শত্রুর শত্রু বন্ধু! আন্তর্জাতিক সীমান্ত রক্ষা করতে প্রতিবেশী চিন এবং পাকিস্তান দু’দিকের হুমকিই প্রথম থেকে ক়়ড়া ভাবে সামলে এসেছে ভারত। ভারতকে জব্দ করতে একে অপরের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে পাকিস্তান এবং চিন। পাকিস্তানের যাবতীয় সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে চিন। কিন্তু সেই বন্ধুর পাঠানো সামরিক অস্ত্রেই এ বার ত্রুটি।
সস্তা হওয়ার কারণে চিনের ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে প্রযুক্তির চাহিদা বিশ্ববাজারে ব্যাপক। সস্তা হওয়ার কারণে চিনা দ্রব্যের যেমন নাম তেমনই বদনাম এগুলির গুণমানের জন্য। আর তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বন্ধু পাকিস্তান।
সম্প্রতি পাকিস্তানের থেকে ‘আননেমড এরিয়াল ভেহিক্যাল’ (ইউএভি) পাঠানোর বরাত পেয়েছিল চিন। সেই মতোই চিনের তরফে এই মানববিহীন বায়ুযান বা ড্রোন পাকিস্তানে পাঠানোও হয়েছিল।
ইউএভি ছাড়াও পাক সরকার আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রের মতো কয়েকটি ব্যয়বহুল অস্ত্র চিন থেকে আমদানি করেছিল।
সিএইচ-৪ ইউএভি ড্রোন তৈরি করে চিনা সংস্থা ‘এলিট’। সেই সংস্থা থেকেই ড্রোনগুলি পাঠানো হয়েছিল পাকিস্তানে।
কিন্তু সেই বরাত পাকিস্তানে পৌঁছনোর পর ড্রোনের অবস্থা থেকে পাক সামরিক কর্তাদের মাথায় হাত। যারপরনাই বিস্মিত সেনাকর্তাদের পর্যবেক্ষণ, কোনও ড্রোনের ডানা ভাঙা তো কোনও ড্রোনে রয়েছে বড় মাপের যান্ত্রিক ত্রুটি। এবং সেই অবস্থাতেই ড্রোনগুলি চিন থেকে পাকিস্তানে এসেছে।
পাক সামরিক কর্তারা দেখেন চিন থেকে আসা একটি ড্রোনের ‘এক্সস্ট ম্যানিফোল্ড’ ভাঙা। এই পাইপ ড্রোনের ভিতরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস নির্গমনে সাহায্য করে।
অন্য একটি ইউএভি ড্রোনের টার্বোচার্জারেই রয়েছে বড় একটি ফাটল। সেই ড্রোনের ইঞ্জিন সংক্রান্ত কয়েকটি সমস্যাও প্রকাশ্যে আসে।
ইউএভি ড্রোন প্রাথমিক ভাবে শত্রুসেনা এবং অস্ত্র শনাক্ত করতে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের ভিডিয়ো পাঠাতে ব্যবহৃত হয়।
একই ভাবে চিনের পাঠানো আকাশ থেকে মাটিতে থাকা শত্রু সেনা ঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত এআর-২ ক্ষেপণাস্ত্রেও ‘গলতি’ খুঁজে পেয়েছেন পাক সেনাকর্তারা।
ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র যান্ত্রিক গোলযোগ রয়েছে। এর ফলে ক্ষেপণাস্ত্রটি আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ওই ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তু খুঁজে পাওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে।
ইউএভি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলি মেরামত এবং প্রতিস্থাপনের জন্য ইতিমধ্যেই চিনে ফেরত পাঠিয়েছে পাকিস্তান। যদিও সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে ওই ক্ষেপণাস্ত্রে ঠিক হওয়ার কোনও আশা নেই।
যদি আকাশ থেকে মাটিতে ছোড়া এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি কাজ না করে, তা হলে শত্রুপক্ষের স্থলবাহিনীর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আহামরি কোনও অস্ত্র পাকিস্তানের অস্ত্রভান্ডারে থাকবে না।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক চিন থেকে আনানো ইউএভি ড্রোন নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই এখন পশ্চিমি দেশগুলি থেকে ড্রোন-সহ অন্যান্য অস্ত্র কিনতে চাইছে সেই দেশ।
শোনা যাচ্ছে, এস-১০০ ইউএভি ড্রোন কিনতে অস্ট্রিয়ার অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থা ‘স্কিবেল’-এর দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের থেকে ইতিমধ্যেই এস-১০০ ড্রোনের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে বলে প্রকাশ্যে এসেছে।
বন্ধুত্বে বিশ্বাস হারিয়ে ড্রোন পেতে অন্য দেশের উপর ভরসা করছে পাকিস্তান। এর ফলে পাকিস্তান এবং চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক হাল বর্তমানে বেহাল। চারিদিক থেকে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেও কোটি কোটি টাকা দিয়ে নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে চাইছে শহবাজ শরিফ সরকার। কিন্তু চিন থেকে আসা এই ত্রুটিপূর্ণ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র সে দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ভার আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলেও নাকি গোপনে উদ্বেগ প্রকাশ করছে পাক সরকার।
ইউএভি ড্রোনগুলি সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় উড়তে পারে এবং এর রেঞ্জ ১৮০ কিমি। এটি ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি বেগে ছ’ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে পারে।
শত্রুদেশের কৌশলগত তথ্য পাওয়ার জন্য কোনও দেশের সামরিক সেনার হাতে ইউএভি ড্রোন না থাকাকে দুর্বলতা বলেই বিবেচনা করা হয়। ‘বন্ধু’কে খারাপ ড্রোন দিয়ে সেই দুর্বলতাই আরও বাড়িয়ে দিল চিন।