ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গোটা দিল্লি। কয়েক মাস ধরে চলা গরম আর তাপপ্রবাহের পর বৃহস্পতিবার রাত থেকেই রাজধানী এবং তার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।
শুক্রবার সকালেই ভারী বৃষ্টির জেরে দিল্লি বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। এই ঘটনায় হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে গোটা রাজধানীতে।
এই দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ছ’জন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
এই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিয়োও ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও সেই ভিডিয়োটিগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। এর মধ্যে একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ায় এক নম্বর টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। একটি গাড়ির ভিতরে আটকে থাকা এক জনকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
বৃষ্টি, তার উপর আবার টার্মিনালের ছাদ ভেঙে দুর্ঘটনা— এই দুইয়ের জেরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে। ১ নম্বর টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে সেখানে সমস্ত কাজ এবং পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
এই দুর্ঘটনার জেরে বিমান পরিষেবাতেও প্রভাব পড়েছে। জানা গিয়েছে, ইন্ডিগো এবং স্পাইসজেটের বহু বিমান বাতিল করা হয়েছে। ইন্ডিগোর তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং ১ নম্বর টার্মিনালে দুর্ঘটনার কারণে বিমান পরিষেবা ব্যাহত।
ভারী বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দিল্লি বিমানবন্দর থেকে বিমান ওঠানামায় প্রভাব পড়েছিল। বেশ কিছু বিমান বাতিলও করা হয়। শুক্রবার সকালেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তার মধ্যেই ঘটে যায় এই দুর্ঘটনা।
মৌসম ভবন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটে থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এই তিন ঘণ্টায় দিল্লিতে বৃষ্টি হয়েছে ১৫০ মিলিমিটার। কয়েক ঘণ্টার এই বৃষ্টিতে রাজধানীর বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, প্রাক্-বর্ষার বৃষ্টিতে ভেসেছে দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকা। কিন্তু শুক্রবার সকালে আবহাওয়া দফতর জানায়, দিল্লি-সহ উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে বর্ষা এসে গিয়েছে।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, শুক্রবারেও ভারী বৃষ্টি হবে দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকায়। তাপপ্রবাহ এবং প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করা রাজধানী গত কয়েক দিন ধরেই একটু বৃষ্টির জন্য চাতকের মতো অপেক্ষা করে ছিল।
জানা গিয়েছে, মথুরা রোড, তিন মূর্তি মার্গ, মুলচাঁদ, মিন্টো রোড, আনন্দ বিহার, মেহরৌলি, বদরপুর রোড, মান্ডাওয়ালি, ভিখাজি কামা প্লেস, মধু বিহার, প্রগতি ময়দান, মুনিরকা, ধৌলা কুঁয়া, মোতি বাগ, আইটিও এবং নয়ডার বহু রাস্তা প্লাবিত হয়েছে বৃষ্টির জেরে। কাইজ়জারগঞ্জে কোদিয়া সেতুর আন্ডারপাসে আটকে গিয়েছে একটি যাত্রীবোঝাই বাস। প্রায় আন্ডারপাসের নীচে বাস আটকে পড়ার খবর পুলিশের কাছে পৌঁছয়। তার পরই সেখানে পুলিশ এবং উদ্ধারকারী দল আসে। পুলিশ সূত্রে খবর, আটকে পড়া যাত্রীদের বাস থেকে এক এক করে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকাজের জন্য দড়ি এবং লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা হয়েছিল।৮ ফুট সমান জলে যাত্রীদের নিয়ে আটকে পড়ে বাসটি। আন্ডারপাসের মাঝ বরাবর বাসটি জলের মধ্যে আটকে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা।
অন্য দিকে, দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের বহু বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। রাস্তা প্লাবিত হওয়ার কারণে যান চলাচলেও প্রভাব পড়েছে। বহু এলাকায় রাস্তা বন্ধ থাকায় গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, যেমন দিল্লি-মীরাট হাইওয়ে, নারাইনা-মোতি বাগ রোড, ধৌলা কুঁয়া উড়ালপুল, বীর বান্দা বৈরাগী মার্গ, আজাদ মার্কেট আন্ডারপাস, তিলক সেতু, অরবিন্দ মার্গ, অনুব্রত মার্গ, আইটিও এবং এমস যাওয়ার বহু রাস্তা প্লাবিত। প্রভাব পড়েছে দিল্লির মেট্রো পরিষেবাতেও।
মিন্টো রোড-সহ বেশ কয়েকটি রাস্তায় শুক্রবার সকালেও কোমরসমান জল রয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর একটি ভিডিয়োয় মিন্টো রোডের উপর গাড়ি ভেসে যেতে দেখা গিয়েছে।
দিল্লির নিচু এলাকাগুলিতে বাড়ির মধ্যে জল ঢুকে গিয়েছে। যান চলাচলের অবস্থাও তথৈবচ। রাস্তায় রাস্তায় বিপুল যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।