গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে বার বার শিরোনামে উঠে এসেছে পাকিস্তান। অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি ভারতের এই পড়শি দেশ। খাদ্যের হাহাকার লেগেই আছে।
দেশের অর্থনীতি সামলাতে পরের কাছে হাত পাততে হয় পাকিস্তানকে। কখনও বন্ধু চিন, কখনও আবার আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের কাছ থেকে ইসলামাবাদ ঋণ নেয়।
এ হেন ‘দরিদ্র’ পাকিস্তানে কিন্তু ধনী মানুষের অভাব নেই। অন্তত সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্ট তেমনই দাবি করছে। ফাঁস হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানি ধনীদের ‘গোপন রহস্য’।
পাকিস্তানি ধনীদের সম্পর্কে তথ্য সম্বলিত যে রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, নিজের দেশে নয়, পশ্চিম এশিয়ার এক ধনী শহরে হাজার হাজার কোটির সম্পত্তি কিনে রেখেছেন পাকিস্তানিরা। তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন সেনাকর্তা থেকে রাজনৈতিক নেতারা।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাইকে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের পীঠস্থান বলা চলে। সেখানে টাকা ঢেলেছেন ধনী পাকিস্তানিরাও। দুবাইয়ে পাকিস্তানিদের মোট সম্পত্তির মূল্য নাকি কয়েক হাজার কোটি ডলার।
সারা বিশ্বের সাংবাদিকদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন সম্প্রতি প্রকাশ্যে এনেছে দুবাই সংক্রান্ত তাঁদের বিস্তারিত গবেষণা। সেই রিপোর্টে দুবাইয়ে কাদের কত সম্পত্তি রয়েছে, তার আনুমানিক মূল্য কত, তার বিশদ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
রিপোর্টটির নাম ‘দুবাই আনলক্ড’। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের তথ্য অনুযায়ী, ওই রিপোর্টে ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দুবাইয়ে কে কত সম্পত্তি কিনেছেন, কে কত সম্পত্তির মালিক, তার খতিয়ান রয়েছে।
‘দুবাই আনলক্ড’-এ পাকিস্তানের নাগরিকদের কেনা অন্তত ১৭ হাজার সম্পত্তির কথা বলা রয়েছে। সেই সম্পত্তির মোট মালিকের সংখ্যা ২২ হাজার। অর্থাৎ, কোনও কোনও সম্পত্তি একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তির নামে রয়েছে।
হিসাব করে দেখা গিয়েছে, পাকিস্তানিদের কেনা দুবাইয়ের এই ১৭ হাজার সম্পত্তির আনুমানিক বাজারমূল্য হাজার কোটি ডলার। তবে তা ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী। এখন সম্পত্তির দাম বেড়ে গিয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, গত দু’বছরে দুবাইয়ে সাধারণ ভাবে সম্পত্তির দাম অন্তত ২৫ শতাংশ বেড়েছে। সেই অনুযায়ী হিসাব করলে, দুবাইয়ে পাকিস্তানিদের সম্পত্তির মূল্য হতে পারে ১,২৫০ কোটি ডলার।
যে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনের তরফ থেকে ‘দুবাই আনলক্ড’ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বিশ্বের নানা প্রান্তের ৭৪টি সংস্থা সদস্য হিসাবে রয়েছে। রয়েছেন ৫৮টি দেশের প্রতিনিধিরা।
দুবাইয়ে সম্পত্তি বলতে প্রাসাদোপম, বিলাসবহুল বাংলো, বহুতলকে বোঝায়। পাকিস্তানিরা বিশ্বের অন্যতম ধনী শহরের এই বিলাসবহুল সম্পত্তির মালিক হলে তাঁদের দেশের এই দুরবস্থা কেন? প্রশ্ন উঠছে।
পাকিস্তানে প্রকৃত ধনীরা সরকারকে উপযুক্ত কর দেন কি না, তা নিয়েও জলঘোলা শুরু হয়েছে ‘দুবাই আনলক্ড’ প্রকাশ্যে আসার পর। পাকিস্তানের ফেডারেল বোর্ড অফ রেভিনিউ (এফবিআর)-এর চেয়ারম্যান মালিক আজমের জুবেইর তিওয়ানা এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করে যোগ্যদের কর গ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
জুবেইর আরও জানিয়েছেন, পাকিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী, কর দেওয়ার সঙ্গে নাগরিকত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। কে কোথায় থাকেন, এটি তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ‘দুবাই আনলক্ড’-এ সম্পত্তির হিসাব থাকলেও বাসস্থান সম্পর্কে তথ্য নেই। তাই তা যাচাই করা প্রয়োজন।
দুবাইয়ের অভিবাসন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে এফবিআর। সেখানে পাকিস্তানিদের নিবাস এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য তাদের কাছ থেকে পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিছু পাওয়া যায়নি।
কর সংক্রান্ত পাকিস্তানের আইনজীবী আলি রহিম জানিয়েছেন, বছরে ১৮৩ দিনের বেশি সময় যাঁরা পাকিস্তানে থাকেন, তাঁরাই দেশের বাসিন্দা হিসাবে বিবেচিত হন। তাঁরাই করদাতা। বিদেশে যাঁরা থাকেন, তাঁদের দেয় করের পরিমাণ নির্ধারিত হয় পাকিস্তানের ভূখণ্ড থেকে তাঁদের আয়ের বিচারে।
দুবাইয়ে সম্পত্তিধারী পাকিস্তানিরা দেশে ঠিকমতো কর দেন কি না, দেশের অর্থনীতিতে তাঁদের অবদান কী, তা এখন আতশকাচের নীচে। সেই সঙ্গে এই রিপোর্টের মাধ্যমে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্রও ফুটে উঠেছে বলে মত অনেকের।
এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ক্ষোভ জমতে শুরু করেছে আম পাকিস্তানিদের মধ্যে। সেই ক্ষোভের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠার আগে তাই ব্যবস্থা নিতে চাইছে সরকার।