শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে আপাতত জেলের চৌখুপিতে ঠাঁই হয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। একই দশা হয়েছে এই মামলায় আর এক অভিযুক্ত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়েরও।
৫ অগস্ট এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র আবেদনে সাড়া দিয়ে পার্থ এবং অর্পিতাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিশেষ আদালতের বিচারক জীবনকুমার সাধু। আগামী ১৮ অগস্ট এই মামলায় আবারও তাঁদের আদালতে পেশ করা হবে।
আপাতত প্রেসিডেন্সির সংশোধনাগারেই থাকতে হবে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের অপসারিত মহাসচিবকে। অর্পিতাকে রাখা হয়েছে আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে।
প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডের ২ নম্বর সেলে রয়েছেন পার্থ। সেই চৌখুপিতেই রয়েছে কিছুটা উঁচু দেওয়াল তুলে দিয়ে আড়াল করা শৌচালয়। সঙ্গে অন্য কয়েদিদের মতো বরাদ্দ কম্বল এবং টেবল ফ্যান। এই খুপরি সেলের পাশের সেলগুলিতে পার্থের পড়শি কারা?
পার্থের পাশের সেলেই থাকেন আফতাব আনসারি। ২০০২ সালের ২২ জানুয়ারি কলকাতায় আমেরিকার সেন্টারে হামলায় অভিযুক্ত। ওই ঘটনায় চার জন পুলিশ কনস্টেবল এবং এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। আহত হন জনা কুড়ি।
আফতাবের বিরুদ্ধে আরও মামলা চলছে। আমেরিকান সেন্টারে হামলার আগের বছর খাদিমকর্তা পার্থ রায়বর্মণকে অপহরণের মূল চক্রীও তিনি ছিলেন বলে অভিযোগ। আল কায়েদার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। পরে দুবাই থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই।
আফতাবের পাশাপাশি সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনও জেলে পার্থের পড়শি। সিবিআইয়ের তদন্তাধীন মামলায় জেলবন্দি সুদীপ্তকে ২০১৫ সালে মে-তে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৪ সালের অগস্ট থেকে গায়েব ছিলেন সুদীপ্ত। পরের বছর জম্মু ও কাশ্মীরের সোনমার্গ এলাকা থেকে তাঁর পাশাপাশি দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ সিংহ চৌহানকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা।
সুদীপ্তরা ছাড়া পার্থের ওয়ার্ডে রয়েছেন লালগড় আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতো। ২০০৮-’০৯ সালে জঙ্গলমহলে পুলিশি সন্ত্রাসবিরোধী জনসাধারণের কমিটির আন্দোলনের মুখ ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর লালগড় থেকে প্রথম বার গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে লালগড়ের এক সিপিএম কর্মীকে খুন-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
১০ বছরেরও বেশি জেলবন্দি থাকার পর কলকাতা হাই কোর্ট তাঁর সাজার মেয়াদ কমানোয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেল থেকে ছাড়া পান ছত্রধর। সে বছরেই তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। বিধানসভা ভোটের পরে গত বছরের ২৭ মার্চ জঙ্গলমহলে লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে গভীর রাতে হানা দিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। ২০০৯ সালের দু’টি পুরনো মামলায় ইউএপিএ আইনের ধারা যুক্ত করে ছত্রধরকে অভিযুক্ত করা হয়। মাঝে ছেলের বিয়ের জন্য ছ’দিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি পেলেও আবারও প্রেসিডেন্সি জেলে ফেরেন ছত্রধর।
পার্থের জেলের ওয়ার্ডে রয়েছেন রোজ ভ্যালি-কর্তা গৌতম কুন্ডুও। রোজ ভ্যালির বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের পাঁচ হাজার কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
সেবি-র অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের মে-তে ইডির হাতে গ্রেফতার হন তিনি।
পার্থের পড়শিদের মধ্যে রয়েছেন পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় প্রধান অভিযুক্ত কাদের খানও। ২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটে একটি চলন্ত গাড়িতে সুজেট জর্ডন নামে এক যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল পাঁচ জনের বিরুদ্ধে।
পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের চার বছর পর গ্রেটার নয়ডা থেকে গ্রেফতার হন কাদের। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন তিনি।