আর্থিক দুর্নীতি এবং বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ২০১৩ সালে তাঁকে সারা জীবনের জন্য নির্বাসিত করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তার পর থেকে তিনি লন্ডনে ‘বেপাত্তা’। তাঁকে ভুলেও গিয়েছেন অনেকে।
সেই বিস্মৃতপ্রায় মানুষটি আবার টুইট ফুঁড়ে উদয় হয়ে নতুন চর্চার ইন্ধন দিলেন। নিজস্ব ঢঙে। জানিয়ে দিলেন অভিনেত্রী সুস্মিতা সেন তাঁর ‘সঙ্গিনী’। বিয়েও হবে দু’জনের।
ললিত মোদী। ‘বিতর্ক’ যার অন্যতম সঙ্গী। সেই ‘বিতর্ক’ শুধু আইপিএল-কেন্দ্রিক নয়। জীবনের নানা মোড়ে ‘মণি-মুক্তোর’ মতো ছড়িয়ে রয়েছে ‘বিতর্ক’।
আমেরিকার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিন বন্ধুকে নিয়ে দশ হাজার ডলার দিয়ে আধ কিলো কোকেন কিনতে গিয়ে ধরা পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ, মাদকপাচার, নিগ্রহ-সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত বাবা কেকে মোদীর হস্তক্ষেপে তিনি মুক্তি পান।
আমেরিকায় পড়তে পড়তেই তিনি প্রেমে পড়েন মিনাল সাগরানির। তাঁর চেয়ে দশ বছরের বড়। বিবাহিত। ললিতের মা বীণার বন্ধু।
মিনাল বিয়ে করেছিলেন নিলাকস সংস্থার কর্ণধার জ্যাক সাগরানিকে। মিনাল যখন সন্তানসম্ভবা, তখনই সৌদি আরবে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হন জ্যাক। বেশ কয়েক মাস জেল খাটতে হয়।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরই তাঁকে বিয়ের পরিকল্পনা করেন ললিত। কিন্তু এই বিয়েতে নারাজ তাঁর বাবা-মা। শেষ পর্যন্ত ছেলের নাছোড়বান্দা মনোভাবের কাছে হার মেনে রাজি হন তারা।
রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমেই তাঁর ক্রিকেট প্রশাসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ। তবে সেখানেও বিতর্ক। ২০০৫ সালে রাজস্থানের ক্রিকেট নির্বাচনে একটি বিতর্কিত সরকারি অর্ডিনান্স প্রকাশ করেন।
৫৯ জন সদস্যের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে মাত্র ৩২টি জেলা ক্রিকেট সংস্থার ভোটে কিশোর রুংতা ও তাঁর গোষ্ঠীকে হারিয়ে জয়ী হন। সেই সময় ললিত সব রকম সাহায্য পেয়েছিলেন রাজস্থানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের।
বয়সে বছর দশেকের বড় রাজের সঙ্গে ‘অন্য রকম’ সম্পর্ক থাকার কারণে বাড়তি সুবিধা পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এমনিতে গ্বালিয়রের রাজ পরিবারের সঙ্গে মোদীদের বন্ধুত্ব বহু বছরের। ফলে রাজের সাহায্যে ওই অর্ডিনান্স প্রকাশ করতে ললিতের সমস্যা হয়নি।
শোনা যায় আইপিএল শুরুর সময় ললিত সাহায্য পেয়েছিলেন শরদ পাওয়ারের। একাধিক সংস্থার বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সে থাকা ললিত এমনিতেই ধনকুবের ছিলেন। আইপিএল-এর দৌলতে তাঁর ভান্ডার আরও প্রসারিত হয়।
২০১০-এর আইপিএল শেষ হওয়ার পরেই গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং ৪৭০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগে তাঁকে বিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
মার্সিডিজ থেকে প্রাইভেট জেট— কী নেই তাঁর! অভিযোগ ওঠে আইপিএলের দৌলতে দ্রুত আকাশ ছুঁয়ে ফেলেন ললিত। ছুটি কাটাতে ভাড়া নিতেন বিলাসবহুল রিসর্ট। সেই তালিকায় ছিল ইমরান খানের প্রাক্তন স্ত্রী জেমাইমার বাবা জিমি গোল্ডস্মিথের প্রাসাদোপম বাড়িও।
সেই সব প্রাইভেট জেট বা রিসর্টে চলত উদ্দাম আয়েস। ললিতের সঙ্গী হতেন কখনও স্ত্রী মিনাল এবং তাঁর বন্ধুরা, কখনও অন্য সঙ্গিনী।
ললিতকলায় এই অন্য সঙ্গিনীর তালিকায় ছিলেন সুপার মডেল নায়েমি ক্যাম্পবেল। লন্ডনের বাড়িতে স্ত্রী মিনালকে নিয়ে দেওয়ালিও পালন করেছেন ক্যাম্পবেলের সঙ্গে।
প্যারিস হিলটনের সঙ্গেও ললিতের সম্পর্ক ছিল বেশ গভীর। কিউবার হাভানায় সারাতোগা হোটেলের ছাদে তোলা ছবি তিনি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন।
সুম্মিতার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব অনেক আগে থেকে ছিল। স্ত্রী মিলান বেঁচে থাকাকালীন তিন জনকে এক ফ্রেমে দেখতে পাওয়া যায়।
রহমন শলের সঙ্গে সুম্মিতার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরই কি ললিতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে? যে গভীরতার অতলে তলিয়ে গিয়েছে সমস্ত ‘বিতর্ক’ সমস্ত ‘নীতি’র বিচার, পড়ে আছে শুধু নিখাদ প্রেম? যদিও বিয়ের খবর দিয়েছেন ললিত। সুম্মিতা এখনও কিছু স্পষ্ট করেননি।