একটি ঘটনাই তাঁর জীবনের সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছিল। এক সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনার স্মৃতিরোমন্থন করতে গিয়ে বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলেন রিদা ইস্ফাহানি। কারণ, তাঁর জীবনে ঝড় তোলার নেপথ্যে ছিলেন রিদারই খুব ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি।
পাকিস্তানের মডেল তথা জনপ্রিয় অভিনেত্রী রিদা। করাচিতেই তাঁর স্কুল এবং কলেজ জীবন কেটেছে। স্কুলজীবন শেষে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন রিদা।
১৯৯২ সালে করাচিতে জন্ম রিদার। তাঁরা দুই ভাইবোন।
২০১৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মডেল হিসাবে পেশাগত জীবন শুরু করেন রিদা। মডেল হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার পর টেলিভিশনে অভিনয়ের সুযোগ পান। ‘রোয়াগ’ নামে একটি ধারাবাহিকে প্রথম আত্মপ্রকাশ রিদার।
‘মোহব্বত হামসফর মেরি’ সিরিয়ালে অভিনয় করে সাড়া ফেলেছিলেন। আর এই সিরিয়ালই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। একের পর এক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে তিনি পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
রিদার জনপ্রিয় সিরিয়ালগুলি হল— মিডল ক্লাস, মাঘরিব কি ঈশা, জিন্দেগি তেরে বিনা, উই আর ফ্যামিলি, মেরি সহেলি মেরি ভাবী ইত্যাদি।
সলমন শেখ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রিদার। কিন্তু সেই সম্পর্ক মাত্র তিন বছর টিকেছিল। তার পর তাঁরা আলাদা হয়ে যান। এখান থেকেই রিদার জীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অন্ধকার।
২০১৬। রিদা তখন খ্যাতির শিখরে। একের পর এক সিরিয়ালে অভিনয় করছেন। মডেলিং, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। কিন্তু একটি ভিডিয়োই তাঁর সেই খ্যাতিতে দাগ কেটে দিয়েছিল।
রিদার ব্যক্তিগত এমএমএস ভাইরাল হয়েছিল ২০১৬ সালে। সেই ভিডিয়ো ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁরই প্রাক্তন স্বামী সলমন শেখের বিরুদ্ধে।
পাক কৌতুকাভিনেতা নাদির আলির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনার ছ’বছর পর মুখ খুলেছেন রিদা।
সেই সাক্ষাৎকারে রিদা জানিয়েছেন, তাঁদের তিন বছরের সম্পর্কের পর যে ভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তাঁর প্রাক্তন স্বামী, সে কথা ভাবলে এখনও শিউরে ওঠেন।
সলমন শেখের সঙ্গে সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি হচ্ছিলেন না রিদার পরিবার। কিন্তু অভিভাবকদের বুঝিয়ে বাগ্দানে রাজি করান রিদা।
রিদা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে ফাঁস হওয়া সেই ভিডিয়োয় তাঁর বেশ কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্ত ছিল। যা প্রকাশ্যে আসতেই তাঁর অভিনয় জীবনে বেশ প্রভাব পড়ে।
রিদা বলেন, “আমাকে অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন, এ বিষয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অভিযুক্তের মুখোশটা খুলে দিতে। কিন্তু আমি পারিনি। আমার জীবনের অভিশপ্ত সময় ছিল ২০১৬ সাল।”
রিদা আরও বলেন, “সেই ঘটনার পর থেকে আমাকে নানা রকম ভাবে নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। মানুষ কোনও জিনিস চট করে ভোলে না।’’
রিদার কথায়, “অতীত নিয়ে সর্ব ক্ষণ খোঁচা চলতেই থাকবে। যেটা আমি বয়ে বেড়াচ্ছি। আমার মৃত্যুর পরেও হয়তো এ নিয়ে চর্চা চলতেই থাকবে।”
ভিডিয়ো ফাঁস হওয়ার পর কাজ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। একের পর এক কাজ বাতিল হয়ে যাচ্ছিল বলে দাবি রিদার।
সাক্ষাৎকারে রিদা বলেন, “সেই একটি ঘটনার জন্য আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব সকলের কাছে ছোট হয়ে গিয়েছিলাম। আমার জন্য তাঁদেরও অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছিল।’’
রিদা জানিয়েছেন, ভিডিয়ো ফাঁস হওয়ার পর এক এজেন্সির মাধ্যমে প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার নেপথ্যে যে তাঁরই হাত রয়েছে, প্রথমে টেরই পাননি।
রিদা বলেন, “আমার বিশ্বাসের সঙ্গে খেলা করা হয়েছে। এমন ঘটনা যেন কারও সঙ্গে না হয়।”
রিদা বলেছেন, পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে যাঁকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছেছিলেন, সেই সঙ্গীর কাছ থেকে এই বিশ্বাসঘাতকতা প্রত্যাশা করেননি।
সাক্ষাৎকারে রিদা আরও বলেন, “ভিডিয়োটি যখন ফাঁস হয়, আমি কিছুই জানতাম না। তখন আমি আমেরিকায়। পরে বিষয়টি জানার পর পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম।”
রিদার কথায়, “আমাকে এই ‘কলঙ্ক’ নিয়ে বাঁচতে হবে। ঈশ্বরের কাছে সব সময় প্রার্থনা করি, ক্ষমা চাই। কিন্তু আমার দর্শকরা কি আমায় মাফ করবে!”
বর্তমানে রিদাকে নিয়ে আবার চর্চা শুরু হয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে। বলেছেন, ‘‘আমার মায়েরও বদনাম করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তিনি কালাজাদু জানেন।’’
অভিনেত্রী বলেছেন, কী অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে দিয়ে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে কাটাতে হয়েছে, তা এত বছর পর জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন, তিনি সমাজকে ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু বিশ্বাসভঙ্গকারীকে নয়।