ওড়িশার বালেশ্বরে রেললাইন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে যাত্রীবাহী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কামরা। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩, আহত ৯০০ জনের বেশি।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে যে ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে শুধু ভয়াবহতা আর হাহাকার। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে লাশ। কেউ স্বজন হারিয়ে কাঁদছেন, কারও চোখেমুখে মৃত্যুকে কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করার আতঙ্ক।
একটি তত্ত্ব বলছে, বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে চেন্নাইগামী ২৩ কামরার করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটি সামনে থাকা একটি মালগাড়িকেও ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনার প্রতিঘাতে মালগাড়ির উপরে উঠে যায় করমণ্ডলের কামরা।
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ছিন্নভিন্ন কামরাগুলি ছিটকে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে ও নয়ানজুলিতে। সেই লাইন দিয়ে তখন আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনও বেলাইন কামরাগুলির উপর এসে পড়ে।
ঘটনাস্থলের ছবিতে দেখা গিয়েছে, ট্রেনের কামরা কাত হয়ে পড়ে আছে রেললাইনের ধারে। তার সামনেই দুমড়ে-মুচড়ে দলা পাকিয়ে গিয়েছে দেহ। পাশে ছড়িয়ে আছে জামাকাপড়, ব্যাগপত্র।
রেললাইন থেকে বেশ খানিকটা দূরে উল্টে থাকা ট্রেনের বগি দেখতে সকাল সকাল ভিড় করেছেন অনেকে। স্থানীয় কৌতূহলীরা ট্রেনের কাছে গিয়ে ঘটনার বীভৎসতা চাক্ষুষ করছেন।
সন্ধ্যা থেকে একটানা উদ্ধারকাজে নেমে ক্লান্ত উদ্ধারকারীরাও। রেললাইনের উপরেই বসে কিছু ক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছেন তাঁরা। কারও মাথায় হাত, কেউ হতাশ চোখে চেয়ে আছেন দুমড়ে যাওয়া করমণ্ডলের দিকে।
মালগাড়ি এবং ট্রেনের কামরাগুলি পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কায় এমন ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে যে, সেগুলিকে আর চেনার উপায় নেই। ট্রেনের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে যন্ত্রপাতির টুকরো।
উদ্ধারকারীদের সঙ্গে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন পুলিশকর্মীরাও। ট্রেনের কামরার নীচে ঝুঁকে পড়ে তাঁরা আটকে পড়া যাত্রীদের খোঁজ করছেন।
তুবড়ে যাওয়া লোহার কামরার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আছে মানুষের দেহ। দেহের অধিকাংশই ট্রেনের নীচে চাপা পড়ে রয়েছে।
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থলে থিকথিকে ভিড়। দিনের আলো ফুটতেই বহু মানুষ শুধু উদ্ধারকাজ দেখতে জড়ো হয়েছেন।
ট্রেনের পাশাপাশি রেললাইনেরও করুণ দশা। মাঝখান থেকে দু’ভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে লাইন। কোথাও সেই ভাঙা লাইনেই লেগে আছে চাপ চাপ রক্তের দাগ।
ট্রেনের নীচ থেকে উদ্ধার করা মৃতদেহগুলি সাদা কাপড়ে মুড়ে রেললাইনের উপরেই রাখা হয়েছে। দেহ শনাক্ত করা যায়নি এখনও।
দুর্ঘটনাস্থলে ভেঙে যাওয়া ট্রেন কাত হয়ে পড়ে আছে, জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। তার ফাঁকেই কেউ কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। হাওড়ার অদূরে শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। যাত্রা শুরুর ৪ ঘণ্টা পরে এই বিপত্তি।
কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তার সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। সিগন্যালের গোলমাল, চালকের গাফিলতি না কি গতির খেসারত, উঠে আসছে একাধিক সম্ভাবনা।
রেল মন্ত্রক ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ খতিয়ে দেখার জন্য তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। রেল জানিয়েছে, কী ভাবে এত বড় বিপর্যয়, তার তদন্ত করবেন রেলওয়ে সেফ্টি কমিশনার।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেয়েও রেলের তরফে আপাতত অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে উদ্ধারকাজকেই। এর ফলে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সব ট্রেন আপাতত বাতিল করা হয়েছে।
করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার পিছু এককালীন ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রেল। গুরুতর আহতদের এককালীন ২ লক্ষ টাকা এবং অল্প চোট-আঘাত যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।