‘স্বপ্নের সেতু’ বাংলাদেশের জন্য নাকি বড্ড ‘পয়া’! গত ২০ দিনের টোল আদায়ের অঙ্কটা দেখে এমনটাই বলছেন অনেকে। পথচলা শুরুর প্রথম ২০ দিনে টোল আদায়ের পরিমাণ জানলে চমকে উঠবেন।
তবে এই সেতুতে দুর্ঘটনা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসনের কপালে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিলিন্ডারবাহী ট্রাক উল্টে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও তিন জন। যান চলাচল শুরুর প্রথম দিনও দুর্ঘটনায় দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছিল।
কিন্তু টোল আদায়ে সন্তুষ্ট সে দেশের সরকার। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২৬ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রথম ২০ দিনে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৫২ কোটি ৫৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬৫০ টাকা।
২৫ জুন উদ্বোধন হওয়ার পর পরের দিন অর্থাৎ ২৬ জুন থেকে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। যে পরিমাণে টোল আদায় হচ্ছে, তাতে হাসিনা সরকারের মুখের হাসি ক্রমশ চওড়া হচ্ছে বলেই মনে করছেন সে দেশের নাগরিকরা।
প্রথম দিনই ‘স্বপ্নের সেতু’তে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮৫০ টাকা।
প্রথম দিন মাওয়া প্রান্ত থেকে ৩১ হাজার ১৯৭টি গাড়ি ও জাজিরা প্রান্ত থেকে ৩০ হাজার ৬৩৯টি গাড়ি যাতায়াত করেছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর থেকে রোজই কোটি টাকার উপরে টোল আদায় হচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত গত ৮ জুলাই সর্বাধিক টোল আদায় হয়েছে পদ্মা সেতুতে। ওই দিন টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা।
১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে কম টোল আদায় হয়েছে ঈদের দিন। ১০ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লক্ষ ১০ হাজার ৮৫০ টাকা।
জানা গিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ে আধুনিক সিস্টেম ইনস্টল করা হবে।
এই মুহূর্তে ঘণ্টায় ১২০০ গাড়ির টোল আদায় করা হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতি ইনস্টল করার পর এই পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর নকশা তাক লাগিয়েছে বিশ্বকে। এই সেতুটি গড়তে নিজেদের শ্রম উজাড় করে দিয়েছেন দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ২৪ লাইভ নিউজপেপারের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি সিমেন্ট।
পদ্মা সেতুর পিলারে ‘মাইক্রো ফাইন’ নামে যে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, তার বস্তা প্রতি খরচ ১৫ হাজার টাকা। অস্ট্রেলিয়া থেকে এই সিমেন্ট আনা হয়েছে বলে খবর।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সেতু তৈরি করতে প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (জলের অংশ) ৬.১৫ কিমি। স্থলভাগের অংশ ধরে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিমির বেশি।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১৩৮ জন ব্যক্তি।
পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কমপক্ষে ২০টি দেশের নাগরিক।
সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছিল চিনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং। পদ্মা নদীর দুই পাড়ের সংযোগ (সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া) তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশি সংস্থা আব্দুল মোনেম লিমিটেডকে। মালয়েশিয়ার একটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা কাজ করেছে।
পদ্মা সেতুর পুরো নির্মাণকাজ দেখভালের দায়িত্ব ছিল কোরিয়ার সংস্থা এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনের উপর। সেতুর নির্মাণকাজের তদারকি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের রবার্ট জন এভস।
পদ্মা সেতুর নীচ দিয়ে তৈরি রেলপথ। তার কাজ শীঘ্রই শেষ হওয়ার কথা। পাথরবিহীন নতুন রেলপথ প্রায় তৈরি। কিছু দিনের মধ্যেই ছুটবে ট্রেন।