আমেরিকার জোড়া টাওয়ার ধ্বংস করেই থামতে চাননি আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন বরং তাঁর পরিকল্পনা ছিল আরও বড় হামলার। যা অতি সাবধানে ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত করছিলেন কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী নেতা। এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি এই তথ্য ফাঁস করেছেন স্বয়ং ওসামার সন্তান ওমর বিন লাদেন।
ওমর যা বলেছেন, তাতে অনুমান, লাদেনের মৃত্যুর বছর দশেক আগেই সেই ‘বড়’ হামলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। তখনও ৯/১১ আসেনি। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের জোড়া টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনা ঘটেনি।
ওমরের কথা সত্যি হলে, নাশকতায় সেই ৯/১১-র হামলাকে অনেক পিছনে ফেলে দিতে পারত ওসামার পরিকল্পনা। হামলা হত নীরবে। তবে তাতে মৃত্যু হত লক্ষাধিক মানুষের। কারণ ওমরের দাবি, রাসায়নিক হামলার পরিকল্পনা করছিলেন আল কায়দা নেতা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওমর সম্প্রতি জানিয়েছেন, তাঁর বাবার সেই হামলার পরিকল্পনার কথা তিনি জানতে পেরেছিলেন তাঁর প্রিয় পোষ্যের দৌলতে।
তখন ওমর তাঁর বাবার সঙ্গে এক ছাদের নীচেই থাকতেন। বস্তুত ওসামা ধরেই নিয়েছিলেন, তাঁর সন্ত্রাস সাম্রাজ্যের রাশ তিনি দিয়ে যাবেন পুত্র ওমরের হাতেই।
ওমর ছিলেন ওসামার চতুর্থ পুত্র। সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই একে ৪৭ চালানো শিখতে হয়েছিল তাঁকে। নিয়মিত অভ্যাসও করতে হত বন্দুক চালনা। ওসামার নির্দেশে তাঁর ঘনিষ্ঠ আল কায়দা সদস্যরা দিত প্রশিক্ষণ। তবে এই ওসামা-ঘনিষ্ঠদের প্রথম থেকেই অপছন্দ ছিল বলে দাবি করেছেন ওমর।
ওই সাক্ষাৎকারে ওমর জানিয়েছেন, মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তাঁকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন ওসামা। সেই ভার বোঝার মতো হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ওমরের কাঁধে। বাবার ওই সিদ্ধান্তের জন্য ছোটবেলাটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল ওমরের।
ওমর জানিয়েছেন, নানা রকম অস্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন ওসামা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠেরা। আর সেই সব পরীক্ষা নাকি চালানো হত ওমরের প্রিয় পোষ্যদের উপর।
ওমর তাঁর বাবার রাসায়নিক অস্ত্রের কথাও জানতে পেরেছিলেন সে ভাবেই। সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, লাদেনের ঘনিষ্ঠেরা ওই রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছিলেন ওমরের পোষা কুকুরের উপরে। কুকুরটি কিছু ক্ষণের মধ্যেই যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মারা যায়।
চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখেছিলেন ওমর। তাঁর পোষা কুকুরটির নাম ছিল ববি। তাঁকে এ ভাবে মেরে ফেলতে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি।
যদিও তার আগে বাবার সঙ্গে থাকতে থাকতে অনেক নৃশংসতাই দেখেছিলেন ওমর। তাঁর গোটা ছোটবেলাটাই কেটেছিল নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে। বাবার জন্য কোনও এক জায়গায় থিতু হওয়া কপালে ছিল না তাঁর।
কিন্তু ওই ঘটনার পর ওমর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, আর নয়। সাক্ষাৎকারে ওমর বলেছেন, ‘‘আমি সে দিনই বাবার কাছে যাই। ওঁকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিই, এই জীবন আমার জন্য নয়। আমি ওঁর উত্তরাধিকারী হতে পারব না।’’
তবে ওমর এ-ও বলেছেন, ‘‘আমার বাবা কখনওই আমাকে আল কায়দায় যোগ দিতে বলেননি। তবে উনি বলেছিলেন, আমিই ওঁর সেই ছেলে, যাঁকে ওর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।’’ তাই ওমর যখন তাঁকে জানিয়েছিলেন, তিনি এই জীবনে থাকতে চান না তখন নাকি দৃশ্যতই হতাশ হয়েছিলেন লাদেন।
ওমর জানিয়েছেন, ‘‘সে দিনই ওঁর কাছ থেকে বিদায় নিই এবং বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। তার পর থেকে ওসামার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আর কখনও কথা হয়নি বাবার সঙ্গে।’’
এর পর আমেরিকায় হামলা, লাদেন যে এই ঘটনার নেপথ্যে তা টিভিতেই জেনেছিলেন ওমর। কিন্তু আর যোগাযাগ করেননি বাবার সঙ্গে। তবে ভয় ছিল আর কোনও হামলা না চালান তিনি।
পরে ২০১১ সালে ওসামার মৃত্যুর খবর পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন ওমর। ভেবেছিলেন, এ বার হয়তো শান্তি এল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শান্তি আসেনি।
বাবার নামের সঙ্গে তাঁর নাম জুড়ে গিয়েছিল। অনেক কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে। যার জেরে মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছিলেন ওমর। এখনও তার জন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় তাঁকে।
ছোটবেলায় একে ৪৭ চালানো হাতে পরে তুলি ধরেছিলেন ওমর। এখন তিনি নামী শিল্পী। আন্তর্জাতিক শিল্পী তাঁর হাতে আঁকা এক একটি ছবি ৮৫০০ পাউন্ডেও বিকোয়।
তাঁর ছবিতে ধরা পড়ে আফগানিস্তানের নানা প্রাকৃতিক দৃশ্য। যা ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে থাকাকালীন দেখার সুযোগ হয়েছিল তাঁর।
ওমর সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘আমার প্রিয় আঁকার বিষয় হল পাহাড়। পাহাড় দেখলেই কেন জানি না আমি নিরাপদ বোধ করি। যেন মনে হয় আমাকে কেউ ছুঁতে পারবে না। তাই পাহাড় আঁকতেও ভালবাসি।’’
ওমর এখন ৪১। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তাঁর গোছানো পরিবার। তবে তিনি জানিয়েছেন, জীবনে যতই এগোন, তাঁর ছোটবেলার সেই আতঙ্কের দিনগুলো আজও ভুলতে পারেন না তিনি।