‘হাম তো ফকির আদমি হ্যায়, ঝোলা লেকে চল পড়েঙ্গে জি’(আমি গরিব মানুষ, কিছু হলেই কাঁধে ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়ব), এক জনসভায় দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এবং তাঁর বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে সম্প্রতি সেই ‘ফকির’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে থাকা সম্পত্তির হিসাব দিল কেন্দ্র। আর সেই হিসাব বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২.২৩ কোটি টাকারও বেশি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও)-এর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-এর ৩১ মার্চ অবধি তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২ কোটি ২৩ লক্ষ ৮২ হাজার ৫০৪ টাকা।
কেন্দ্রের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, মোদীর এখন কোনও নিজস্ব বাড়ি, গাড়ি, জমি কিছুই নেই। অর্থাৎ তাঁর নামে থাকা স্থাবর সম্পত্তি নেই। তবে গত বছর পর্যন্ত, প্রধানমন্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা।
মোদীর নামে ১৪ হাজার ১২৫ বর্গফুটের যে বাসযোগ্য জমি ছিল, তা তিনি অন্য তিন জনের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় কিনেছিলেন। এই জমিটিতে তিন জনেরই সমান ভাগ ছিল। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০২-এর অক্টোবর মাসে এই জমি কিনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সর্বশেষ নথিতে উল্লেখ করা রয়েছে, গাঁধীনগরের এই জমিতে প্রত্যেকের ২৫ শতাংশ করে ভাগ ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী এই জমি দান করে দেওয়ায় এই জমিতে তাঁর আর কোনও অধিকার নেই।
মোদীর সম্পত্তির হিসাবের নথি অনুযায়ী শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডে তাঁর কোনও বিনিয়োগ নেই। এমনকি, নিজস্ব কোনও গাড়িও নেই মোদীর।
তাঁর ব্যাঙ্কে জমা টাকার পরিমাণও ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৪৮০ থেকে কমে ৪৬ হাজার ৫৫৫ টাকা হয়েছে।
তবে গত এক বছরে প্রধানমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ আগের তুলনায় ২৬ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা বেড়েছে।
ফিক্সড ডিপোজিট (স্থায়ী আমানত), ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটস, জীবন বিমা, ব্যাঙ্কে জমা টাকা, গয়না ও হাতে থাকা নগদ টাকা মিলিয়ে মোদীর অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দেখানো হয়েছে।
সদ্যপ্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা মূল্যের চারটি সোনার আংটি রয়েছে। এই চারটি আংটির মোট ওজন ৪৫ গ্রাম।
২০১২ সালে এল অ্যান্ড টি ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল বন্ডে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন মোদী।
২০২২ সালের ৩১ মার্চ অবধি করা হিসাব অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর কাছে থাকা মোট নগদের পরিমাণ, ৩৫ হাজার ২৫০ টাকা। এই অঙ্ক গত বছরের তুলনায় কমেছে। গত বছরের ৩১ মার্চে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নগদ টাকা ছিল মোট ৩৬ হাজার ৯০০ টাকা।
পোস্ট অফিসে জমা থাকা জাতীয় সঞ্চয় শংসাপত্রের মূল্য ৯ লক্ষ ৫ হাজার ১০৫ টাকা।
১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩০৫ টাকার জীবনবিমাও রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর।
পিএমও থেকে দেওয়া তথ্যে উল্লেখ রয়েছে মোদীর স্ত্রী যশোদাবেনেরও। তবে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ জানা নেই বলেই দেখানো হয়েছে এই তথ্যে।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও তাঁদের সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন।
এই হিসাব অনুযায়ী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা। একই সঙ্গে তাঁর নামে থাকা অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা।
এ ছাড়াও সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন, ধর্মেন্দ্র প্রধান, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, আর কে সিংহ, হরদীপ সিংহ পুরি, পরশোত্তম রুপালা এবং জি কিশান রেড্ডিও। সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভিও।