হরিদেবপুরের অয়ন মণ্ডল খুনের ঘটনায় পরতে পরতে জট পাকাচ্ছে রহস্য। বান্ধবী এবং তাঁর মা— দু’জনের সঙ্গেই সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন অয়ন, এমনটাই দাবি তদন্তকারী অফিসারদের। সেই ত্রিকোণ প্রেমের জটিলতাই অয়ন খুনের পিছনে মূল ভূমিকা পালন করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
অয়নের খুনের ঘটনা সাড়া ফেলে দিয়েছে বাংলায়। কী ভাবে যুবককে খুন করা হল, মা এবং মেয়ে— দু’জনের সঙ্গে অয়নের সম্পর্কের রসায়ন আসলে কোন দিকে মোড় নিয়েছিল, তা নিয়ে চর্চা থামতে চাইছে না। প্রায় প্রতি দিন নতুন তথ্য উঠে আসছে তদন্তকারীদের হাতে।
ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক এবং তার করুণ পরিণতির নজির নতুন নয়। হরিদেবপুরের আগেও দেশের নানা প্রান্তে এমন অনেক ঘটনায় শিউড়ে উঠতে হয়েছে সকলকে। পুণের প্রমোদ জগতপের কাহিনিও ত্রিকোণ প্রেমের সূত্র ধরে এ ভাবেই সাড়া ফেলে দিয়েছিল।
প্রমোদ জগতপ ছিলেন পুলিশ কর্মীর ছেলে। তাঁর বাবা রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগে অ্যাসিসট্যান্ট পুলিশ ইনস্পেক্টর হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ২০১১ সালে ১৯ বছরের এই যুবককে খুন করা হয়েছিল। এই খুনে অভিযুক্ত ছিলেন যুবকের প্রাক্তন প্রেমিকার প্রেমিক।
প্রমোদকে প্রথমে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার পর তাঁকে বেশ কয়েক জন মিলে শ্বাসরোধ করে খুন করে। খুনের পর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় প্রমোদের দেহ।
প্রমোদ-খুনে মূল অভিযুক্তের নাম প্রবীণ চৌগুলে। স্থানীয় একটি কল সেন্টারে কাজ করতেন তিনি। ঘটনার পর তাঁকে এবং আরও চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, তাঁরা সকলে মিলে যুবককে পরিকল্পনা মাফিক খুন করেছেন।
তদন্তে জানা যায়, প্রমোদের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তাঁর প্রেমিকা প্রবীণের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এই সম্পর্কে আপত্তি ছিল প্রাক্তন প্রেমিক প্রমোদের। ওই তরুণী এবং প্রবীণ বিয়ে করার পরিকল্পনা করছেন, জানতে পেরে প্রমোদ তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন বলে অভিযোগ।
প্রমোদ সামনাসামনি কথা বলতে চেয়েছিলেন প্রবীণের সঙ্গে, তদন্তে এমনটাই জানতে পারে পুলিশ। এর পর প্রবীণ তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান সিক্রাপুর এলাকায়। দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে তুমুল কথা কাটাকাটি হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন অভিযুক্ত। বচসা ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে উঠলে প্রবীণ এবং তাঁর কয়েক জন সঙ্গী মিলে প্রমোদের গলা টিপে ধরেন।
শ্বাসরোধ করে খুন করার পর প্রমোদের দেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জ্বলন্ত অবস্থায় দেহটি ফেলে দেওয়া হয় একটি শুকনো খালে। ঝলসানো অবস্থায় পুলিশ সেই দেহ উদ্ধার করে।
প্রমোদের খুনের পর মূল অভিযুক্ত প্রবীণ ছাড়াও যে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁরা হলেন যশবন্ত খমকার, অনিল অসগেকর, দেবেন্দ্র এবং প্রমোদের গাড়ির চালক রমেশ দেবদুর্গে।
প্রমোদের খুনিদের ধরতে পুলিশকে সাহায্য করছিলেন তাঁর মা। মায়ের উপস্থিত বুদ্ধি এবং তৎপরতার জেরেই দ্রুত তদন্ত শুরু করতে পেরেছিল পুলিশ।
যে দিন রাতে প্রমোদকে খুন করা হয়, সে দিনই তাঁর মায়ের ফোনে একটি মেসেজ এসেছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘‘আয়ি, আজ বাড়ি ফিরতে দেরি হবে।’’ মেসেজ দেখেই সন্দেহে ভ্রু কুঁচকে যায় প্রমোদের মায়ের।
পুলিশকে তিনি জানান, তাঁর ছেলে কোনও দিন তাঁকে ‘আয়ি’ বলে ডাকেইনি। মা বলেই ডেকেছে বরাবর। তাই ওই ডাক শুনে খটকা লেগেছিল মায়ের মনে।
কালক্ষেপ না করে দ্রুত তিনি বিশ্রান্তওয়াড়ী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। প্রমোদের ফোনের সূত্র ধরে অভিযুক্তদের কাছে পৌঁছতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি এর পর।
মূলত তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিলম্ব করতেই প্রমোদের মায়ের ফোনে ওই মেসেজ পাঠিয়েছিলেন প্রবীণ ও তাঁর সঙ্গীরা, দাবি পুলিশের। যখন এই মেসেজ পাঠানো হয়, তখন প্রমোদ আদৌ বেঁচে ছিলেন কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
হরিদেবপুরের অয়ন মণ্ডলের মতোই পুণের প্রমোদ জগতপকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল ত্রিকোণ প্রেম। এক নারীকে কেন্দ্র করে দুই পুরুষের বচসা থেকে এই হত্যাকাণ্ড। ত্রিকোণ প্রেম করুণ পরিণতি ডেকে এনেছে বারবার।