রবিবার ১৮ জুন। সে দিন ছিল ‘ফাদার্স ডে’ বা পিতৃদিবস। বাবাকে খুশি করার জন্য নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডুবোযানে চড়ে অতলান্তিকের অতলে প্রবেশ করেছিলেন ১৯ বছরের সুলেমান দাউদ। টাইটানিক দর্শন করে আর ফেরা হল না তাঁর। বাবার সঙ্গেই সলিলসমাধি হল ১৯ বছরের পাক তরুণের।
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ চাক্ষুষ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ অভিযাত্রীর। টাইটানিকের কাছে পৌঁছতে গিয়ে অতলান্তিকের গভীরে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে ডুবোযান টাইটান। ওই ডুবোযানে যে পাঁচ জন অভিযাত্রী ছিলেন, তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তাঁদের দেহের কোনও হদিস মেলেনি।
ওই পাঁচ অভিযাত্রীর মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানের কোটিপতি শাহজাদা দাউদ এবং তাঁর পুত্র সুলেমান। তাঁদের দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে।
টাইটানিককে ঘিরে কৌতূহলের সীমা নেই। ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল মধ্যরাতে হিমশৈলে ধাক্কা মেরে উত্তর অতলান্তিকে ডুবে যায় সে সময়ের অন্যতম বিলাসবহুল যাত্রিবাহী জাহাজ টাইটানিক। মৃত্যু হয় ১৫০০-র বেশি মানুষের। এই জাহাজ নিয়ে হলিউডে তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত ছবি ‘টাইটানিক’।
এত বছর পরও টাইটানিককে ঘিরে জনমানসে কৌতূহলের অন্ত নেই। অতলান্তিকের গর্ভে টাইটানিকের সেই ভাঙাচোরা অংশ একটি বার চোখে দেখা দেখতে অনেকেই মুখিয়ে থাকেন। ঠিক যেমন ওই পাঁচ অভিযাত্রীও উৎসাহী ছিলেন।
অতলান্তিক মহাসাগরের প্রায় সাড়ে চার হাজার মিটার নীচে এখনও রয়েছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ। অতলান্তিকের গভীরে যেখানে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে, অভিযাত্রীদের সেই জায়গা ঘুরে দেখায় টাইটান।
ওশানগেট সংস্থার তৈরি ওই ডুবোযান গত রবিবার পাঁচ যাত্রীকে নিয়ে সমুদ্রের গভীরে নেমেছিল। যাত্রা শুরুর ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর থেকে আর খোঁজ নেই টাইটানের। তার পর থেকেই টাইটানের খোঁজ শুরু করা হয়।
বৃহস্পতিবার অতলান্তিকের গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ১৬০০ ফুট দূরে পাওয়া গিয়েছে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ।
আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, ২২ ফুটের ডুবোযানটির পাঁচটি টুকরো হয়ে গিয়েছে। সেগুলিরও খোঁজ মিলেছে। কিন্তু পাঁচ অভিযাত্রীর দেহের কোনও হদিস মেলেনি। তাঁদের দেহ উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ওই পাঁচ অভিযাত্রীরা হলেন ধনকুবের হামিশ হার্ডিং, ফরাসি পরিব্রাজক পল হেনরি নারজিওলেট, পাকিস্তানি ধনকুবের শাহজাদা দাউদ, তাঁর পুত্র সুলেমান এবং ওশানগেটের সিইও।
এই অভিযাত্রীদের মধ্যে সকলেই টাইটানিক দর্শনের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। তবে শুধুমাত্র পাক ধনকুবেরের পুত্র সুলেমান কিছুতেই এমন দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নিতে চাননি।
এনবিসি নিউজকে সুলেমানের পিসি অজেমেহ দাউদ জানিয়েছেন, টাইটানিক নিয়ে উৎসাহী ছিলেন তাঁর দাদা শাহজাদা। তবে এই অভিযান নিয়ে প্রথম থেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন তাঁর ভাইপো সুলেমান।
ওই সাক্ষাৎকারে অজমেহ বলেছেন, ‘‘এই ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান নিয়ে আতঙ্কে ছিল সুলেমান। শুধুমাত্র বাবার জন্যই ও রাজি হয়েছিল।’’ পিতৃদিবসে বাবাকে খুশি করতেই ডুবোযানে চড়ে টাইটানিক দেখতে অতলান্তিকের অতলে নেমেছিলেন সুলেমান।
ডুবোযানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার খবরে স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছে দাউদ পরিবার। দাদা এবং ভাইপো— দু’জনকেই হারিয়েছেন তিনি। তবে ভাইপোর এই পরিণতি কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি।
ডুবোযান টাইটান ৯ ফুট চওড়া। ডুবোযানে দাঁড়ানোর বা হাঁটু মুড়ে বসার মতো জায়গাও থাকে না সওয়ারিদের। একে অপরের গা ঘেঁষে বসতে হয় ডুবোযানের ধাতব মেঝেতে। পা ছড়ানোর মতো জায়গাও নেই সেখানে। নেই কোনও জানলা। শুধু একটি ‘পোর্টহোল’ রয়েছে। তা দিয়েই টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার সুযোগ থাকে অভিযাত্রীদের।
এত অসুবিধা সত্ত্বেও টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ চাক্ষুষ করার জন্য ডুবোযানে চড়েছিলেন ওই পাঁচ অভিযাত্রী। কিন্তু সেই দর্শন আর হল না। টাইটানিকের মতোই যেন টাইটানেরও সলিলসমাধি হল অতলান্তিকের গর্ভে। সমাপতন? হয়তো বা।