হলুদ কার্ডে হুঁশিয়ারি। লাল কার্ডে সোজা মাঠের বাইরে। চিরাচরিত ভাবে ফুটবল মাঠে এই দু’টি রঙের কার্ডেরই চলন রয়েছে। তবে সম্প্রতি ফুটবলবিশ্বকে চমকে দিয়ে সাদা কার্ড দেখিয়েছেন পর্তুগালের এক মহিলা রেফারি। তাতেই নতুন সম্ভাবনার কথা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পর্তুগালের ঘরোয়া নিয়মে কি সায় দেবে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ফিফা?
শনিবার পর্তুগালের মহিলাদের একটি প্রতিযোগিতায় স্পোর্টিং লিসবন বনাম বেনফিকার ডার্বিতে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কাতারিনা ক্যাম্পোস। সে দিন লাল, হলুদের সঙ্গে তাঁর পকেটে ছিল সাদা রঙের কার্ডও। ওই ম্যাচেই অভিনব কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন কাতারিনা।
উইমেন্স কাপের শেষ আটের খেলায় সে দিন প্রথমার্ধের কিছু ক্ষণ বাকি ছিল। বেনফিকার মেয়েরা এগিয়েছিলেন ৩-০ গোলে। আচমকাই দর্শকদের দিকে মুখ করে সাদা কার্ড দেখিয়ে দিলেন রেফারি। টেলিভিশনের দর্শকেরা খানিকটা থতমত। মাঠের অন্য প্রান্তে বসা দর্শকরাও বুঝতে পারেননি, কী হল!
রেফারি সাদা কার্ড দেখানোর কিছু ক্ষণ পর বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলেন বহু দর্শক। তার আগে পর্যন্ত অনেকেই ভাবতে শুরু করে দেন, রেফারি কি ভুল করলেন? লাল বা হলুদ নয়, একেবারে সাদা কার্ড! তা-ও আবার ফুটবলার বা কোচ নন, কার্ড দেখেছেন দু’দলের মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা।
ঘটনাটা কী, খানিক পরে অবশ্য বোঝা যায়। দু’দলের মেডিক্যাল টিমের সদস্যদের আচরণকে কুর্নিশ জানাতেই সাদা কার্ড দেখিয়েছিলেন রেফারি।
আসলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ৩ গোলে পিছিয়ে পড়ায় অসুস্থবোধ করছিলেন এক লিসবন সমর্থক। মাঠে তখন পুরোদমে খেলা চলছে। ওই দর্শকের শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজনে তাঁর আশপাশে থাকা অন্যরা তৎপর হন।
অসুস্থ দর্শককে পরীক্ষা করতে তত ক্ষণে মাঠের ধারে পৌঁছে যান দু’দলের মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা। মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে একসঙ্গে তাঁকে পরীক্ষা করেন। সেখানেই শুরু হয় চিকিৎসা। তাতে খানিকটা সুস্থবোধ করেন ওই দর্শক।
দু’দলের মেডিক্যাল টিমের সদস্যদের এ হেন আচরণের তৎক্ষণাৎ তারিফ করেছেন রেফারি। সে জন্য পুরোদমে চলতে থাকা খেলা থামিয়ে সাদা কার্ড দেখিয়েছেন তিনি। ফুটবলে ফেয়ার প্লে-র নির্দশন হিসাবে তাঁর এ হেন আচরণ। তাতে কুর্নিশ জানিয়েছেন দর্শকেরাও।
পতুর্গিজ মাঠে কোনও বড়সড় প্রতিযোগিতায় সাদা কার্ড-দর্শন এই প্রথম। ফুটবলমাঠে ন্যায়নীতি, মূল্যবোধ বজায় রাখতে বা ফেয়ার প্লে-তে উৎসাহ দিতে সাদা কার্ডের চলন শুরু করেছিল পর্তুগাল’স ন্যাশনাল প্ল্যান ফর এথিক্স ইন স্পোর্টস (পিনেড)।
পতুর্গিজ ফুটবল ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে সে দেশের ঘরোয়া লিগে একে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও পর্তুগালের আগে এর প্রয়োগ দেখা গিয়েছিল প্রদর্শনী ম্যাচে। তবে কোনও প্রতিষ্ঠিত টুর্নামেন্টে সাদা কার্ডের প্রয়োগ এই প্রথম।
পর্তুগালের উইমেন্স কাপকে মহিলাদের এফএ কাপের সমতুল বলে মনে করা হয়। শনিবারের ম্যাচটি শেষমেশ ৫-০ গোলে জিতে নেয় বেনফিকা।
সাদা কার্ডের চলনে ফিফার কর্তারা কি সায় দেবেন? আবার প্রশ্ন উঠছে। মজার কথা হল, সাদা কার্ডের প্রয়োগে তাঁর সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন প্রাক্তন উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনি। ফুটবলারদের মধ্যে মতভেদ মেটাতে এই কার্ড ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
প্লাতিনির মতে, তেমন পরিস্থিতি হলে অর্থাৎ রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গেলে সাদা কার্ড দেখিয়ে ‘দোষী’ ফুটবলারকে ১০ মিনিটের জন্য মাঠের বাইরে পাঠানো উচিত। অনেকটা হকির নিয়মের মতো।
অনেকের মতে, সাদা কার্ডের মাধ্যমে অন্য লক্ষ্যপূরণ করা যেতে পারে। যুযুধান দু’দলের মধ্যে ফুটবল স্পিরিট বাড়াতে বা সদর্থক ভাবনার সঞ্চার করতে এর প্রয়োগ করতে পারেন রেফারি।
ফুটবলবিশ্বের একাংশের মতে, মাঠে সময় নষ্ট করা, গোলের পর উচ্ছ্বাস দেখানোর নামে মাত্রাতিরিক্ত সময় নেওয়া, আহত ফুটবলারের চিকিৎসায় সময় নিলে অথবা ফাউল রুখতেও সাদা কার্ডের প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পর্তুগালের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কি সাদা কার্ডের প্রচলন শুরু হবে? ফুটবল ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে প্রথম বার লাল ও হলুদ কার্ডের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। মূলত, ফাউল বা অন্যান্য গোলযোগ থামাতে এই প্রয়োগ করার কথা ভাবা হয়েছিল। তবে সাদা কার্ডের ব্যবহারে সায় দেবে কি না, তা নিয়ে এখনও ইঙ্গিত দেয়নি ফিফা।