প্রথম বিয়ে সফল হয়নি। বিচ্ছেদের পর বলিউডের এক অভিনেতার সঙ্গে নামও জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সেই সম্পর্কেও কোনও রকম সিলমোহর পড়েনি। ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি বরাবরই গোপন রাখতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী মাহিরা খান। তাই দ্বিতীয় বার যে তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন সে কথাও যতটা সম্ভব গোপনই রাখলেন অভিনেত্রী।
অক্টোবর মাসের গোড়াতেই দীর্ঘকালীন প্রেমিক সেলিম করিমের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন মাহিরা। পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখাওয়া এলাকার একটি বিলাসবহুল হোটেলে বিয়ে সারেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী।
সূত্রের খবর, সেলিমের সঙ্গে প্রায় পাঁচ বছর সম্পর্কে ছিলেন মাহিরা। অক্টোবর মাসে সেই সম্পর্ককেই পরিণতি দিলেন দু’জনে।
বিয়ের দিন মাহিরার পরনে ছিল হালকা আকাশি রঙের লেহঙ্গা। অন্য দিকে সেলিমের পরনে ছিল কালো শেরওয়ানি। বরের মাথায় ছিল কনের লেহঙ্গার রঙের সঙ্গে মানানসই পাগড়ি।
মাহিরাকে কনের সাজে দেখে সেলিমের চোখ জলে ভরে ওঠে। মাহিরার লেহঙ্গার ওড়না উপরের দিকে তুলে তাঁকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেন সেলিম। সেই মুহূর্তে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন অভিনেত্রীও।
মাহিরা যে কারও সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন তা নিয়ে কানাঘুষো চলছিল বহু বছর থেকেই। এমনকি অভিনেত্রী নিজে একাধিক সাক্ষাৎকারে তার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন।
পুরনো সাক্ষাৎকারে কখনও মাহিরা জানিয়েছেন যে তাঁর সঙ্গীকে ভীষণ ভালবাসেন। কখনও আবার জানিয়েছেন, তাঁর প্রেমিক অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত নয়। অথচ সেলিমের নাম-পরিচয় সর্বদা আড়ালেই রেখেছিলেন অভিনেত্রী।
মাহিরার অনুরাগীরা অনুমান করেছিলেন, অভিনেত্রী তাঁর কোনও বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন এবং খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে সেরে ফেলতে পারেন। তবে বরের পরিচয়, বিয়ের দিনক্ষণ কেউ কিছুই জানতেন না।
১ অক্টোবর মাহিরার ম্যানেজার এবং এক আলোকচিত্রশিল্পী অভিনেত্রীর বিয়ের ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করতেই নেটব্যবহারকারীদের মধ্যে কৌতূহল জেগে ওঠে। মাহিরার জীবনসঙ্গীর পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন ওঠে তাঁদের মনে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে মাহিরা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁর স্বামী অভিনয়জগৎ থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছেন। পেশায় ব্যবসায়ী তিনি। সূত্রের খবর, এক স্টার্টআপ সংস্থার অধিকর্তা সেলিম।
একাংশের দাবি, ব্যবসার পাশাপাশি ‘ডিস্ক জকি’র কাজও করেন সেলিম। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, পাকিস্তানের করাচিতে পরিবার-সহ থাকেন সেলিম।
কানাডার অন্টারিওতে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন সেলিম। তার পর নিজস্ব স্টার্টআপ সংস্থা গড়ে তোলেন তিনি। আলোর রোশনাই থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পছন্দ করেন সেলিম।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ২০১৭ সালে পাকিস্তানের একটি ছোট পর্দার একটি প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম বার মাহিরার সঙ্গে দেখা হয় সেলিমের। একাধিক বার মাহিরা এবং সেলিমকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে দু’জনেই মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন।
একাংশের দাবি, আলাপের দু’বছর পর নাকি সেলিমের সঙ্গে গোপনে বাগ্দান পর্বও সেরে ফেলেছিলেন মাহিরা। ২০১৯ সালে তুরস্কে আংটিবদলের অনুষ্ঠান হয় অভিনেত্রীর। নিমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন মাহিরা এবং সেলিমের আত্মীয়-পরিজন এবং কাছের কয়েকজন বন্ধুবান্ধব। আংটিবদল নিয়েও প্রকাশ্যে কিছু জানাননি অভিনেত্রী।
২০২০ সালে সেলিম সম্পর্কে সামান্য ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাহিরা। ইনস্টাগ্রামে একটি ‘লাইভ’ পর্ব চলাকালীন মাহিরাকে পাকিস্তানের এক পোশাকশিল্পী হঠাৎ জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তুমি এখন প্রেম করছ, প্রেমিকের চোখের দিকে তাকালে সবার প্রথমে কী মনে হয়?’’
পোশাকশিল্পীর প্রশ্নে সেলিমের নাম উল্লেখ না করলেও প্রশ্নের জবাব দেন মাহিরা। ‘হমসফর’ নামের একটি জনপ্রিয় পাকিস্তানি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই ধারাবাহিকের একটি সংলাপ ধার নিয়ে মাহিরা বলেন, ‘‘জানি না সারা জীবনে আমি কী পুণ্য করেছি যে তোমাকে পেলাম।’’
২০০৬ সালে ভিডিয়ো জকি হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন মাহিরা। বিভিন্ন রিয়্যালিটি শোয়ে সঞ্চালনাও করেছেন তিনি।
২০১১ সালে ‘বোল’ নামে একটি পাকিস্তানি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান মাহিরা। একই বছর ছোট পর্দাতেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
‘হমসফর’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মাহিরা। তার পর একাধিক ছবি এবং ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
২০১৭ সালে বলিপাড়ায় পা রাখেন মাহিরা। ‘রইস’ ছবিতে শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। বক্স অফিসে ছবিটি তেমন ব্যবসা করেননি। এর পর মাহিরাকেও অন্য কোনও বলিউডি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।
২০০৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে পরিচালক আলি আসকরির সঙ্গে আলাপ হয় মাহিরার। পরিবারের অমতেই আলিকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী। মাত্র ২৩ বছর বয়সে ২০০৭ সালে আলির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন মাহিরা।
আলিকে বিয়ের দু’বছর পর পুত্রসন্তান আজ়লানের জন্ম দেন মাহিরা। কিন্তু ২০১৫ সালে আলির সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় অভিনেত্রীর।
বিচ্ছেদের পর বলি অভিনেতা রণবীর কপূরের সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়ে মাহিরার। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, রণবীরের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন তিনি। দুই তারকাকে একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় দেখাও গিয়েছিল। কিন্তু রণবীরের সঙ্গে সম্পর্কের কথা পুরোটাই রটনা ছিল।