তিমির কবরখানা! চমকে ওঠার কিছু নেই। গ্রিনল্যান্ডের টাসিলাক সাগরের নীচে ১৫-২০ ফুট অবধি গেলেই দর্শন মিলতে পারে তার।
সেই তিমির কবরখানার ছবি তুলে পুরস্কৃত হলেন সুইডেনের চিত্রগ্রাহক অ্যালেক্স ডাউসন। বিখ্যাত পত্রিকা ‘স্কুবা ডাইভিং’-এর বিচারে ‘ওয়াইড অ্যাঙ্গল’ ছবির বিভাগে ডাইসনের তোলা ছবিটি সেরা বলে বিবেচিত হয়েছে।
ডাউসন তাঁর তোলা ছবিকে পুরস্কৃত করার জন্য ‘স্কুবা ডাইভিং’ পত্রিকাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সঙ্গে জানিয়েছেন, তিনি এবং তাঁর সঙ্গী অ্যানা ভন বোটিসের প্রায় তিন ফুট পুরু বরফের স্তর সরিয়ে সমুদ্রে নামেন।
সমুদ্রের নীচে প্রায় ১৫-২০ ফুট যাওয়ার পর তাঁরা ২০টি তিমি মাছের কঙ্কাল দেখতে পান। ডাউসন তাঁর তোলা ছবিটি নিজের টুইটার হ্যান্ডলে দিলে প্রায় ৪৩,০০০ জন তাতে লাইক দেন।
৬০০০ বার রিটুইট করা হয় ছবিটি। নেটিজেনদের কেউ মন্তব্য করেন, ‘কী অপূর্ব দৃশ্য’, কেউ বা মন্তব্য করেন ‘এই ছবি পুরস্কার পাওয়ারই যোগ্য।’
একটি সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, গ্রিনল্যান্ডের ইনুইট গোষ্ঠীর মানুষরা একটি অদ্ভুত কাজ করে থাকেন।
তাঁরা টাসিলাক সাগরে নেমে তিমি মাছের মৃতদেহ সংগ্রহ করেন। তারপর সেগুলির গা থেকে চামড়া এবং মাংস ছাড়িয়ে কঙ্কালগুলিকে সমুদ্রের নীচে রেখে দেন।
এই প্রসঙ্গে ডাউসন বলেন, বিশ্বের অন্য কোথাও এমন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে হলে ডুবোজাহাজে সওয়ার হতে হবে।
কিন্তু গ্রিনল্যান্ডেই এই সমুদ্রে প্রায় ১৫-২০ ফুট নীচে নামলেই তিমি মাছের বৃহদাকার কঙ্কালের সন্ধান পাওয়া সম্ভব।
তিমিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নীল তিমি সাধারণত ৮০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, তিনটি স্কুলবাস পর পর দাঁড়িয়ে পড়লে যতটা লম্বা হয়, ততটাই দৈর্ঘ্য হয় একটি নীল তিমির।
একটি প্রমাণ আকারের নীল তিমির ওজন ৩০টি হাতির সমান হতে পারে। তাদের হৃদ্যন্ত্রেরই ওজন প্রায় ১৮০ কেজি। তাদের জিভটি পর্যন্ত একটি ছোট হাতির ওজনের সমান হতে পারে।
তিমি মাছ পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘজীবী প্রাণী। কিন্তু বর্তমানে নানা কারণে তাদের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল-সহ বিশ্বের যে সব স্থানে তিমিদের আনাগোনা বেশি, সেখানে কমছে তিমিদের সংখ্যা।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার জানিয়েছে, বর্তমানে অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছে তিমিরা। অনিয়ন্ত্রিত এবং অবৈধ তিমি শিকারই তিমিদের কমে যাওয়ার কারণ বলে মত সংস্থার।
গ্রিনল্যান্ডের টাসিলার সাগরে বিপুল সংখ্যক তিমির মৃতদেহ পাওয়ার কারণ অবশ্য স্পষ্ট নয়। দূষণ, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং সেই কারণে সমুদ্রের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধিই ওই অঞ্চলে তিমি মৃত্যুর প্রধান কারণ, মত পরিবেশবিদদের একাংশের।
ইনুইটরা মূলত কানাডার বাসিন্দা। ১১০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ইনুইটদের একাংশ গ্রিনল্যান্ডে চলে আসেন। বংশপরম্পরায় ইনুইটরা তিমি মাছের কবর দেওয়ার কাজের সঙ্গে যুক্ত।