দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাকিস্তান। দিন দিন কমছে ইসলামাবাদের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার। এই আবহে হঠাৎ করে চড়তে শুরু করেছে পাকিস্তানের শেয়ার বাজার। যাকে অর্থনীতির মরা গাঙে জোয়ার হিসাবেই দেখছেন পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা।
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে টানা তিন দিন পাক স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার সূচককে ঊর্ধ্বমুখী দেখা গিয়েছে। বুধবার, ৯ অক্টোবর তা ৮৬ হাজারের উপরে পৌঁছে যায়। ওই তারিখে ৫০২ পয়েন্ট বেড়ে দিনের সর্বোচ্চ সূচক দাঁড়িয়েছিল ৮৬,১৬৬.১৫-তে। পরে অবশ্য সেখান কিছুটা নেমেছিল সূচক।
বুধবার (৯ অক্টোবর) বাজার বন্ধ হওয়ার পর দেখা যায় পাক স্টক মার্কেটের সূচক ৮৫,৬৬৯.২৭-তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মঙ্গলবার, ৮ তারিখও বাজারে উত্থান দেখা গিয়েছিল। সোমবার, অর্থাৎ ৭ অক্টোবর শেয়ার সূচক বেড়েছিল ১৩৭৮.৩৪ পয়েন্ট। ফলে ৮৪,৯১০.২৯ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছিল সেটি।
৭ অক্টোবরই প্রথম বারের জন্য ৮৫ হাজারের গণ্ডি টপকেছিল পাকিস্তানের শেয়ার বাজার সূচক। ওই তারিখে দিনের সর্বোচ্চ সূচক ছিল ৮৫,০৪৭.৮১। যা পাক স্টক এক্সচেঞ্জের নিরিখে রেকর্ড। দিনের শেষে এতে ১.৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছিল।
পাক শেয়ার বাজারের উত্থান এমন একটা সময়ে হচ্ছে, যখন আমেরিকা, চিন ও ভারতের স্টকের সূচকে রয়েছে অস্থিরতা। সেপ্টেম্বরের একেবারে শেষ থেকে বম্বে ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের লেখচিত্র নিম্নমুখী হতে দেখা গিয়েছে বার বার। সম্প্রতি তা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও, আগের অবস্থানে ফিরে আসেনি।
আমেরিকার কেন্দ্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ফেডারেল ব্যাঙ্ক’ সুদের হার আরও কমাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যার প্রভাব ভারত ও চিনের শেয়ার বাজারের উপর ব্যাপক ভাবে পড়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নিকারীদের একাংশ এখানকার স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন বলেও খবর এসেছে।
অন্য দিকে, পাকিস্তানের শেয়ার বাজারের উত্থানের নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত, পাক অর্থনীতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড বা আইএমএফ) থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পেয়েছে ইসলামাবাদ।
দ্বিতীয় কারণ হিসাবে আর্থিক বিশ্লেষকেরা পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতির হারের নিম্নগতিকে উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রশংসা করেছেন তাঁরা। তিনি একটি স্থায়ী আর্থিক নীতি নিয়ে আসতে পেরেছেন, যা ইসলামাবাদের বাজার অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করছে।
সূত্রের খবর, আগামী দিনে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুদের হার ১.৫ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। যা লগ্নিকারীদের মুখের হাসি চওড়া করেছে। বর্তমানে তাঁরা বিপুল পরিমাণে শেয়ার কিনতে শুরু করেছেন। ফলে বাজারে টাকার পরিমাণ এক লাফে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা শেয়ার সূচককে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সৌদি আরবের কাছে বহু বার হাত পেতেছে পাকিস্তান। চলতি মাসে ফের সেই রাস্তায় শরিফ সরকার হাঁটবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আরব দেশটি থেকে টাকা এলে পাকিস্তানের শেয়ার বাজার আরও কিছুটা চাঙ্গা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ৯ অক্টোবর সৌদির উচ্চ পর্যায়ের একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের বিনিয়োগমন্ত্রী। ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ইসলামাবাদে থাকবেন তাঁরা। এই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক মজবুত করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে শরিফ সরকার। তবে এখান থেকে মোটা লগ্নি আসতে পারে বলে মনে করছে পাকিস্তান।
অক্টোবরের ১৫ থেকে ১৬ তারিখের মধ্যে পাকিস্তানে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজ়েশন বা এসসিও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। যাতে চিন, রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা বিদেশমন্ত্রীর যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে থাকবেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও।
এই বৈঠক থেকেও লগ্নি আসবে বলে আশাবাদী ইসলামাবাদ। যার জেরে পাক শেয়ার বাজারের সূচক চড়তে শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।