গুজরাতের দ্বারকা গিয়ে সমুদ্রের গভীরে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পুজো করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হিন্দু পুরাণ মতে, আরব সাগরের তীরে থাকা দ্বারকা শহর এক সময় শ্রীকৃষ্ণের বাসস্থান ছিল। ওই শহরেই রয়েছে দ্বারকাধীশ মন্দির। রবিবার সেখানে গিয়ে প্রার্থনা করেন মোদী। পরে ‘সমুদ্রের অতলে থাকা’ প্রাচীন দ্বারকা শহরে গিয়েও পুজো করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রাচীন দ্বারকা শহরে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে ভক্তি অর্পণ করা ‘ঐশ্বরিক অভিজ্ঞতা’ বলে উল্লেখ করেছেন মোদী। বলেছেন, ‘আধ্যাত্মিক মহিমার একটি প্রাচীন যুগের সঙ্গে সংযোগ’ অনুভব করেছেন।
এক্স হ্যান্ডলে সমুদ্রের তলায় পুজো করার ছবি পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘জলের নীচে ডুবে থাকা দ্বারকা শহরে প্রার্থনা করা এক ঐশ্বরিক অভিজ্ঞতা। আমি আধ্যাত্মিক মহিমা এবং ভক্তির একটি প্রাচীন যুগের সঙ্গে সংযোগ অনুভব করেছি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।’’
প্রধানমন্ত্রীর ‘শ্রীকৃষ্ণের হারানো শহর’ অন্বেষণ করতে যাওয়ার ছবি রবিবারই প্রকাশ্যে এসেছে।
সেই ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, গেরুয়া বস্ত্র পরে এবং একগুচ্ছ ময়ূরের পালক নিয়ে আরব সাগরে ডুব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পঞ্চকুনি সৈকতে পৌঁছে স্কুবা ডাইভিং করে দ্বারকা নগরীর দর্শন করেন মোদী। নিরাপত্তার জন্য সঙ্গে ছিল স্কুবা গিয়ার।
সমুদ্রের নীচে পুজো করার সময়ের ছবিও ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে শেয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সমুদ্রের নীচে পুজো করার পাশাপাশি ময়ূরের পালকগুলি শ্রীকৃষ্ণকে অর্পণ করেছেন মোদী। সেই পালকগুলি পুঁতে দিয়ে এসেছেন সমুদ্রের তলায়।
পুরাণ অনুযায়ী, দ্বারকার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত শ্রীকৃষ্ণ। মনে করা হয়, কংসকে নিধনের পর দ্বারকায় এসে বসবাস শুরু করেন তিনি।
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কৃষ্ণ পৃথিবী থেকে বিদায়ের পর দ্বারকা শহরকে ‘গ্রাস করে নেয়’ সমুদ্র।
দ্বারকা ‘দর্শনের’ পরে একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘আজ আমি সেই মুহূর্তগুলি অনুভব করেছি যা আমার সঙ্গে চিরকাল থাকবে। আমি সমুদ্রের গভীরে গিয়ে প্রাচীন দ্বারকা শহর দর্শন করেছি। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জলের নীচে লুকিয়ে থাকা দ্বারকা শহর সম্পর্কে অনেক কিছু লিখেছেন। আমাদের ধর্মগ্রন্থেও, দ্বারকা সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা। বলা হয় যে, এই শহরে একটি সুন্দর প্রবেশদ্বার ছিল। শহরে উঁচু উঁচু ভবন ছিল। ভগবান কৃষ্ণ নিজেই এই শহর তৈরি করেছিলেন।’’
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সমুদ্রের গভীরে গিয়ে আমি ঈশ্বরকে অনুভব করেছি। দ্বারকাধীশকে প্রণাম করেছি। আমি আমার সঙ্গে ময়ূরের পালক নিয়ে গিয়েছিলাম এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পায়ের কাছে সেই পালক অর্পণ করেছি। আমি সবসময়ই দ্বারকা যেতে চেয়েছিলাম। সেই পবিত্র ভূমি স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম। আমি আজ আবেগে পরিপূর্ণ। এক দশকের পুরনো স্বপ্ন পূরণ হল।’’
দ্বারকাধীশ মন্দিরে পুজো করতে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী গুজরাতে ‘সুদর্শন সেতু’ উদ্বোধন করেন। এটি দেশের দীর্ঘতম কেব্ল সেতু। ২.৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি ওখা এবং ভেট দ্বারকাকে জুড়েছে। চার লেনের সেতুটি ২৭.২০ মিটার চওড়া। প্রতিটি লেনের পাশে থাকছে ২.৫০ মিটার চওড়া ফুটপাথ। সেতুর দু’দিকেই রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের প্রতিকৃতি।
২০১৭ সালে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন মোদীই। সুদর্শন সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৯৭৯ কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, এই সেতুর উপরে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল বসানো হয়েছে। তা থেকে প্রতি দিন ১ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ তৈরি হবে।
গুজরাত সরকার এর আগে দ্বারকায় একটি বিশেষ ডুবোজাহাজ পরিষেবা চালু করার কথা ঘোষণা করেছিল। সে রাজ্যের সরকার জানিয়েছিল, ভক্তরা যাতে প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে যেতে পারেন, তাই ডুবোজাহাজ পরিষেবা চালু হবে।