কলকাতায় মামলা লড়তে এসে এক মহিলা আইনজীবীর তাড়া খেলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁরই দলের সাংসদ অধীর চৌধুরীর করা একটি মামলায় তিনি অধীরের বিরোধী পক্ষের আইনজীবী। কলকাতা হাই কোর্টে কংগ্রেসের আইনজীবী সেলের সদস্যদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তাঁকে ‘মমতার দালাল’ বলে স্লোগান ওঠে। এক মহিলা আইনজীবী নিজের কোট খুলে ফেলে তেড়েও যান চিদম্বরমের দিকে। এমন হেনস্তার মুখে অবশ্য এই প্রথমবার পড়লেন না তিনি।
দিল্লিতে ২০০৯ সালে একটি সাংবাদিক বৈঠকে চিদম্বরমকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন এক সাংবাদিক। তখন তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। চিদম্বরম তাঁকে ক্ষমা করে দেন। নিন্দকেরা অবশ্য বলেছিলেন, সে সময় দেশে লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। ক্ষমাশীলতা দেখিয়ে জনতার আবেগ নিজের দিকে টানতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা চিদম্বরম।
প্রকাশ্যে হেনস্তার শিকার হয়েছেন দেশবিদেশের বহু রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন জর্জ বুশ অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় তাঁর দিকে ধেয়ে আসা জুতোকে পাশ কাটিয়েছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরঁর সঙ্গে হাত মেলানোর ছলে তাঁকে সজোরে থাপ্পড় মেরেছিলেন এক ব্যক্তি।
ভারতে এ ধরনের হামলার শিকার হয়েছেন রাহুল গাঁধী থেকে শুরু করে অরবিন্দ কেজরীবাল। অরবিন্দকে লক্ষ্য করে কালি ছিটিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। দিল্লির রাস্তায় জোড়-বিজোড় সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় জুতোও ছোড়া হয় তাঁকে লক্ষ্য করে। রাহুলের দিকে জুতো ছোড়া হয় উত্তরপ্রদেশে কৃষকদের জন্য আয়োজিত তাঁর এক জনসভায়। বাংলাতেও এমন ঘটনার বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে।
সিপিএমের তাড়া খেয়ে বর্ধমানের মঙ্গলকোটে মাঠ পেরিয়ে দৌড়তে হয়েছিল মানস ভুইয়াঁকে। ২০০৯ সালের ঘটনা। মঙ্গলকোটে এক সিপিএম নেতা খুনের পর বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৎকালীন শাসকদল সিপিএমের বিরুদ্ধে। বর্তমান তৃণমূল নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী মানস তখন কংগ্রেসের বিধায়ক। তিনি অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে ঘটনাস্থল সরেজমিনে দেখতে যান। কিন্তু অনেক আগেই আটকে দেওয়া হয় তাঁদের। তাড়া করা হয়। আহতও হয়েছিলেন মানস-সহ তিনজন।
২০০৫ সালের ১৫ মে কলকাতায় কংগ্রেসেরই প্রদেশ দফতর বিধান ভবনে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কলকাতা পুরভোটে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিক্ষোভে নেমেছিলেন কংগ্রেসের একদল কর্মী-সমর্থক। প্রণব বিধান ভবনে ঢোকার সময় তাঁদের হাতেই নিগৃহীত হতে হয় তাঁকে।
পাহাড়ে দিলীপ ঘোষকে হেনস্থার মুখ পড়তে হয় ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর। তখন তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। দার্জিলিঙে দিলীপের মাইক কেড়ে নেওয়া হয়। থানায় অভিযোগ জানাতে যাওয়ার পথেও তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করা হয় রাস্তার উপর। দিলীপের আপ্ত সহায়ক দেব সাহা এবং দার্জিলিঙের বিজেপি নেতা রাকেশ পোখরেলকে রাস্তায় ফেলে মারধরও করা হয় সে বার।
বর্তমানে জয়প্রকাশ মজুমদার তৃণমূলের নেতা। তবে ২০১৯ সালে তিনি ছিলেন বিজেপিতে। তখন নদিয়ায় ভোটের প্রচার করতে গিয়ে হেনস্তার মুখে পড়েন তিনি। জয়প্রকাশ তখন করিমপুরের বিধানসভা উপনির্বাচনের বিজেপি প্রার্থী। টিভিতে দেখানো ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, তাঁকে মাটিতে ফেলে পদাঘাত করছেন কয়েকজন।
গত বিধানসভা নির্বাচনে হুগলির আরামবাগ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হন সুজাতা খাঁ। ৬ এপ্রিল ভোট চলার সময় আরান্ডির মহল্লাপাড়া এলাকায় একটি বুথ থেকে অভিযোগ পেয়ে সেখানে যান সুজাতা। তখনই বাঁশ, লাঠি নিয়ে তাড়া করে একদল। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, বিজেপি কর্মী-সমর্থকরাই এই হামলা চালিয়েছেন।