তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারির পর থেকেই উত্তপ্ত পাকিস্তান। দেশ জুড়ে নানা বিক্ষোভ কর্মসূচি চলেছে টানা দু’দিন।
ইমরান অবশ্য জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। কিন্তু তাঁর গ্রেফতার-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে এখনও টালমাটাল পাক সেনা এবং সরকার।
৩ গত ৯ মে ইমরানকে আদালতের সামনে থেকেই গ্রেফতার করা হয়। আল কাদির ট্রাস্ট মামলায় পাক রেঞ্জার্সের হাতে গ্রেফতার হন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
ইমরানের গ্রেফতারির পর গোটা পাকিস্তান জুড়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সেনার সদর দফতরে হামলা থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তে নেতার মুক্তির দাবিতে তাণ্ডব, ভাঙচুর চালান পিটিআই কর্মী, সমর্থকেরা।
সেনার সম্পত্তি ধ্বংস করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনে ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেওয়া— একাধিক হিংসার ছবি প্রকাশ্যে আসে পাকিস্তান থেকে। পেশোয়ারে রেডিয়ো পাকিস্তান ভবনেও ইমরান সমর্থকেরা আগুন লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ।
পাক সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনির এই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আগেই। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও রকম ‘গুন্ডামি’ তিনি বরদাস্ত করবেন না।
মুনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সেনার প্রাক্তন কর্মীদের স্ত্রী এবং সন্তানদেরও গোপনে হুমকি দিয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী এবং সরকারি অফিসারদের পরিবারকে ভয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত অনেক প্রাক্তন কর্মী ইমরানের সমর্থক। শুধু তাঁরাই নন, তাঁদের পরিবারের সদস্যেরাও ইমরানের মুক্তির দাবি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।
পাক সেনার বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলেছেন, সেই সমস্ত সমালোচককেই সেনাপ্রধান হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। রেহাই পাননি সমালোচকদের স্ত্রী, পুত্রেরাও।
শিয়ালকোটে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সেনাবাহিনীর সমালোচকদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, হুমকি দিয়েছেন সেনাপ্রধান মুনিরই।
রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত জ়ালমে খালিলজ়াদ শুক্রবার মুনিরের হুমকির কথা প্রকাশ্যে এনেছেন। টুইট করে তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
জ়ালমে আরও জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মুনির যা যা বলেছেন, বিশ্বস্ত সূত্রে সে সব কথা জানতে পেরেছেন তিনি। তাতে তাঁর মনে হয়েছে, পাকিস্তানে পরিস্থিতি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সেনাপ্রধানের সন্দেহ, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ তথ্য ভিতর থেকে কেউ বা কারা ফাঁস করে দিচ্ছেন। এর সঙ্গে জড়িত নির্দিষ্ট কিছু সেনাকর্মী এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা। গোয়েন্দা বিভাগকে এ বিষয়ে তৎপর হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
ইমরানের গ্রেফতারির পর দেশ জুড়ে যে ভাবে হামলা, বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁর সমর্থকেরা, তাতে ৯ মে দিনটিকে পাক সেনা ‘কালাদিবস’ বলে ঘোষণা করেছে।
১১ মে পর্যন্ত সেনার হাতে বন্দি ছিলেন ইমরান। পরে সুপ্রিম কোর্ট এই গ্রেফতারিকে ‘বেআইনি’ বলে মন্তব্য করে ইমরানকে জামিন দেয়। আপাতত জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্বস্তিতেই থাকবেন ইমারন।
যে দু’দিন ইমরান হেফাজতে ছিলেন, পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভে পাকিস্তান উত্তাল হয়েছিল। পুলিশ, সেনা ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে পিটিআইয়ের সংঘর্ষে অনেকের প্রাণ গিয়েছে। কয়েকশো মানুষ আহত হয়েছেন।
যাঁরা সেনার সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনা আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন সেনাপ্রধান মুনির। তাঁর সেই ঘোষণার পরেই মুখ খুলেছেন আমেরিকান রাষ্ট্রদূত।