প্রতিযোগিতার মুখে। একটু নিরিবিলিতে পরিবারের সঙ্গে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার স্বপ্নপূরণের জন্য খরচ হবে বেশি অর্থও।