কখনও পাখির ডানার ঝাপটা, আবার কখনও যান্ত্রিক গোলযোগ— আকাশে বিমান-বিভ্রাটের এমন ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত রয়েছে। আবার আবহাওয়া খারাপের জেরে মাঝ আকাশে বিমান দুর্ঘটনার নজিরও রয়েছে। তবে যাত্রীদের জীবন হাতে নিয়ে যিনি এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যে আকাশে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিমানটি, সেই পাইলটের যদি মাঝ আকাশে শারীরিক সমস্যা হয়, তা হলে যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।
পাইলটের অসুস্থতার জন্য মাঝ আকাশে বিমান বিপত্তির নজিরও রয়েছে। যে ঘটনাগুলি জানলে শিউরে উঠবেন। তেমন দু’টি ঘটনার বিবরণই এখানে তুলে ধরা হল।
গত বছর অগস্ট মাসে এমনই এক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল। মাঝ আকাশে তখন বিমান উড়ছে, আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন পাইলট। কয়েক মুহূর্তে হুলস্থুল পড়ে গিয়েছিল বিমানে।
২০২১ সালের ২৭ অগস্ট মাসকাট থেকে ঢাকা ফিরছিল বিমান বাংলাদেশের উড়ান। আচমকাই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন পাইলট।
ওই বিমানে ১২৬ জন যাত্রী ছিলেন। পাইলটের অসুস্থতার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন যাত্রীরা।
তড়িঘড়ি জরুরি অবতরণ করানো হয় বিমানটিকে। নামানো হয় মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। তার পর পাইলটকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
বিমান কর্তৃপক্ষের তরফে পরে জানানো হয়েছিল যে, বিমানটি যখন রাইপুরের কাছাকাছি ছিল, সে সময় পাইলটের অসুস্থতার জন্য জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন সহ পাইলট।
সে কারণে যোগাযোগ করা হয় কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে (এটিসি)। কলকাতা এটিসির তরফে ওই বিমানটিকে নাগপুরে অবতরণের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই মতো নাগপুরে জরুরি অবতরণ করানো হয় বিমানটির।
মাঝ আকাশে যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। এ যেন কার্যত মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা। তবে সহ পাইলট ও বিমানের ক্রু সদস্যদের তৎপরতায় ওই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়। যার জেরে ১২৬ জন যাত্রীর প্রাণ বেঁচে যায়।
মাঝ আকাশে পাইলটের অসুস্থতার জেরে বিমানে জরুরি অবতরণের ঘটনার উদাহরণ আরও রয়েছে। বিমান বাংলাদেশের উড়ানের মতোই আরও একটি যাত্রিবাহী বিমানের পাইলটও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। যার জেরে বিপত্তি ঘটেছিল।
২০১৯ সালে এ রকম এক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিল রাশিয়ার একটি বিমান। মস্কো থেকে আনাপার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল দ্য এরোফ্লট বিমান।
তখন মাটি থেকে বিমানটির উচ্চতা ছিল ৩৩ হাজার ফুট। এমন সময় মাঝ আকাশে আচমকাই ওই বিমানের পাইলট হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। যার জেরে বিমানটির জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন সহ পাইলট। সেই মতো প্লেটোভ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামানো হয় উড়ানটিকে। যার জেরে বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ায় বিমানটি।
বিমানটির জরুরি অবতরণের কারণে কোনও যাত্রী ও ক্রু সদস্য আহত হননি। নিরাপদেই জরুরি অবতরণ ঘটে।
বিমানটির অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ পাইলটকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে পাইলটের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর বিমান কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় যে, ওই পাইলটের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টে কোনও অসুস্থতার কথা উল্লেখ ছিল না। বিমানে ওঠার আগে পাইলটের ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর সময়ও কিছু ধরা পড়েনি।
এই ঘটনায় পরে তদন্ত শুরু করে ‘দ্য রাশিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি’। পাইলটের মৃত্যুর কারণ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়া বলে জানানো হয়।
যাঁর হাতে জীবন রেখে আকাশে উড়ে চটজলদি নিজেদের গন্তব্যে যান যাত্রীরা, সেই পাইলটই যদি আচমকা মাঝআকাশে অসুস্থ হন, তা হলে যে কোনও সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তাই আরও সতর্ক বিমানসংস্থাগুলি।
বস্তুত, ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’-এর বেশ কিছু ঘটনা নজরে এসেছে। জবলপুরে বাস চালাতে চালাতেই আচমকা হার্ট অ্যাটাক হয় চালকের। স্টিয়ারিংয়ের উপর ঢলে পড়েন তিনি। নিয়ন্ত্রণহীন বাস তার পর সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা একের পর এক গাড়িতে ধাক্কা মারে। এই ঘটনায় মৃত্যু হয় এক পথচারীর, আহত হন একাধিক। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হার্ট অ্যাটাকেই চালক হরদেব পাল (৬০)-এর মৃত্যু হয়েছে। মৃত চালক ছিলেন মধ্যপ্রদেশের জবলপুরের বাসিন্দা।
সম্প্রতি আরও একটি হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনা সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে। কাটনির সাই মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন রাজেশ মেহানি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, সাইয়ের বিগ্রহের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে তিনি সামনে এসে দাঁড়ান। তার পর বিগ্রহের সামনে মাথা নত করে বসে পড়েন। এর পর বেশ কয়েক সেকেন্ড কেটে গেলেও মাথা তোলেননি তিনি।
তবে বিমান চালাতে চালাতে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা মারাত্মক আকার নিতে পারে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়তে পারে। এই প্রতিবেদনে বর্ণনা করা দু’টি ঘটনা সে দিকেই ইঙ্গিত করে।