ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে সংঘাত অব্যাহত। অনেক দিন ধরেই ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় বোমাবর্ষণ করছে রুশ সেনা। এই আবহে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াল রাশিয়ার কাছের দেশ পোল্যান্ডের অভিযোগে।
পোল্যান্ডের অভিযোগ, সোমবার ভোরে রাশিয়া যখন ইউক্রেনের উপর হামলা চালাচ্ছে, তখন একটি ড্রোন জাতীয় বস্তু ঢুকে পড়েছিল তাদের আকাশসীমাতেও।
পোল্যান্ডের দাবি, ওই ‘ড্রোন’ ইতিমধ্যেই তাদের ভূখণ্ডে আছড়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেটির খোঁজে তল্লাশিও চালানো হচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার ভোরে ইউক্রেনের মাটিতে আছড়ে পড়েছে রাশিয়ার ১০০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ১০০টি ড্রোন।
ইউক্রেনের শক্তিকেন্দ্রগুলিতেও বেশ কয়েকটি হামলা চালানো হয়েছে বলে খবর। ইউক্রেনের সরকারি আধিকারিকদের দাবি, সোমবার ভোরের হামলায় সে দেশে কমপক্ষে পাঁচ জন নিহত হয়েছেন।
এরই মধ্যে আবার পোল্যান্ডের আকাশসীমাতেও ‘ড্রোন হামলা’র অভিযোগ উঠে এল।
পোলিশ সেনাবাহিনীর অপারেশনাল কমান্ডের মুখপাত্র জ্যাসেক গোরিসজ়েউস্কি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘যেটি পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ঢুকেছে সেটি সম্ভবত ড্রোন। আমরা অন্তত তা-ই মনে করছি। কারণ উড়ানযানের গতিপথ এবং গতি দেখে বোঝা গিয়েছে যে, সেটি ক্ষেপণাস্ত্র ছিল না।’’
গোরিসজ়েউস্কি আরও জানিয়েছেন, ১০০ সেনা এবং একটি হেলিকপ্টার দিয়ে ‘ড্রোন’টির অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
তবে ওই ড্রোন রাশিয়া থেকে ছোড়া হয়েছে না ইউক্রেনের দিক থেকে ছোড়া হয়েছে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছে পোল্যান্ড।
এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে গোরিসজ়েউস্কি জানিয়েছেন, পোলিশ আকাশসীমায় স্থানীয় সময় ভোর ৪টে ৪৩ মিনিটে প্রবেশ করেছিল ওই বস্তু। ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে তা রাডারের গোচরে চলে আসে।
পোলিশ সেনাবাহিনীর অপারেশনাল কমান্ডের মুখপাত্রের কথায়, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত খারাপ আবহাওয়ার কারণে এটি পরিষ্কার ভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই ওই বস্তুটিকে গুলি করে ধ্বংস করা যায়নি।’’
এর আগে নেটো সদস্য পোল্যান্ড জানিয়েছিল, ইউক্রেনের উপর রুশ হামলার কারণে দেশের দক্ষিণে প্রচুর যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে এবং তারা যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তার পরে এ বার নিজেদের আকাশসীমাতেই ড্রোনজাতীয় বস্তু প্রবেশের দাবি করল পোল্যান্ড।
এই আবহে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ইউরোপ জুড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করা বস্তু যদি রুশ ড্রোন বলে প্রমাণিত হয়, তা হলে নতুন করে অশান্তি ছড়াতে পারে ইউরোপের মাটিতে।
অন্য দিকে পোল্যান্ড আবার নেটোর সদস্য, আমেরিকার বন্ধু দেশ। তাই বন্ধু দেশের আকাশসীমায় বিদেশি ‘ড্রোন’ প্রবেশের ঘটনা আমেরিকা ভাল চোখে দেখবে না বলেও বিশেষজ্ঞদের মত।
যদিও রাশিয়া বা ইউক্রেন, কেউই এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেনি।
পুরো বিষয়টিতে আমেরিকা কী পদক্ষেপ করবে, সে দিকেও নজর রয়েছে ইউরোপের দেশগুলির।
তবে এর আগে একাধিক বার তাদের আকাশে বিদেশি ক্ষেপণাস্ত্র প্রবেশের অভিযোগ তুলেছে পোল্যান্ড।
২০২২ সালে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর একটি ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ পোল্যান্ডের গ্রাম প্রজেওডোতে আঘাত হানে। এতে দু’জন নিহত হন। এর পরেই ইউক্রেনকে সতর্ক করে পোল্যান্ড।
২০২৩-এও পোল্যান্ড দাবি করেছিল, একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র তাদের আকাশসীমায় ঢুকেছে। সে বছরের এপ্রিলে জামোস্ক নামের এক গ্রামের একটি জঙ্গলে সেই ক্ষেপণাস্ত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।