Farmers' Protest in Delhi

কংক্রিট, কাঁটাতার, ড্রোন, পুলিশের বেড়াজাল টপকে লক্ষ্যে পৌঁছবে কি কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযান?

কৃষকদের মিছিল নিয়ে সতর্ক দিল্লিও। দিল্লির সীমানা এলাকায় জায়গায় জায়গায় কংক্রিটের দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া এবং পেরেক গাঁথা পাটাতন। মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৯
Share:
০১ ২৯

আবারও পথে নেমেছেন হাজার হাজার কৃষক। একাধিক দাবিতে আজ দিল্লি যাত্রার ডাক দিয়েছিলেন পঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকেরা। ৩৫০টির বেশি কৃষক সংগঠন আন্দোলনে শামিল হবে বলে জানা গিয়েছিল। কৃষক আন্দোলন প্রতিরোধের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা করেছিল স্থানীয় প্রশাসনও।

০২ ২৯

হরিয়ানা সরকার তড়িঘড়ি দু’টি বড় স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী জেলে পরিণত করে। কৃষকেরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তাঁদের আটক করে ওই দু’টি জেলে রাখা হবে বলে সূত্রের খবর ছিল।

Advertisement
০৩ ২৯

কৃষকদের কর্মসূচির আগে দিল্লিতে এক মাসের জন্য জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। ১২ মার্চ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে রাজধানীতে। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত ৫০ কোম্পানি পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা।

০৪ ২৯

কৃষকদের মিছিল নিয়ে সতর্ক দিল্লি। দিল্লির সীমানা এলাকার জায়গায় জায়গায় কংক্রিটের দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া এবং পেরেক গাঁথা পাটাতন। মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।

০৫ ২৯

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লির সীমানায় অবস্থানে বসেছিলেন কৃষকেরা। পরে তিন আইনই বাতিল করা হয়। আর এই আন্দোলনে নামা কৃষকদের দাবি ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে।

০৬ ২৯

একই সঙ্গে সমস্ত কৃষিঋণ মকুব করতে হবে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। ২০২০-২১ সালের প্রতিবাদে কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

০৭ ২৯

শেষ মুহূর্তে প্রতিবাদী কৃষকদের বুঝিয়ে আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল কেন্দ্র। সোমবার মধ্যরাতে চণ্ডীগড়ে কৃষকদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা এবং কেন্দ্রীয় ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকের শেষেও কোনও রফাসূত্র মেলেনি।

০৮ ২৯

কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর কৃষকনেতা তথা ‘পঞ্জাব কিসান মজদুর সংঘর্ষ কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক সারওয়ান সিংহ পান্ধের জানান, তাঁর সংগঠন ‘দিল্লি চলো’ অভিযানে শামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখছে।

০৯ ২৯

তার পরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, “আমাদের দাবি সরকার পূরণ করবে, এমনটা আমরা ভাবিনি। যদি সরকার আমাদের কিছু দিত, তা হলে আমরাও আমাদের আন্দোলনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতাম।”

১০ ২৯

সোমবার রাত ১১টার পর বৈঠকে বসে ২০২০ সালের ইলেকট্রিসিটি আইন বাতিল করার বিষয়ে কৃষক নেতাদের আশ্বস্ত করেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরির ঘটনায় কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলেও জানানো হয়।

১১ ২৯

কিন্তু কৃষকদের মূল তিনটি দাবি— ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য, কৃষিঋণ মকুব এবং স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাবের রূপায়ণ নিয়ে দু’পক্ষ কোনও স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

১২ ২৯

বৈঠকে যোগ দেওয়া কৃষকদের এক প্রতিনিধির অভিযোগ, দু’বছর আগে তাঁদের অর্ধেক দাবি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কেন্দ্র কিছুই করেনি। কৃষকেরা শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও সরকার সময় নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ তাঁর।

১৩ ২৯

কৃষকদের দু’টি বড় সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চা এবং কিসান মজদুর মোর্চা গত ডিসেম্বরেই দাবি আদায়ে ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের ডাক দেয়। দু’টি সংগঠনের আওতায় মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের সাড়ে তিনশোটি ছোট-বড় কৃষক সংগঠন রয়েছে।

১৪ ২৯

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শুরু হয় প্রতিবাদী কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযান। পঞ্জাবের ফতেগড় সাহিব থেকে অভিযান শুরু হয়। মিছিলের অগ্রভাগে ছিল কালো ত্রিপলে ঢাকা অজস্র ট্র্যাক্টর। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন পঞ্জাবের সাঙরুর কৃষকেরা। প্রতিবাদী কৃষকদের নেতৃত্বে দুই কৃষক নেতা সারওয়ান সিংহ পান্ধের এবং জগজিৎ সিংহ দাল্লেওয়াল।

১৫ ২৯

দুপুর সাড়ে ১২টা। পাঁচ হাজার কৃষক, দেড় হাজারেরও বেশি ট্র্যাক্টর এবং ৫০০ গাড়ি নিয়ে দিল্লি অভিমুখে রওনা হওয়ার পর প্রথম বাধার মুখে পড়ে অম্বালার কাছে। ওই অঞ্চল রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানায়। পঞ্জাব এবং হরিয়ানার মধ্যবর্তী শম্ভু সীমানায় প্রতিবাদী কৃষকদের রুখতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ব্যবহার করে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী।

১৬ ২৯

ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় পুলিশ এবং প্রতিবাদী কৃষকদের মধ্যে। এমনিতেই পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা এবং দিল্লিতে ঢোকার সমস্ত রকম প্রবেশপথ ব্যারিকেড, কাঁটা দেওয়া তার জড়িয়ে দুর্গের চেহারা দেওয়া হয়েছে। যদিও কৃষক সংগঠনগুলি হুঁশিয়ারির সুরে তখন জানায়, তারা মাত্র আধ ঘণ্টার পরে সমস্ত ব্যারিকেড তুলে ফেলবে।

১৭ ২৯

দুপুর আড়াইটে। পঞ্জাব থেকে ব্যারিকেড ভেঙে হরিয়ানায় ঢোকার চেষ্টা করেন কৃষকেরা। পাথর ছোড়ারও অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে ড্রোনের মাধ্যমে প্রতিবাদী কৃষকদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে পুলিশ। সিমেন্টের ব্যারিকেডের মাধ্যমে কৃষকদের আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। প্রতিবাদী কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামানও ব্যবহার করা হয়।

১৮ ২৯

প্রথমে প্রতিবাদী কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযানে শামিল না হলেও ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত মঙ্গলবার দুপুরে জানান, তিনি প্রতিবাদী কৃষকদের পাশে রয়েছেন। সরকার সমস্যা তৈরি করলে তিনি যে প্রতিবাদী কৃষকদের পাশে দাঁড়াবেন, তা-ও স্পষ্ট করে দেন রাকেশ। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন দুই কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েত এবং গুরনাম সিংহ চারুনি।

১৯ ২৯

নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখানোর সুযোগ করে দিতে হবে কৃষকদের। পঞ্জাব, হরিয়ানা— দুই রাজ্য এবং কেন্দ্রকে এই নির্দেশই দিয়েছে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট।

২০ ২৯

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন জারি রাখার নানা রকম প্রস্তুতি নিয়েই রাজধানীর দিকে অগ্রসর হয়েছেন হাজার হাজার কৃষক।

২১ ২৯

শুধু পঞ্জাব থেকেই ১৫০০টি ট্র্যাক্টর, ৫০০ গাড়ি নিয়ে দিল্লি অভিযানে এসেছেন কৃষকেরা। ওই গাড়িতেই প্রায় ছ’মাসের খাবার নিয়ে এসেছেন তাঁরা। ফলে আলোচনা শুরু হয়েছে, তবে কি আরও একটি দীর্ঘ সময়ের কৃষক আন্দোলন দেখতে চলেছে দিল্লি-সহ গোটা দেশ? ২০২০ সালে দিল্লির সীমানায় যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন কৃষকেরা, সেই আন্দোলন ১৩ মাস ধরে চলেছিল।

২২ ২৯

পঞ্জাবের গুরদাসপুরের কৃষক হরভজন সিংহ সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, “সুচ থেকে হাতুড়ি, সব কিছু ট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। ব্যারিকেড ভাঙার যন্ত্রও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা ছ’মাসের জন্য খাবার নিয়ে রওনা দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে প্রচুর জ্বালানিও রয়েছে।” আরও এক কৃষক জানিয়েছেন, “এ বার যত দিন না পর্যন্ত আমাদের দাবিদাওয়া মেনে না নেওয়া হবে, তত দিন আন্দোলন থেকে পিছু হটব না।”

২৩ ২৯

ফের সংবাদ শিরোনামে দিল্লির গাজিপুর, সিঙ্ঘু এবং টিকরি সীমানা। আন্দোলন এখনও দিল্লিতে না পৌঁছলেও রাজধানীতে ঢোকার প্রায় সমস্ত প্রবেশপথকেই দুর্গের চেহারা দিয়েছে পুলিশ। অধিকাংশ গাড়িকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তীব্র যানজট দিল্লির গাজিপুর এবং চিল্লা সীমানায়। দিল্লি থেকে হরিয়ানার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়কেও দেখা যায় যানজট।

২৪ ২৯

কৃষকদের বিক্ষোভের আবহে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয় দিল্লিকেও। বন্ধ করে দেওয়া হয় লালকেল্লা এবং দিল্লির দু’টি মেট্রো স্টেশন। অন্তত আটটি স্টেশনের একাধিক দরজাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২৫ ২৯

দিল্লি পুলিশের ডিসি (উত্তর-পূর্ব) অঙ্কিত সিংহ জানিয়েছেন, সব রকমের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ট্র্যাক্টর-ট্রলির প্রবেশ। কৃষকদের আটকাতে দু’হাজার পুলিশকর্মী এবং পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে।

২৬ ২৯

শম্ভু সীমানা থেকে এখনও ২০০ কিলোমিটার দূরে দিল্লি। সিঙ্ঘু, টিকরি এবং গাজ়িপুর। তিন সীমানা বেশ কয়েক স্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। বিশাল বিশাল কংক্রিটের ব্যারিকেড নিয়ে এসে সীমানাগুলিতে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই ব্যারিকেডের আগে লাগানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।

২৭ ২৯

এ ছাড়াও ট্র্যাক্টর ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে পড়লেও যাতে এগোতে না পারে, তার জন্য রাস্তায় পেরেক পোঁতা হয়েছে। তার পরের নিরাপত্তা স্তর হিসাবে রাখা হয়েছে বড় বড় ট্রাক। এই ট্রাকগুলিকে সার দিয়ে দাঁড় করিয়ে সীমানাগুলিকে একেবারে নিশ্ছিদ্র দুর্গে পরিণত করা হয়েছে।

২৮ ২৯

মোতায়েন করা হয়েছে ৫০ কোম্পানির বেশি আধাসেনা। থাকছে দিল্লি পুলিশও। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, হেলমেট, ব্যাটন এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত থাকবে তারা। দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, কংক্রিটের ব্যারিকেড তো থাকছেই, তার পাশাপাশি থাকছে লোহার ব্যারিকেড, জার্সি ব্যারিয়ার্স, বিশাল বিশাল শিপিং কন্টেনার, হাইড্রা ক্রেন, জলকামান, বাস এবং অন্যান্য গাড়ি।

২৯ ২৯

বেশ কয়েকটি স্তরে এদের সজ্জিত রাখা হয়েছে। হরিয়ানা সীমানা পেরিয়ে যদি কৃষকদের র‌্যালি দিল্লি সীমানায় পৌঁছয়, তা হলে কি ‘দুর্ভেদ্য’ স্তর ভেঙে ফেলতে পারবে, না কি সীমানাতেই থমকে যাবে সেই অভিযান, তা বলবে আগামী দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement