বৃহস্পতিবারই দিলেন সুখবর! যমজ সন্তানের মা হয়েছেন তিনি। টুইটারে লিখলেন, ‘আমাদের যমজ সন্তান জয় জিন্টা গুডেনাফ এবং গিয়া জিন্টা গুডেনাফকে স্বাগত জানাই।’
২০১৬ সালে জেন গুডেনাফকে বিয়ে করেন ‘মিশন কাশ্মীর’-এর সুফিয়া পারভেজ। তার পর থেকে তাঁরা লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দা।
জেনের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ই নানা রোম্যান্টিক ছবি দিতে দেখা যায় প্রীতিকে। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ান তাঁরা। এক কথায় সুখী দম্পতি। ওই টুইটেই লিখেছেন, ‘জীবনের নতুন পর্ব নিয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং সারোগেটকে অনেক ধন্যবাদ।’
জেনের সঙ্গে সম্পর্কে থিতু হলেও প্রীতির অতীতে একাধিক সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। সম্পর্ক ছাড়াও তাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্কও।
পঞ্জাব কিংস (আগে ছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব)-এর মালকিনের সঙ্গে নেস ওয়াদিয়ার সম্পর্ক এবং সম্পর্ক ভাঙা সুবিদিত। বর্তমানে নেসের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও আইপিএলের এই দলটির মালিকানা দু’জনেরই।
প্রীতির দীর্ঘ দিনের প্রেমিক ছিলেন ব্যবসায়ী নেস ওয়াদিয়া। ওয়াদিয়া গ্রুপের উত্তরাধিকারী নেস। বম্বে ডায়িং, বম্বে বর্মণ ট্রেডিং, ব্রিটানিয়া, গো এয়ারের মতো সংস্থা তাদের অধীনে। শিল্পপতি নাসলি ওয়াদিয়ার সন্তান তিনি। এই নেস ওয়াদিয়ার সঙ্গেই দীর্ঘ প্রেমজীবন কাটিয়েছেন প্রীতি।
তবে সম্পর্ক শেষ হয় তিক্ত ভাবে। ২০১৪ সালের ৩০ মে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নেস তাঁর শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ করেন প্রীতি। সে দিন ছিল চেন্নাই-পঞ্জাব ম্যাচ (এবং নেস-এর জন্মদিন)। ঝগড়ার সময়ে নেস নাকি প্রীতির হাত ধরে এমন টেনেছিলেন যে, নায়িকার চোটও লাগে। এর পর থেকে ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়ে দু’জনের মধ্যে।
শুধু যে বহুবিধ সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক তা-ই নয়, বিভিন্ন সময় প্রীতি জড়িয়ে পড়েছেন নানা সমস্যায়। কখনও পরিচালক আব্বাস টায়ারওয়ালা, কখনও পরিচালক কমল আমরোহি, কখনও প্রযোজক ভরত শাহের সঙ্গে ছোটা শাকিলের যোগ নিয়ে মামলা, কখনও আবার তাঁর মতো দেখতে পর্ন স্টারের এমএমএস ভাইরাল হয়ে যাওয়া— প্রীতি এবং বিতর্ক যেন ছিল মুদ্রার দুই পিঠ।
তবে তাঁকে ঘিরে নানা বিতর্ক থাকলেও তাঁর জীবনের লড়াইটাকে কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। সিমলার রাজপুত পরিবারে জন্ম প্রীতির। বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারানোর পর থেকেই সংগ্রাম শুরু প্রীতির।
পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর বলিউডে। ১৯৯৭ সালে শেখর কপূরের সঙ্গে পরিচয়। তাঁর সূত্রে ‘দিল সে’ ছবিতে প্রীতির আত্মপ্রকাশ। শেখর কপূরকে প্রীতি ‘মেন্টর’ মনে করতেন।
অতঃপর, শেখরের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা এতটাই বেড়ে যায় যে, শেখরের স্ত্রী সুচিত্রা কৃষ্ণমূর্তি বিবাহবিচ্ছেদের জন্য প্রীতিকে দায়ী করেন। প্রীতি যদিও সে সবে কান না দিয়ে বলেছিলেন, সুচিত্রার মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
পরের বিতর্ক আব্বাস টায়ারওয়ালাকে নিয়ে। প্রীতির নিজের প্রযোজনার ফিল্ম ছিল ‘ইসক ইন প্যারিস’। এই ফিল্মের ডায়লগ লিখেছিলেন আব্বাস। প্রীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, পারিশ্রমিক হিসাবে আব্বাসকে প্রীতির দেওয়া ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকার চেক বাউন্স করে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রীতির বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল।
সলমন খানের সঙ্গে প্রীতির ঘনিষ্ঠতার কথাও কারও অজানা নয়। ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’ ফিল্মের সময়ও বন্ধু সলমন খানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। সে সময় সলমন খান এবং ঐশ্বর্যা রাইয়ের মধ্যে কথোপকথনের একটি অডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল নেটমাধ্যমে। তার বিষয়বস্তু ছিল এমন যে, প্রীতির সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়েছেন সলমন। এই অডিয়ো সামনে আসার পর তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টা নিয়ে সলমন নীরব থাকলেও কিছু সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন প্রীতি। পরে জানা যায়, অডিয়োটি ছিল ভুয়ো।
জীবনে যত বিতর্কে জড়িয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল এমএমএস-কাণ্ড। যার নেপথ্যে ছিল মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রীতির সাক্ষ্য দেওয়া। ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’র সময় আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাছ থেকে হুমকি ফোন পান অভিনেতা এবং অভিনেত্রীরা। মাফিয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাননি কেউই। প্রীতিই একমাত্র প্রযোজক ভরত শাহের সঙ্গে ছোটা শাকিলের যোগ নিয়ে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
বিতর্কিত মুহূর্ত তৈরি হয়েছে পরিচালক কমল আমরোহির সঙ্গে প্রীতির সম্পর্ক নিয়েও। এক সময় আমরোহি পরিবারকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন প্রীতি। পরে সেই টাকা ফেরতের জন্য মামলা করতে হয়েছিল অভিনেত্রীকে।
তবে ২০১৬-র পর থেকে প্রীতির জীবনে খানিক বদল এসেছে। এ বার মা হয়ে জীবনের অন্য এক অধ্যায়ে প্রবেশ করলেন তিনি।