ষোড়শতম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে সোমবার। বৃহস্পতিবার হবে গণনা। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু এবং কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিরোধী শিবিরের যশবন্ত সিন্হার মধ্যে।
ইতিহাস বলছে, পূর্ববর্তী ১৫ বারের মধ্যে ১৪ বারই দেশের এক নম্বর নাগরিক হওয়া নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হয়েছেন মোট ১৪ জন। এক মাত্র প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ দু’বার ভোটে জিতে রাইসিনা গিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে জেতার রেকর্ডও রাজেন্দ্রপ্রসাদের। অন্য দিকে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পেয়ে জেতার নজির ১৯৬৯ সালে ভিভি গিরির।
১৯৫৭ সালে মোট ভোটের ৯৮.৯৯ শতাংশ পেয়েছিলেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ। সেই রেকর্ড আজও অক্ষুণ্ণ। তার আগে ১৯৫২ সালে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৮৩.৮১ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন তিনি।
১৯৫৭ সালের ৬ মে দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ভোটের মধ্যে রাজেন্দ্রপ্রসাদ পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৫৯ হাজারেরও বেশি। ওই নির্বাচনে অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, চৌধুরি হরি রাম এবং নারায়ণ দাস তিন হাজারের গণ্ডিও পেরোননি।
২০১৭ সালে পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১০ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৫৮ বৈধ ভোটের মধ্যে রামনাথ কোবিন্দ পেয়েছিলেন ৭ লক্ষ ২ হাজার ৪৪টি ভোট। শতাংশের হিসাবে ৬৫.৬৫। গত চার দশকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাসে জয়ী প্রার্থীর সবচেয়ে কম ভোট পাওয়ার নজির এটাই।
২০১৭-র নির্বাচনে রামনাথের প্রতিদ্বন্দ্বী তথা লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমার পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার ৩১৪টি ভোট। কংগ্রেসে-সহ কয়েকটি বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থী মীরার প্রাপ্তি ছিল প্রায় ৩৪.৩৫ শতাংশ ভোট।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের এক মাত্র নজির নীলম সঞ্জীব রেড্ডির। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন শাসক দল জনতা পার্টি সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেশ করেছিলেন তিনি। রেড্ডির ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে গিয়েছিল।
ঘটনাচক্রে, ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি এবং সংসদীয় বোর্ড মনোনীত প্রার্থী নীলম সঞ্জীব রেড্ডি হেরে গিয়েছিলেন! রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেযে কম ভোট পেয়ে জয়ের নজির গড়েছিলেন ভিভি গিরি।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী ওই নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী ভিভি গিরির সমর্থনে কংগ্রেস সাংসদ-বিধায়কদের ‘বিবেক ভোটের’ আবেদন জানিয়েছিলেন। সে বার ইন্দিরাপন্থীদের অন্তর্ঘাতে গিরির কাছে রেড্ডি হেরে যান বলে অভিযোগ।
১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোট বৈধ ভোট ছিল ৮ লক্ষ ২৫ হাজার ৫০৪টি। ইন্দিরা সমর্থিত নির্দল প্রার্থী গিরি পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ২০ হাজার ৭৭টি। অর্থাৎ, প্রায় ৫০.৯ শতাংশ।
সে বার গিরির প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের প্রার্থী রেড্ডি পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৪২৭টি ভোট। শতাংশের হিসাবে ৪৯.১। ওই নির্বাচনে জনসঙ্ঘ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন নেহরু জমানার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সিডি দেশমুখ।
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রথম পছন্দের ভোটে জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি হয়নি। কারণ বিধি মেনে কোনও প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। ফলে দ্বিতীয় পছন্দের ভোট গণনা করতে হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভিভি গিরির জয়ের পর ইন্দিরাকে বহিষ্কার করেন তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি নিজলিঙ্গাপ্পা। পরিণামে ভাঙন ধরে কংগ্রেসে। পরবর্তী কালে ইন্দিরা গোষ্ঠী কংগ্রেসের মূল অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ভোট পেয়ে জেতার নজির ১৯৬৭ সালে। সে বার বিজয়ী প্রার্থী জাকির হুসেন পেয়েছিলেন ৫৬.২ শতাংশ ভোট। মোট ৪ লক্ষ ৭১ হাজার ২৪৪টি।
১৯৬৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল ৮ লক্ষ ৩৮ হাজার ১৭০। জাকিরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কে সুব্বারাও পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৭১। ৪৩.৪ শতাংশ।
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার শেষ পর্যন্ত গণনা শেষে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়ে পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতি হিসাবে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটমূল্য ছিল ৫,৪০,৯৯৬। দ্রৌপদী তৃতীয় রাউন্ড গণনার পরেই পেয়ে যান ৫,৭৭,৭৭৭ মূল্যের ভোট।