কিভ-মস্কো সঙ্ঘাতের অন্যতম পর্যায়ে এসে ইউক্রেনের জন্য ৮০ কোটি ডলারের (ভারতীয় অর্থে ছয় হাজার ১১৭ কোটি ৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা) সামরিক অস্ত্র পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতে না নামলেও ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনকে ২৫ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকার সামরিক সাহায্য পাঠিয়েছে আমেরিকা।
আমেরিকা এম-৭৭৭ হাউৎজার কামান এবং হামভি সামরিক যানের মতো অস্ত্র ইউক্রেনকে পাঠাবে বলে শোনা যাচ্ছে।
পাশাপাশি ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে এক লক্ষ ৪৪ হাজার গোলা পাঠাবেন বলেও বাইডেন জানিয়েছেন।
তবে আমেরিকার দাবি, এর মধ্যে সেরা অস্ত্র ‘ফিনিক্স ঘোস্ট’। এই অস্ত্রটিকে অন্যতম শক্তিশালী ড্রোন হিসেবে উল্লেখ করেছে আমেরিকা।
আমেরিকার বায়ুসেনার তত্ত্বাবধানে অ্যাভেক্স এরোস্পেস সংস্থা এই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন তৈরি করেছে।
এর আগে কোথাও এই বিশেষ ড্রোন ব্যবহার হয়নি বলেই আমেরিকার দাবি। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এই ড্রোন প্রথম নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে চলেছে। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া সঙ্ঘাত বাধার আগেই তৈরি হয়েছিল এই ড্রোন।
রশিয়াকে প্রত্যাঘাত করতে আমেরিকা ১২১টিরও বেশি ‘ফিনিক্স ঘোস্ট’ ড্রোন ইউক্রেনকে পাঠাবে বলে জানিয়েছে।
পেন্টাগনের সংবাদমাধ্যম বিষয়ক সচিব জন কিরবি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে ‘ফিনিক্স ঘোস্ট’ই এক মাত্র ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল বাঁচাতে পারে।
এক একটি ‘ফিনিক্স ঘোস্ট’ মাত্র এক বারই ব্যবহার করা যেতে পারে।
শত্রুপক্ষের ট্যাঙ্ক, বিমান বা সেনাদল ধূলিসাৎ করতে এই ড্রোনের একটি আঘাতই যথেষ্ট বলে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের দাবি।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ‘ফিনিক্স ঘোস্ট’ তৈরি করার খরচ তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। কিন্তু আঘাত হানার ক্ষমতা বিপুল।
যে সংস্থা এই ড্রোন তৈরি করেছে, সেই অ্যাভেক্স এরোস্পেসের দাবি, এই ড্রোন যে কোনও যুদ্ধ পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
আমেরিকার তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই ড্রোনের আরও কিছু সাফল্য রয়েছে। তবে তা এখনই প্রকাশ্যে আনতে রাজি নয় বাইডেনের দেশ।
ইউক্রেনের মাটিতে এই ড্রোন নিজের খেল দেখিয়ে সবাইকে চমকে দেবে বলেও নির্মাণকারী সংস্থার আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
আমেরিকার সামরিক কর্তারা উল্লেখ করেছেন যে, এই নতুন ড্রোন পরিচালনা করা খুব সহজ। তাই এর জন্য ইউক্রেনের সেনাকে বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণ নিতে হবে না। শুধু একটি সুইচ টিপে শত্রুদের হাল, বেহাল করতে পারবে আমেরিকার এই নয়া প্রজন্মের ড্রোন।
কেন এই ড্রোনের নাম রাখা হল ‘ফিনিক্স ঘোস্ট’? তা নিয়ে কোনও স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারেনি আমেরিকা বায়ু সেনার আধিকারিকরা। ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির উত্থানের কথা মাথায় রেখেই কি এই নাম? কারণ ‘ফিনিক্স’ পুনরুত্থান এবং ধ্বংসের পরে জীবনের লড়াইয়ের প্রতীক।
আবার ‘ঘোস্ট’ অর্থাৎ অশরীরীর আঘাত আসে নিশ্চুপে। তাই রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে চাপের মুখে থাকা ইউক্রেনের হাতে যাওয়া এমন ড্রোনের বাড়তি তাৎপর্য থাকছে।
ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই ড্রোন কতটা কার্যকর তা দেখার সময় এখনও আসেনি। কারণ এখনও প্রায় এক তরফা ভাবেই রুশ আগ্রাসন চলছে।
মারিয়ুপোল দখলের পর এ বার ভ্লাদিমির পুতিনের নজর পূর্ব ইউক্রেনে। তাঁর নির্দেশে সেখানকার ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) ইতিমধ্যেই হানাদারির অভিঘাত বাড়িয়েছে রুশ সেনা।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘‘পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের উপরেই নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ।’’ সেই অঞ্চল বাঁচাতেই কাজে লাগতে পারে আমেরিকার পাঠানো এই সব অস্ত্র।