প্রশাসন, ধর্ম, অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ একটি ছোট্ট শহর। একের পর এক সাম্রাজ্যের প্রভাব পড়েছিল এই শহরে। তুর্কমেনিস্তানের মেরি শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মার্ভ সিটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিল মুসলিম সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। চার হাজার বছর আগে এই শহর বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহরগুলির তালিকার শীর্ষে নাম লিখিয়ে ফেলে।
রোমান সাহিত্যিক প্লিনির মতে, মার্ভ শহরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। প্রতিষ্ঠার পর শহরের নাম পরিবর্তন করে তিনি রেখেছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া।
৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর শহরের শাসক বদলে যায়। বাকট্রীয়, পার্থ এবং কুষাণ বংশের শাসকেরাও মার্ভ সিটিতে তাঁদের আধিপত্য বিস্তার করে।
দুর্গের পাশাপাশি মার্ভ সিটিতে গড়ে ওঠে বৌদ্ধ মঠ এবং মন্দির। দ্বাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতকের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহরে পরিণত হয় মার্ভ সিটি। সেই সময় শহরের মোট জনসংখ্যা ছিল পাঁচ লক্ষ।
পারস্য, তুরস্ক এবং আরবের অধিবাসীরা মার্ভ সিটিকেই তাঁদের কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছিলেন। বিশালাকার দুর্গে ঘিরে থাকা মার্ভ সিটিতে ছিল একাধিক গ্রন্থাগার।
দেশ-বিদেশ থেকে বহু জ্ঞানপিপাসু মার্ভ সিটিতে যেতেন। জীবনযাপনের সুবিধার্থে সেখানকার জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
এই সময়ে মার্ভ সিটির উপর নজর পড়ে মোঙ্গলদের। মোঙ্গল শাসক চেঙ্গিস খানের চতুর্থ পুত্র তোলুই খান পৌঁছন মার্ভ সিটিতে।
১২২১ সালে মার্ভ সিটি ধ্বংস করে ফেলেন তোলুই। দুর্গ, মঠ থেকে শুরু করে সমস্ত গ্রন্থাগারও ধ্বংস করেন তিনি।
ইতিহাসবিদদের দাবি, মার্ভ সিটি আক্রমণের সময় সাত থেকে দশ লক্ষ মানুষকে প্রাণে মেরে ফেলেছিলেন তোলুই এবং তাঁর সেনারা। সমগ্র মার্ভ সিটি তখন রক্তাক্ত হয়ে পড়েছিল।
তবে তোলুই রেহাই দিয়েছিলেন কয়েক জন শিল্পীকে। ইতিহাসবিদদের দাবি, মার্ভ সিটির প্রায় ৪০০ জন শিল্পীকে বন্দি বানিয়েছিলেন তোলুই।
এমনকি তোলুই এমন নির্দেশও দিয়েছিলেন যে, ওই ৪০০ জন বন্দি শিল্পী ছাড়া মার্ভ সিটির কোনও অধিবাসী বেঁচে থাকলে তাঁকে যেন সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলা হয়।
প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক সময় কেন্দ্রে থাকা মার্ভ সিটি মোঙ্গলদের আক্রমণের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হাজার হাজার বছর পর তুরস্ক সরকারের নজর পড়ে ধ্বংসস্তূপের উপর।
১৯৯৯ সালে প্রাচীন মার্ভ সিটিকে ইউনেসকো-র তরফে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তকমা দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে পরিণত হয়েছে মার্ভ সিটি।
তুর্কমেনিস্তানের মেরি শহর থেকে মার্ভ সিটি পৌঁছতে এক ঘণ্টা সময় লাগলেও সেখানে জনসাধারণের জন্য বিশেষ পরিবহণ ব্যবস্থা নেই। সাধারণত ব্যক্তিগত গাড়ি করেই সেখানে যেতে পারেন পর্যটকেরা।